ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

‘ইতিহাসের সেরা ফুটবলার মেসি’

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৮ মার্চ ২০১৭

‘ইতিহাসের সেরা ফুটবলার মেসি’

লিওনেল মেসির গুণমুগ্ধ নন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বর্তমান বিশ্বের সেরা ফুটবলার বলা হয় তাঁকে। তাক লাগানো সাফল্যের কারণেই এ স্বীকৃতি। এ কারণে মেসির বার্সিলোনা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ সুযোগ পেলেই আর্জেন্টাইন অধিনায়কের প্রশংসা করেন। আরও একবার এ নমুনা মিলেছে। উরুগুইয়ান সুপারস্টার জানিয়েছেন, তার দৃষ্টিতে সর্বকালের সেরা ফুটবলার মেসিই। ক্লাব ফুটবলে মেসি সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন। তবে আর্জেন্টিনার হয়ে আরাধ্যের বিশ্বকাপটাই তো জেতা হয়নি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠলেও জার্মানির কাছে হারতে হয় দিয়াগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরিদের। এমনকি ক্যারিয়ারে কোপা আমেরিকা ফুটবলের শিরোপাও যোগ করতে পারেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। কিন্তু সুয়ারেজের মতে, বার্সা ও আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির সাফল্য তাকে মনে রাখবে সবাই। ২০১৪ সালে বার্সায় যোগ দেয়া সুয়ারেজ এক সাক্ষাতকারে বলেন, ফুটবল ইতিহাসে মেসিই সেরা। মানুষ হিসেবেও মেসি চমৎকার। এ প্রসঙ্গে সুয়ারেজ বলেন, তার ব্যক্তিত্ব অসাধারণ। আমি যখন বার্সায় আসি, তখন সে দারুণ উষ্ণতায় আমাকে গ্রহণ করেছিল। লিভারপুল থেকে বার্সায় আসার সময় রিয়ালের সঙ্গেও নাকি কথা হয়েছিল সুয়ারেজের। এ প্রসঙ্গে উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড বলেন, রিয়ালের সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু যখন বার্সিলোনা সামনে আসল, তখন আমি আর কোন দ্বিধায় পড়িনি। চলমান লা লিগায় মেসির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোল করছেন সুয়ারেজ। মেসির গোল ২১টি, সুয়ারেজের ২০টি। লা লিগার পয়েন্ট তালিকায়ও বার্সিলোনা শীর্ষে। ২৫ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট কাতালান শিবিরের। সেখানে এক ম্যাচ কম খেলা রিয়াল মাদ্রিদ ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে। শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও মানুষ হিসেবে মহান মেসি। যে প্রমাণ হরহামেশাই তিনি রাখেন। আর্জেন্টাইন তারকা আরেকবার মানবিকতার পরিচয় দিলেন। নিজের চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘সি’র ৩ হাজার ডোজ মেডিসিন বিলিয়েছেন মেসি। এর মধ্যে ১ হাজার ডোজ মেডিসিন দিয়েছেন নিজের দেশ আর্জেন্টিনায়। আর বাকিগুলো তিনি বিলিয়েছেন অন্যান্য দেশে, যেখানে হেপাটাইটিস ‘সি’র প্রাদুর্ভাব আছে। হেপাটাইটিস ‘সি’র বিরুদ্ধে লড়াই চালানো মেসি জানান, চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘সি’ থেকে বাঁচা সম্ভব। আমার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পুরো বিশ্বে এই তথ্য জানিয়ে দিতে চাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। সকল রোগীর পাশে থাকতে চাই আমি। মেসি আরও বলেন, গত দুই বছরে আমি অনেক কিছু অর্জন করেছি। তার মানে এই নয় যে আমি সবকিছুই পেয়েছি। কারণ প্রথমত আপনার নিজেকে সুন্দর করে বাঁচতে হবে। আপনার অর্জন সব নষ্ট হয়ে যাবে, যদি আপনি অন্যের জীবনকে সুন্দর করে দিতে না পারেন। এদিকে অনেক দিন ধরেই মেসির বার্সা ছাড়া নিয়ে গুঞ্জন চলছে। চুক্তি নবায়ন না হওয়াতে গুঞ্জনের ভিত্তিও আছে। এ কারণে চমক দেখানে চাইনিজ ক্লাবগুলো টাকার বস্তা নিয়ে মুখিয়ে আছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে দলে ভেড়াতে। শুধু তাই নয়, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও যেতে পারেন এমন গুঞ্জন অনেক দিনের। মেসির সাবেক কোচ পেপ গার্ডিওলা এখন ম্যানচেস্টার সিটির বস। গার্ডিওলা নাকি অনেক দিন ধরেই চাচ্ছেন, মেসি ইতিহাদে আসুক। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, ন্যু-ক্যাম্পে থাকার জন্য বার্সিলোনা ম্যানেজম্যান্টকে তিনটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের ফিফা সেরা ফুটবলার। স্পেনের ক্রীড়া সাংবাদিক এডুয়ার্ডো ইন্ডা জানিয়েছেন, মেসি চীনে উড়ে যাওয়ার জন্য এক প্রকার মনস্থির করে ফেলেছেন। ২০১৮ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষে ফ্রি-ট্রান্সফারে বার্ষিক ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে দূর প্রাচ্যে পাড়ি দিতে পারেন ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকর। এমন অবস্থায় মেসিকে দলে রাখতে হরে বার্সাকে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমটিÑ কোচ লুইস এনরিকেকে বিদায় করে জর্জ সাম্পাওলিকে হিসেবে দিতে হবে। দ্বিতীয়Ñ আন্দ্রে গোমেজ ও পাকো আলকাসেরসহ নতুন কয়েকজন খেলোয়াড়কে বিক্রি করে দক্ষ কিছু খেলোয়াড় দলে ভেড়ানো। তিন নম্বরÑ নিজের বার্ষিক বেতন বাড়ানো। এসব শর্তের খবর এখন বাতাসে ভাসছে। তবে কতটুকু সত্য সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার না। এমন অবস্থায় মেসিকে ঠিকই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বার্সা বস এনরিকে। তিনি নির্দ্ধিধায় স্বীকার করে নিয়েছেন, বার্সিলোনা অনেকাংশেই মেসির ওপর নির্ভর করে। যদি বলা হয় দল মেসির ওপর নির্ভর করে না তাহলে সেটাই বরং হাস্যকর শোনাবে। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৭ গোল করে ফেলেছেন মেসি। এর মধ্যে লা লিগায় সর্বোচ্চ ২২ গোল। দলে এমন একজন থাকলে তার ওপর কেন নির্ভর করা যাবে না সেটাই বুঝতে পারছেন না এনরিকে। বার্সা বস বলেন, বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের ওপর আমরা নির্ভর করি নাÑ এটা চিন্তা করাটাই হাস্যকর হবে। আশা করি আমরা আরও অনেক বছর তার (মেসি) ওপর নির্ভর করতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমি এখনও তাকে একজন ফরোয়ার্ডের চেয়ে বেশি কিছু বিবেচনা করি। আমাদের সাহায্য করতে কখনও কখনও সে বেশি সময় মাঝমাঠে কাটায়। তবে আমার মনে হয় না এটা কোন ব্যাপার যে, সে মাঝমাঠে নাকি সামনে বেশি সময় খেলল। মূল বিষয় হলো তার ফর্ম। লা লিগায় বার্সিলোনার প্রতিপক্ষ বলতে কেবল রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। দু’দলের মধ্যে অ্যাটলেটিকোকেই বেশি পছন্দ মেসির। এই দলটির বিরুদ্ধে ২২ সাক্ষাতে গুনে গুনে ২২ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন তারকা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল ও সেভিয়ার বিরুদ্ধে ২১টি করে গোল করেছেন। ২০০৩ সালে পোর্তোর বিরুদ্ধে অভিষেক হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বার্সার জার্সি গায়ে ৫৬৬ ম্যাচ খেলেছেন মেসি। কিছুদিন আগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ২-১ গোলে হারানোর ম্যাচে ক্লাবের জার্সি গায়ে ৪০০তম ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছেন মেসি। এর মধ্যে লা লিগায় ৩৬৯ ম্যাচ খেলে মেসি জিতেছেন ২৭৭ ম্যাচে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১২ ম্যাচ খেলে জিতেছেন ৬৬ ম্যাচে। ৬১টি কোপা ডেল রের ম্যাচ খেলে ৪২টিতে জিতেছেন। ৪০০ জয়ের পাশাপাশি মেসি ১০২টি ড্রয়ের বিপরীতে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছেন ৬৪ ম্যাচে।
×