নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ৩ মার্চ ॥ অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানজিদ হাসান জিহাদের বুকে, পিঠে ও হাতে বেত্রাঘাতের চিহ্ন জ্বল জ্বল করছে। কমপক্ষে ১৫টি ক্ষতচিহ্ন তার শরীরে ফুটে উঠেছে। চড়ে দুই কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে কানে কম শুনছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রের বাবা। আহত অবস্থায় জিহাদকে প্রথমে রায়পুর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কানের অবস্থা খারাপ দেখে পরে তাকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পের হাট চর আবাবিল এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে ইংরেজী শিক্ষক ইমান হোসেনের আকস্মিক চড় ও বেদম পিটুনিতে জিহাদের এ দুরাবস্থা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও এখনও ভয়ে কথা বলতে চায় না জিহাদ।
শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে তানজিদ হাসান জিহাদ (১৩), স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ জাফর ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে উক্ত বিদ্যালয়ের মাঠে এক গরু চোরের বিচার হয়। মঙ্গলবার জিহাদসহ কয়েকজন ছাত্র মিলে ওই চোরকে দেয়া শাস্তি প্রসঙ্গে কথা বলাবলি করে। কিন্তু কে বা কারা ইংরেজী শিক্ষক ইমাম হোসেনকে গিয়ে বলে ‘জিহাদ নাকি ইমাম স্যারের বাবাকে চোর বলেছে।’ এতে ইমাম স্যার ক্ষিপ্ত হয়ে কোন কথা না শুনে ক্লাসে সব ছাত্রছাত্রীর সামনে জিহাদকে বেত দিয়ে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ক্লাসে দাঁড় করিয়ে দুই কানে কয়েকটি চড় মেরে চলে যায়। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা ও স্থানীয় লোকজন তার বাবাকে খবর দেয় এবং জিহাদকে নিয়ে রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক জিহাদের শরীরে ১৫টি রক্তাক্ত জখম ও কান দিয়ে পানি পড়তে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। উল্লেখ্য, ওই শিক্ষক এর আগেও দুই ছাত্রকে এমনি পিটিয়ে শুরুতর আহত করেছিল। বিষয়টি তখন স্থানীভাবে সমাধান করা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থী জিহাদের বাবা আবু তাহের জানান, চারদিন পর ছেলেকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে আনলেও ভয়ে কথা বলতে পারছে না। কান দিয়ে শুধু পানি পড়ছে। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া চেষ্টা করছি। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ জানান, একটি তুচ্ছ কথাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের ছাত্র জিহাদের সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কোন শিক্ষক কখনওই শিক্ষার্থীদের এভাবে মারধর করতে পারেন না। এসএসসি পরীক্ষা থাকায় ঘটনাটি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত না হলেও আগামী সোমবার পরিচালনা কমিটি আহুত জরুরী সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আহত জিহাদের চিকিৎসা চালানোর জন্য তার অভিভাবকে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা ম্যাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, পরিচালনা কমিটিকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন, ছেলেটির কানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ঘটনাটি আমি শুনেছি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দ্রুত বিষয়টি সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। এ ঘটনায় থানা কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।