ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুরের ব্যঞ্জনায় সিলেটবাসীকে মাতিয়ে শেষ হলো প্রাণের উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ মার্চ ২০১৭

সুরের ব্যঞ্জনায় সিলেটবাসীকে মাতিয়ে শেষ  হলো প্রাণের উৎসব

সালাম মশরুর সিলেট অফিস ॥ শিল্প ও শিল্পীর সমন্বিত প্রকাশের সঙ্গে সৃষ্টির কারুকার্যে মধুময় আবহ। রং তুলির নানা বর্ণ, সাহিত্য সংস্কৃতির রূপ রস ও সুরের ব্যঞ্জনায় অনন্য আয়োজন দশ দিনব্যাপী বেঙ্গল উৎসবের জোয়ারে ভেসে যাওয়া লক্ষ প্রাণের আকুতি যেন শেষ হয়ে হচ্ছে না শেষ। উৎসব যেন হারিয়ে না যায়। ফুরিয়ে না যায়। সাদা মেঘের আনাগোনার ফাঁকে শেষ বিকেলে ফিকে রোদের এক ঝলক উপস্থিতিতে বিদায়ের সুর ছিল মাঠের ধুলিকণায়। বাঙালী সাহিত্য-সংস্কৃতির হাজার বছরের ইতিহাস, সমসাময়িক প্রেক্ষাপট ও পরিবর্তিত জীবনধারার নানান দিকই উপস্থাপিত হয় বেঙ্গলের এ উৎসবে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব দ্বারই এসে উন্মুক্ত হয় সিলেটের এ উৎসবে। আর কেবলমাত্র বাংলাদেশের নয়, ভারত ও নেপালও যেন এক হয়েছে এ উৎসব প্রাঙ্গণে। নান্দনিক আয়োজন মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে দিয়েছে সিলেটবাসীর মন ও মননে। অগণিত প্রাণে দীর্ঘকাল এ স্মৃতি বহমান থাকবে। সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে শিল্পীরা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন একেকটি রাত। আর তাই ঘড়ির কাটা মধ্যরাতের দিকে এগোলেও সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ ছিল না কারই। পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে নিজেদের মতো করে উৎসবস্থলে মগ্ন সময় অতিবাহিত করেছেন মাঠ ভর্তি শ্রোতা। দশ দিনব্যাপী বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব যেন একটি স্বপ্ন। এ উৎসবে এসে শিশু তরুণ যুবকসহ সব বয়সের সবাই মুগ্ধ। শুক্রবার শেষ দিনে ছিল অভাবনীয় দৃশ্য। সংস্কৃতিপ্রেমী সিলেটবাসীর আগ্রহের মাত্রা যেন পাল্লা দিয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেয়েছিল উৎসবের শেষ দিনে এসে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা না নামতেই উৎসবের মাঠে দর্শকের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সকলের আগ্রহ আর উদ্দীপনার মাত্রাটা একটু বেশি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সুরেলা কণ্ঠে গান শুনে অমৃত সুধা পান করার জন্য। শুধু রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা নয়, আরও খ্যাতনামা শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন শেষদিনের আয়োজনে। প্রতিদিনে মতো শুক্রবার আয়োজনের শেষদিনে এসেও দুটি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অনুষ্ঠান। সিলেট শহর ও অঞ্চল ইতিহাসের বহু ধারায় উৎকর্ষিত। হাওড়-বাঁওড়, নদী-ছড়া, পাহাড়-টিলা নিয়ে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ। সিলেটের অর্থনীতি গতিশীল। সংস্কৃতি আঞ্চলিকভাবে ঐশ্বর্যম-িত, আর লন্ডনের মাত্রা যুক্ত করলে এর প্রসার হয় আন্তর্জাতিক, সিলেট শহরের বাড়িঘর ও পাড়া-পরিবেশের অবস্থা এখনও অনুপম। সব মিলে সিলেট অনন্য। সিলেট অঞ্চল ও শহরের অন্যান্য অবস্থা ধরে রাখা ও আরও সমৃদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন একটি নতুন নাগরিক কল্পনা ও ভাবনাচিত্র। সিলেটে চলমান বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের দশম ও শেষ দিন শুক্রবার বেলা ১১টায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে ‘আগামীর সিলেট’ নিয়ে বিশেষ উপস্থাপনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল কাজী খালেদ আশরাফ বলেন, আমরা আর্কিটেক্ট নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কাজ করি আর আমাদের কাজ গবেষণামূলক। সুযোগ পেলেই আমরা তা প্রচার করি। আমরা সব সময় নতুন ধারণা দেয়ার চেষ্টা করি। আমরা ঢাকার মেয়রদের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করেছি। এমনকি আমরা অনেক বিদেশী সংস্থার সঙ্গেও কাজ করেছি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে আমাদের সিলেট আসা ড. আব্দুল মোমেনের আমন্ত্রণে। সিলেটকে ৫টি মোড়কে গোছানোর একটা পরিকল্পনা করার জন্য। তখন আমরা এসে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে, অলিতে-গলিতে হেঁটে সিলেটকে নতুনভাবে আবিষ্কার করি। এগুলো করতে গিয়ে আমরা সিলেটবাসীকে ভালবেসে ফেলেছি। যা করেছি আমরা ভালবেসেই করেছি, প্রফেশনালি নয়। তিনি আরও বলেন, সিলেট শহর সত্যিকার অর্থে অনবদ্য। অবিশ্বাস্য ঐশ্বর্য আছে এখানে। চা বাগানের ভেতর দিয়ে শহরে প্রবেশ করা- এটা সত্যি অসাধারণ। সিলেটে চারদিকে যে ল্যান্ডস্কেপ এ্যাসেট, তা চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোথাও নেই। সিলেট শহর ইকোনমিকালি অনেকটা উপরে। সিলেটের ছোট ছোট অলিতে-গলিতে হেঁটে আমরা অনেক পুরনো বাড়ি পেয়েছি। ঢাকাতে এ রকম বাড়ি পাওয়া সম্ভবই না। চা বাগান ও সিলেটের আদি বাড়িগুলো নিয়ে কাজ করা যাতে পারে। আগামীর সিলেটে নিয়ে আমদের উপস্থাপনায় রিং রোডের ধারণা, কাজিরবাজার-ক্বীন ব্রিজের মধ্যবর্তী জায়গা ও চত্বরের পাশে অডিটোরিয়ামের একটা ধারণা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ছড়া নিয়ে কাজ করার এক অভিনব সুযোগ সিলেটে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা গ্যালারি, চত্বর, ত্রিমুখী রাস্তা- এসব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। শহর বাড়ির আশপাশের প্রত্যেকটা মানুষকে নিয়ে গড়ে উঠে। শহর মানে কোন বাউন্ডারি না। শহর মানে শহরের পাশেও একটা জায়গা আছে। সিলেটে এত সম্ভাবনা আছে যে সিলেটকে নতুনভাবে আদর্শ শহর হিসেবে গড়ে তোলা যায়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরান, জীনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী, জেরিন রহমান ও বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর (রিসার্চ) সাইফুল হক। বিকেল চারটায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে প্রদর্শীত করা হয় জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘ঘাসফুল’। ছবিটির পরিচালনা করেছেন আকরাম খান। ছবিটির কাহিনী ২১ বছর বয়সী এক যুবককে নিয়ে। যে হারিয়ে ফেলে তার জীবনের অতীতের সকল স্মৃতি। সে তার মফস্বল শহরের রাস্তায় অলি-গলিতে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ির ভেতরেও তার চলাফেরা অনেকটা আগন্তুকের মতো। সে মনে করতে পারে না তার অতীত দিনগুলোর কথা। একদিন সে বাবা-মায়ের ঘরের শেলফে সে দেখতে পায় পুরনো পারিবারিক ছবির এ্যালবাম। এ্যালবামের ছবিগুলো দেখে মনে করতে পারে না কখন কোথায় ছবিগুলো তোলা। খুঁজে পাওয়া স্মৃতিচিহ্নগুলো সম্পর্কে বাবা-মায়ের কাছে কিছু জানতে চাইলে তারা এড়িয়ে যায়। একদিন তৌকির জিন্সের প্যান্টের পকেটে খুঁজে পায় একটি বিবর্ণ চিঠি। স্মৃতিভ্রষ্ট তৌকির অনেক চেষ্টা করেও চিঠির লেখিকা ‘ঘাসফুল’- এর কথা কিছুতেই মনে করতে পারে না। এমনি এক কাহিনী নিয়ে ছবিটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
×