ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্রস্তুতি সারলেন তামিম

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ মার্চ ২০১৭

দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্রস্তুতি সারলেন তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘কোচ আছে। ম্যানেজমেন্ট এবং বোর্ড আছে। তারা ডিসিশন নিবেন, আমি কি করব।’ শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার আগে উইকেটকিপিং নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। কোচ, ম্যানেজমেন্ট, বোর্ড মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন না মুশফিক। আর তাই বলা চলে মুশফিকের উইকেটকিপিং অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। সেটি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট প্রেসিডেন্টস একাদশের বিপক্ষে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই শুরু হয়ে গেছে। ম্যাচটি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার। শেষ হবে আজ। মুশফিকের এমন কষ্টকর দিনে আবার ওপেনার তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক দুর্দান্ত প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন। তামিম ১৩৬ রান করে স্বেচ্ছাঅবসর নিয়েছেন। মুমিনুলও ৭৩ রান করার পর তাই করেছেন। তামিম ও মুমিনুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথমদিনে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশও ৭ উইকেটে ৩৯১ রান করেছে। তবে টস হেরে আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তামিম ও মুমিনুল ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারলেও মরাতুয়ার টাইরন্নে ফার্নান্দো স্টেডিয়ামে বাকি ব্যাটসম্যানরা কিন্তু ব্যর্থই হয়েছেন। সৌম্য সরকার ৯ রান করতেই সাজঘরে ফেরেন। উইকেটকিপিং হারানো দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিককে ছয় নম্বর থেকে আরও ওপরে খেলানোর সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তুতি ম্যাচেই যার শুরু হয়েছে। কিন্তু চার নম্বরে ব্যাট করে ২১ রানের বেশি করতে পারেননি মুশফিক। সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকেও ৩০ রানের বেশি আসেনি। দলের ২৬ রানের সময় সৌম্য আউটের পর যে দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-মুমিনুল মিলে ১৪৩ রানের জুটি গড়েন, সেটিই প্রথমদিনে সেরা জুটি হয়ে থাকে। ১৬৯ রানের সময় ১০৩ বলে ১০ চারে ৭৩ রান করে মুমিনুল স্বেচ্ছায় অবসর না নিলে জুটি আরও বড় হত। তবে মুশফিক ব্যাট হাতে ঝলক দেখাতে না পারলেও তৃতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ৭৫ রানের জুটি গড়েছেন। যা দলকে আড়াই শ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যায়। ২৪৪ রানে মুশফিক আউটের পর ২০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই তামিমও স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তবে এরআগেই শতক করে ফেলেন বাংলাদেশ ওপেনার। ১৮২ বলে ৯ চার ও ৭ ছক্কায় ১৩৬ রান করে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ও হন। সাকিবের সঙ্গে তামিমের জুটির স্থায়িত্ব থাকে ২০ রানের। এরপর সাকিব-মাহমুদুল্লাহ জুটিও ৩৮ রানের বেশি টিকেনি। ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদুল্লাহ ও লিটন কুমার দাস মিলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু ৫৯ রানের জুটি হতেই সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ (৪৩)। ৩৬১ রানে মাহমুদুল্লাহর আউটের পর আর ৪ রান যোগ হতে মেহেদী হাসান মিরাজও (১) একই পথের পথিক হন। শেষ পর্যন্ত দিন শেষ হওয়ার আগে লিটন (৫৭*) ও তাইজুল (৪*) ব্যাট হাতে থাকেন। লিটন বাজিমাত করেন। নিজেকে প্রস্তুতি ম্যাচে মেলে ধরেন। দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। ম্যাচটিতে নিজেদের প্রস্তুত করাই আসল উদ্দেশ্য থাকে। সেখানে ‘জয়-পরাজয়’ আসল নয়। তাতে ভালভাবেই প্রস্তুতি সেরে নিলেন তামিম ও মুমিনুল। তবে ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট একাদশের হয়ে জাতীয় দলের কেউ বোলিং করেননি। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দিনেশ চান্দিমাল। যিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টের জন্য ঘোষিত দলের সদস্য। তিনিই এ ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে খেলছেন। নেতৃত্বও দিচ্ছেন। আর তাই বোঝাই যাচ্ছে, আনকোরা বোলারদের পেয়েই ত্যাজ দেখিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। অনেকটা নির্ধারিত ওভারের ধাঁচেই খেলেছেন। ‘চার-ছক্কা’ হাঁকিয়েছেন। ২৯তম ওভারের তৃতীয় বলে গিয়ে ১০০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হলেও পরের ১৭.২ ওভারেই আরও ১০০ রান হয়ে যায়। ৪৫তম ওভারে দলের ১৮৪ রান হয়, আর তামিমের থাকে ৭৮ রান। তামিম তো এমন ব্যাটিং করেন ৪৬তম ওভারেই তিন ছক্কা, দুই চারের সঙ্গে দৌড়ে দুই রান নিয়ে ২৮ রান নিয়ে ফেলেন। এ ওভারে দলেরও ২০০ রান হয়, বামহাতি স্পিনার প্রবীণ জয়াবিক্রমার করা ওভারের শেষ বলটিতে ছক্কা হাঁকিয়েই তামিমও শতক করেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে, তামিম ও ব্যাটসম্যানরা কতটা আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন। এতে করে অবশ্য ব্যাটিং অনুশীলনটা ভালই হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে কোন প্রস্তুতি ম্যাচে ১৩ ক্রিকেটার থাকেন। যেন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমন্বয় করে প্রস্তুতি সেরে নেয়া যায়। কিন্তু ম্যাচটিতে এতটাই গুরুত্ব দিয়ে খেলছে বাংলাদেশ দল, ১১ জন একাদশে ও ১ জন একাদশের বাইরের ক্রিকেটার নিয়েই খেলছে। সাব্বির রহমান রুম্মন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, রুবেল হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বিকে একাদশের বাইরে রাখা হয়েছে। তাতে গলে ৭ মার্চ শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টের একাদশেরও একটা ইঙ্গিত যেন মিলে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটকিপিংয়ে থাকছেন লিটন কুমার দাস। এখানেই মুশফিকের কষ্ট বলা চলে। দেশ ছাড়ার আগে মুশফিক বলেছিলেন, ‘আমি তো এনজয় (উইকেটকিপিং) করি। যদি ব্যক্তিগতভাবে বলতে বলা হয়, এখনও আমার মনে হয় যে কিপার এবং ব্যাটসম্যান হিসেবেই আমি দলের জন্য সবচেয়ে ভাল অবদান রাখতে পারি।’ কিন্তু মুশফিক আর কিপার থাকছেন না। অধিনায়ক ও দলের সেরা ব্যাটসম্যান হয়েই থাকছেন। ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদ টেস্টে মুশফিকের বাজে উইকেটকিপিং দেখার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যে বলেছিলেন, ‘এবার (উইকেটকিপিং নিয়ে) একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত হবেই। এখন সময় হয়ে গেছে। এটা প্রায় সিদ্ধান্তও নেয়া।’ সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরও হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারের ৫২ টেস্টের মধ্যে ৪৭টিতেই উইকেটের পেছনের দায়িত্ব পালন করেছেন মুশফিক। ৫ টেস্টে আপৎকালীন দায়িত্ব পালন করেছেন অন্য কেউ। কিন্তু এবারই প্রথম মুশফিকের পরিবর্তে বিকল্প উইকেটকিপার থাকছে। প্রস্তুতি ম্যাচসহ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও মুশফিক থাকছেন না উইকেটকিপার হিসেবে। মুশফিকের পরিবর্তে প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা লিটন সেই দায়িত্ব পালন করবেন। মুশফিকের এমন সময়ে প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং প্রস্তুতি সেরে নিলেন তামিম ও মুমিনুল।
×