ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর পরিচর্যা করতে পারছে না কর্মজীবী নারী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৮ মার্চ ২০১৭

শিশুর পরিচর্যা করতে পারছে না কর্মজীবী নারী

সমুদ্র হক ॥ দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে। এই হার ধরে রাখার ঘাটতিও রয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইনগতভাবেই নারীর মাতৃকালীন ছয় মাস ছুটির নিয়ম চালু আছে। তবে মা কাজে ফেরার পর সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে শিশুর পরিচর্যা নিয়ে। কারণ ডে কেয়ার সেন্টার বা শিশুর দিবাযতœ কেন্দ্রের দারুণ অভাব। অধিকাংশ সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ার সেন্টার নেই। ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষের আয় বৈষম্য কমিয়ে আনার ধারাবাহিক অগ্রগতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। আর বিশ্বে নারী-পুরুষের আয় সমতায় বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪। যেখানে ভারতের অবস্থান ১০৮। অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রেখে আরও শীর্ষে যেতে বাংলাদেশে শিশু দিবাযতœ কেন্দ্রের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। গর্ভবতী মা সন্তান ভূমিষ্ঠের সম্ভাব্য তারিখের দুই মাস আগে তার মাতৃকালীন ছুটি শুরু করতে পারেন। কেউ এক মাস আগেও এই ছুটি শুরু করেন। সন্তান ভূমিষ্ঠের পর ছুটির ৪ বা ৫ মাস নবজাতকের পরিচর্যার জন্য ব্যয় করতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী শিশু জন্মের প্রথম ৬ মাস শুধুই বুকের দুধ দিতে হয়। এরপর দুই বছর অন্যান্য খাবারের সঙ্গে বুকের দুধ (ব্রেস্ট ফিড) দিতে হবে। ছুটি শেষে নারী কর্মস্থলে ফেরার পর সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন ব্রেস্ট ফিড নিয়ে। নবজাতককে ঘরে রেখে আসতে হয়। সময় মতো বুকের দুধ পায় না। দুই বছর এই সমস্যায় থাকতে হয় নারীকে। ওই সময়টাতে শিশু বাড়তে থাকে। একশ’ বিলিয়ন নিওরন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর মেধার বিকাশ ৮০ শতাংশ ঘটে তিন বছরের মধ্যে। জন্মগ্রহণের পরবর্তী দুই বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে স্বজন না থাকলে দিনের বড় একটা সময় শিশুকে কাটাতে হয় কাজের বুয়া বা গৃহকর্মীর কাছে। বর্তমানে বিশ্বস্ত গৃহকর্মী পাওয়াও সহজ নয়। ঢাকাসহ প্রতিটি বড় শহরের বাসা বাড়িতে অনেকটা সময়ের জন্য কাজের বুয়া বা গৃহকর্মী পাওয়া কঠিন। কাজের বুয়া পাওয়া যে কত কঠিন তা ভুক্তভোগীরা জানে। ঘরের একেকটি কাজের জন্য তাদের আলাদা রেট আছে। অনেকটা সময়ের জন্য গৃহকর্মীর কাছে সন্তান রেখে আসা কতটা নিরাপদ এ নিয়েও ভাবতে হয় মাকে। একটা সময় বনেদী পরিবারে সন্তান দেখাশোনার জন্য গবর্নেন্স (গৃহপরিচারিকা) রাখা হতো। বর্তমানে তা খুবই ব্যয়বহুল। অনেকে পাশের বাড়ির পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্কের মাঝে শিশুকে রেখে আসেন। তারপরও সন্তানের জন্য মায়ের মন পড়ে থাকে শিশুর কাছে। শিশুর কোন খবর মোবাইল ফোনে পাওয়ার সঙ্গে অস্থির হয়ে কাজের গতিতেও বিঘœ ঘটে। এই অবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠছে বর্তমান প্রজন্ম। একটা সময় একান্নবর্তী পরিবারের শিশুরা আপনজনদের মধ্যে বেড়ে উঠত। একান্নবর্তী পরিবার ছেড়ে গিয়েছে অনেক আগে। দিনে দিনে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বা একক পরিবার বাড়ছে। শিশুরাও পরিপূর্ণ ¯েœহ মমত্ব বিমুখ হয়ে একাকীত্বের মানসিক ধারায় (ইন্ট্রোভার্ট) নিজেকে তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছে। মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শিশুর ৪৩টি দিবাযতœ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া করে আরও ২০টি কেন্দ্র চালুর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে কর্মরত নারীর সংখ্যা বেশি। ২০১৫ সালে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক মিলে ঢাকার মতিঝিলে একটি এবং পরবর্তী বছর কয়েকটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক যৌথ উদ্যোগে মতিঝিলে আরেকটি শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র গড়ে তোলে। সহজেই অনুমান করা যায় এই সংখ্যা সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। এক সূত্রের খবর শুধু শিশু দিবাযতœ কেন্দ্রের অভাবে কর্মজীবী নারীদের কেউ চাকরি ছেড়েও দিচ্ছে। শ্রম আইনে বলা আছে যে প্রতিষ্ঠানে ৪০ বা ৪০’র বেশি নারী কর্মরত আছে সেই সব প্রতিষ্ঠানে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সুযোগ সুবিধাসহ সুপরিসরের এক বা একাধিক উপযুক্ত কক্ষ থাকতে হবে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ নারী কর্মরত আছে পোশাক শিল্পে। সেখানে কোন শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এক সূত্র জানায় ব্যক্তি মালিকানায় ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদফতর আইনের খসড়া তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, যেহেতু শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র বিষয়টি সেনসেটিভ তাই নজরদারির মধ্যে এ ধরনের কেন্দ্রের লাইসেন্স দিতে পারে মন্ত্রণালয়। লাইসেন্স পাওয়ার পর বেসরকারীভাবে এ ধরনের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ গড়ে তুললে অথবা কেন্দ্রে কোন ধরনের অনিয়ম হলে আইনী ব্যবস্থাও নেয়া যাবে। যেখানে অর্থদ-সহ কারাদ-ের বিধান রাখা আছে।
×