ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল জলিলের স্মরণসভা

আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না ॥ ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৭ মার্চ ২০১৭

আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না ॥ ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৬ মার্চ ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। বিএনপি যতই নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করুক, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেই। কারণ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপির কোন অস্তিত্ব থাকবে না। জনপ্রিয়তা হারিয়ে যখন ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখন কেবলমাত্র নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য বরাবর টালবাহানা করেই থাকে। পানি ঘোলা করে খাওয়া বিএনপির স্বভাব সুলভ আচরণ। সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরন সভায় তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় নওজোয়ান মাঠে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপত্বি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক এমপি। স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় সংসদের হুইপ মোঃ শহিদুজ্জামান সরকার বাবলু এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, মোঃ ইসরাফিল আলম এমপি, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কিউ এম ওয়াহেদুল ইসলাম খান বাদশাহ, নির্মল কৃষ্ণ সাহা, কাজী রেজাউল ইসলাম, মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহনাজ বেগম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুল হক কমল, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত দুলাল, নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এনামুল হক, নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষান, জেলা যুবলীগের আহবায়ক এ্যাডভোকেট খোদাদাদ খান পিটু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট ওমর ফারুখ সুমন, যুব মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদক ফেন্সী চৌধুরী, জাভেদ জাহাঙ্গীর সোহেল, জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক বিমান কুমার রায় প্রমুখ । নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর সার্চ কমিটির দাখিলকৃত তালিকা থেকে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারপরও বিএনপির বিষোদগার নির্বাচন কমিশন মানি না মানব না। এক্ষেত্রে তিনি বিএনপিকে ‘বাংলাদেশ নালিশ পার্টি’ বলে উল্লেখ করেন। সেতু মন্ত্রী প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের স্মৃতিচারন করে বলেন, আব্দুল জলিল ছিলেন অত্যন্ত সাংগঠনিক, মানবদরদী এবং বিনয়ী নেতা। তাঁকে নওগাঁর মানুষ যে কত ভালবাসেন এই স্মরণসভায় হাজার হাজার নারী পুরুষের ঢল দেখে তাই প্রমাণ করে। তা নাহলে এই প্রখর রোদের মধ্যে দুঃসহ গরম সহ্য করে এত মানুষ মাঠে বসে থাকতে পারত না। মৃত্যুর পরও মানুষ তাঁকে হৃদয়ের মাঝখানে রেখেছেন। আব্দুল জলিলের আদর্শ অনুসরন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, অন্যের জায়গা-জমি দখল করে, মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে মানুষের ভালবাসা পাওয়া যায় না। তৃণমুল কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ইচ্ছামত পকেট কমিটি গঠন করে দিনের পর দিন সেই কমিটি দিয়ে দল চালাতে দেয়া হবেনা। দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন কিছু মৌসুমী পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে আসে। বসন্তের এসব কোকিলদের চাপে কর্মীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ক্ষমতা চলে গেলে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এসব মৌসুমী পাখির খোঁজ পাওয়া যায় না। নেতাদের এরকম সিন্ডিকেট করতে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। সবকিছুই হবে তৃনমুলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে। ৩ বছরের বেশী সকল কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন মুখের নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থে কেউ পকেট কমিটি গঠন করে ট্রাফিক জ্যাম করবেন না। নতুন নেতৃত্ব এনে দলকে গতিশীল রাখতে হবে। তিনি দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিগত ৮ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে বিশ্বে বাংলাদেশ অনেকদুর এগিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের ১০ জন নেতার মধ্যে নিজেকে একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভোটের কোন ঘাটতি হবে না। যদি কোন এলাকায় ভোটের ঘাটতি হয় তাহলে তা এলাকার নেতাদের খারাপ ব্যবহারের জন্য হবে। বর্তমানে সারাদেশে নেতার সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমাদের এতো নেতার দরকার নেই। আমাদের একমাত্র নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর আমরা যারা আছি, সকলেই দলের কর্মী। ঠিক এমনটায় ভেবে কারো আচরনে যেন সাধারন মানুষ কষ্ট না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।্ মন্ত্রী আরো বলেন, নওগাঁ জেলায় ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সান্তাহার থেকে নওগাঁ শহর ও নওহাটার মোড় হয়ে রাজশাহী বিমানবন্দর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ৭৪ কিঃমিঃ আঞ্চলিক মহা-সড়কের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং ২০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর ২৫ কিঃমিঃ মহা-সড়কের অসমাপ্ত কাজ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই দু’টি প্রকল্প প্রি-একনেকে অনুমোদন লাভ করেছে। এই স্মরনসভায় পার্শ্ববর্তী রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নাটোর এবং বগুড়া জেলা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেন। এদিন সকাল থেকেই জেলার ১১ উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মীর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয় স্মরনসভার স্থল নওগাঁ নওযোয়ান মাঠ। সভার নির্দিষ্ট সময় বেলা ১১টার মধ্যে মাঠে আর কোন তিল ধারনের ঠাঁই ছিলনা। সভার আগে মন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শহরের চকপ্রান মহল্লায় প্রয়াত আব্দুল জলিলের কবর জিয়ারত করেন।
×