ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অলিগলি পাড়া মহল্লায় একই আওয়াজ-এবারের সংগ্রাম...

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ মার্চ ২০১৭

অলিগলি পাড়া মহল্লায় একই আওয়াজ-এবারের সংগ্রাম...

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ৪৬ বছরেও এতটুকু আবেদন কমেনি মাত্র ২২ মিনিটের কালজয়ী ভাষণের। কাকডাকা ভোর থেকে দেশের প্রতিটি অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় বেজেছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে দেয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী বজ্রনির্ঘোষ ভাষণটি। ‘ভাইয়েরা আমার..,’ এ দুটি শব্দ দিয়ে শুরু করা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাসংবলিত ঐতিহাসিক অমিততেজী ও শিহরণ জাগানিয়া এ ভাষণটি শুনে দেশের মানুষ নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন দেশপ্রেমে, শপথ নিয়েছেন স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পরাভূত করার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মৃতিচারণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, কনসার্ট, শোভাযাত্রা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের ৪৬তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় গৌরবের অনন্য দিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সর্বস্তরের জনতার ঢল নামে। বঙ্গবন্ধুর সেই জগৎখ্যাত ভাষণকে স্মরণ করে ধানম-িতে অবস্থিত তাঁর প্রতিকৃতি ফুলে ফুলে ভরে যায়। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এবার ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে জাতীয়করণের দাবি উঠেছে সর্বত্র। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে প্রথম প্রহর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে মাইকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর সেই অবিনাশী ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সকাল সাড়ে ৬টায় ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮টায় দেশের সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলাসমূহের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ একযোগে প্রচার এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল ৭টায় ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হাজারো নারী-পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে অভিন্ন সেøাগান- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জামায়াত শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’, ‘মুজিবের বাংলায় খুনীদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি। স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা আর শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বাঙালী জাতি মূর্ত করে তোলে ইতিহাসের সেই অমর দিনটিকে। সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয় বলেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করে না। এটা চেতনা, মূল্যবোধ, অনুভূতি, আদর্শের একটা ব্যাপার, যা বিএনপির নেই। বিএনপি ইতিহাস স্বীকার করে না। ক্ষমতায় গেলে তারা ইতিহাস জবরদখল করে। নিজেদের মতো করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায় তারা। তিনি বলেন, এই ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নিরস্ত্র বাঙালীকে সশস্ত্র পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এটিই ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। অথচ বিএনপি এটা উপলব্ধি করে না। আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে, সকল প্রকার অসুন্দর ও অসাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করে স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, হকার্স লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, যুব শ্রমিক লীগ, তাঁতীলীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মোটরচালক লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, জাতীয় বিদ্যুত শ্রমিক লীগ, বাকশাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক সমিতি, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সচেতন শিক্ষক সমাজ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, ঢাকা প্রবাসী সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, ঢাকাস্থ টুঙ্গিপাড়া সমিতি, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যজোট, রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্মৃতি পরিষদ, ফাদার অব ন্যাশনস অর্গানাইজেশন, ফোর্স অব বঙ্গবন্ধু, স্বদেশ ফোরাম, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, নাগরিক কমিটি, আইন সমিতি, শিশু-কিশোর যুব সাংস্কৃতিক জোট, নির্মাণ শ্রমিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা উত্তরসূরি ফোরাম, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, যুব সাংস্কৃতিক জোটসহ অসংখ্য দল ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ যৌথভাবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমত উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত বক্তব্য রাখেন। এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে কাজী আরেফ ফাউন্ডেশন। এতে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মাসুদ আহমদ।
×