ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক বিজিবি সদস্যকে

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৪ মার্চ ২০১৭

ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক বিজিবি সদস্যকে

রিয়াজউদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ নবীনগরে পরিকল্পিত হত্যাকা-কে ডাকাতি বলে চালানোর চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। এদিকে সাবেক বিজিবি সদস্যের হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে শিবপুরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে আব্দুল হকের স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের করেন। অনুসন্ধানে সূত্রগুলো বলছে, গত দু’মাস আগে রসুল্লাবাদ গ্রামের আব্দুল হক ওরফে এনামুলের মোটর সাইকেল নিজ বাড়ি থেকে চুরি হয়। এক সপ্তাহ আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুলতানপুরে ওই মোটরসাইকেলটির সন্ধান মেলে। চুরির ঘটনার সাথে পার্শ¦বর্তী জগন্নাথপুরের একটি গ্রুপ জড়িত বলে খবর পায় এনামুল। এ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী সাবেক ইউপি সদস্য সেন্টু মিয়া ও তার লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেন। সেন্টু আপোস নিষ্পত্তির জন্য ১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় তার বাড়িতে সালিশে বসার কথা বলে। আব্দুল হক ওরফে এনামুল তার স্ত্রীর বোনের স্বামী ইয়াসিনকে সাথে নিয়ে সেন্টু মিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়। সেখানে সালিশ বসে। এতে গ্রামের অন্তত ১৫/১৬ জন উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠক আধা ঘণ্টা চলার পর মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে সেন্টু ও তার লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। গ্রামে ডাকাত এসেছে বলে চিৎকার দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। নৃশংসভাবে নির্যাতনে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এ দু’জন। তাদের সাথে আসা অন্য ২ জন সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পালিয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য, ব্যক্তিগত আইডি নং-৬০৪৭৩, পরিচয়পত্র নং- ৪৪১০২৯৪, ১৭ বিজিবির ব্যাটালিয়ন (কক্সবাজার) থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে অবসরে যান। অভিযোগ পাওয়া গেছে, পরিকল্পিতভাবেই তাদের হত্যা করা হয়। কিন্তু ঘটনার পর পর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা এড়িয়ে ডাকাতি বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশও দাবি করে ডাকাতি করতে এসেই গণপিটুনিতে তারা নিহত হয়েছে। পুলিশের এ ভূমিকায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ডাকাতদের হাতে কি কোন অস্ত্র ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রশ্ন করা হয়েছে, ডাকাতি করতে গেলে কি খালি হাতে যেত তারা? উল্লেখ করা হয়, এনামুল গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনের পর থেকে ঝামেলা চলছিল তার প্রতিপক্ষের সাথে। এ ঘটনা আড়াল করার জন্য টাকা দিয়ে ডাকাতির নাটক সাজানো হচ্ছে। একজন লিখেছেন, আমি প্রশাসনকে বলব, আপনারাও একদিন মরবেন, আল্লাহকে ভয় করেন। আমি এই হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। একজন লিখেছেন, স্ত্রী-সন্তানদের কাছে থাকতে বিডিআরের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে, পৈতৃক কৃষি জমি, ৩টি সিএনজি অটোরিক্সা, নিজ গ্রামে ডিস ব্যবসা করতেন নিহত ইয়াসিন। বড় মেয়ে নাইমা আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাবেরা সোবহান সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী। মেয়ে নাইমা আক্তার জিপিএ ফাইভ পাওয়ার পর গর্ব করে বলতেন মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। কলেজ পাড়া, কাউতলী এবং ভাদুঘরে তার চলাচল ছিল মার্জিত। নবীনগর উপজেলার, শিবপুর ইউনিয়নের কাজলিয়া গ্রামে পৈতৃক বাড়ি ছিল ইয়াসিনের। এশার নামাজের সময় নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে তাকে হত্যা করা হয়। নৃশংস ও পরিকল্পিত এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছে মেয়ে। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, এটি ডাকাতির ঘটনা। ডাকাতি করতে আসার পর গণপিটুনিতে তারা মারা যায়। এ ঘটনায় সেন্টু মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করে। শুক্রবার দুপুরে নিহত আব্দুল হকের স্ত্রী তাসলিমা বেগম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভারিক রাখতে গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা দায়ের করেছে তাতে আব্দুল হকের স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি ট্রাক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
×