ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন রিপোর্ট ইনুর প্রত্যাখ্যান

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন রিপোর্ট ইনুর প্রত্যাখ্যান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন তথ্যনির্ভর নয় দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখেছে ভুল চশমা দিয়ে। আর তাদের দেখার চোখটাও ঝাপসা। সোমবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারের এ অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢালাও মন্তব্য প্রদান আমরা বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সমর্থন করি না। ২০১৬ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যাতে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়, অসাম্প্রদায়িক, বহু মতের সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক প্রশাসনের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এরপর জঙ্গীবাদ নিয়ে আলোচনার পর বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-। এছাড়া অবৈধভাবে আটক, সরকারী বাহিনীর হাতে গুম, জঙ্গীদের মাধ্যমে হত্যাকা-, বাল্যবিয়ে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, শ্রমিকদের জন্য অনিরাপদ কর্মপরিবেশের বিষয়টিও উদ্বেগজনক বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইনু বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, আমরা তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ তা যথাযথ তথ্যনির্ভর নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংবিধান ও আইন দ্বারা পরিচালিত একটি দেশ। দেশের সব সংস্থা সংবিধান ও আইনের পাশাপাশি নিজস্ব সংবিধিবদ্ধ বিধিবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। আইনবহির্ভূত কোন কাজ করার সুযোগ সরকারের নেই, কোন সংস্থারও নেই। কোথাও এর ব্যত্যয় হলে আইনী প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ে গণতান্ত্রিক দেশ। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন বিশ্ব ইস্যুতে উভয় দেশে একসঙ্গে কাজ করছে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে দুই দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রয়াস চালাব। বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পর্ক আছে- যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ধর্মীয় জঙ্গী, সন্ত্রাসী, উগ্রবাদীরা বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মাটিতেই তারা তৎপর। এ সংগঠনগুলো যাই বলার চেষ্টা করুক না কেন, আজ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, তদন্ত, আদালতের বিচার- কোন জায়গায়ই এসব সন্ত্রাসীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সম্পর্কের কোন প্রমাণ পাইনি। গত এক বছরে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সবগুলোই অসফল হয়েছে। ঘটনাস্থলেই বেশিরভাগ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। কেউই পালাতে পারেনি। এ তৎপরতার ফলে আমরা মনে করি, জঙ্গী ও সশস্ত্র কর্মের কুফলটা গত এক বছরে আমরা দেখেছি। জঙ্গীরা আগের চেয়ে অনেক কোণঠাসা হয়ে গেছে। সুতরাং প্রতিবেদনের সঙ্গে বিষয়টি যায় না উল্লেখ করে ইনু বলেন, তাদের প্রশংসা করা উচিত ছিল যে, বিছিন্ন, বিক্ষিপ্ত আক্রমণ হলেও তারা প্রতিহত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় গত এক বছরে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী যেসব ঘটনা দেখেছি, তারচেয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনেক বেশি সফল। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়েও প্রতিবেদনের বক্তব্য সঠিক নয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের এখানে এ অধিকারে আইনগতভাবে কোন বাধা গত এক বছরে দেয়া হয়নি। জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আমরা সঙ্কুচিত করিনি। প্রশাসনিক কোন নির্দেশও দেইনি। মনে রাখতে হবে, আমরা সংবিধানের আওতায় কষ্ট হলেও জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনের চেষ্টা চালাচ্ছি। যেমন ভারত, ইউরোপ ও আমেরিকা চালাচ্ছে। সুতরাং এখানে মানবাধিকার ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার সঙ্কুচিত করার অভিযোগ সত্য নয়। জঙ্গী দমনের ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগের কথা বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরব হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সম্প্রতি বলেছেন, দেশে কোন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটছে না। এ ধরনের কোন অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ খুবই সীমিত। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ। তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়েও তারা কথা বলেছে। আমি বলছি, বাংলাদেশে আইনগতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচারবহির্ভূত কোন হত্যা করার বিধান নেই। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যারা নিহত হয়েছে, তা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- হিসেবে চালানোর প্রয়াস সঠিক নয়।
×