ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ মার্চ ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আদালতের রায়। সে রায়ে কোন একটি পক্ষ অসন্তুষ্ট। যদি অসন্তুষ্ট হয়, আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তারা প্রতিকার চাইতে পারেন। কিন্তু আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মন চাইল আর হরতাল অবরোধ ধর্মঘট ডেকে দিলাম, এটা হয় না। হওয়া উচিত নয়। কিছুকাল আগে বাংলাদেশ বিরোধী ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালে এই অপকর্মটি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর, যুদ্ধাপরাধীদের দ- কার্যকরের পর হরতাল ডেকেছে জামায়াত-শিবির। সেই ভূত এখন পরিবহন মালিকদের ঘাড়ে। দেশের মানুষকে জিম্মি করে তারা যখন তখন ধর্মঘট ডাকছে। পুরনো পরিত্যক্ত বাস। ‘বজ্জাত’ স্বভাবের চালক। গাড়িচাপা দিয়ে কখনও স্কুলগামী শিশুকে মারছে। কখনও পিষ্ট করছে তরতাজা তরুণ বাইক চালককে। কিন্তু বিচার করা যাবে না। বিচারের প্রসঙ্গ আসলেই পরিবহন ধর্মঘট। গত মঙ্গল ও বুধবার বলা নেই কওয়া নেই ধর্মঘট ডেকে বসেন পরিবহন মালিকরা। দুদিনই ঢাকা শহর ছিল পরিবহন শূন্য। তারা ঢাকার রাস্তাগুলো থেকে গণপরিবহন উঠিয়ে নেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। চরম দুর্ভোগের স্বীকার হন রাজধানীবাসী। এখানেই শেষ নয়, নেপথ্যে থেকে কলকাটি নাড়িয়েছেন মালিকরা। আর রাস্তায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের মতো অন্যায় করেছেন শ্রমিকরা। ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচলে তারা বাধা দিয়েছেন। এ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত আটকে দেয়া হয়েছে। এই যে মস্তানি, এর উৎস কোথায়? কারা এবং কারটা খেয়ে ঘাড় এত মোটা করেছে? প্রশ্ন তুলেছেন শহর ঢাকার মানুষ। অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হলো। এক মাসের দীর্ঘ আয়োজন। পুরোটাই ছিল বইকেন্দ্রিক। এরই মাঝে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব বই মানুষের বসার ঘরে শোবার ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। দারুণ যতেœ ঘরে সাজিয়ে রাখছেন পাঠক। নতুন বই সংগ্রহের যে আনন্দ এখনও অনেকের চোখে মুখে স্পষ্ট। পড়াও শুরু হয়ে গেছে। এটা সত্যি খুব ভাল ব্যাপার। পাশাপাশি চলছে আলোচনা। এবারের মেলায় নতুন বই কেমন এলো? মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা কত হবে? ইত্যাদি আলোচনা এখন চলছে। একাডেমির দেয়া তথ্য মতে, এবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৬৪৬টি। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ৩ হাজার ৪৪৪। সে হিসেবে এ বছর ২০২টি বই বেশি প্রকাশিত হয়েছে। মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি বলছে, প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৮৫৮। মেলায় কত টাকার বই বিক্রি হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। তবে একাডেমি কয়েকটি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বলছে, এবার মেলায় মোট ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুধু বাংলা একাডেমিই বিক্রি করেছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩০৬ টাকার বই। গত বছরের তুলনায় এই বিক্রি ২২ লাখ টাকা বেশি। এর আগে ২০১৬ সালে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৯৫ লাখ এবং ২০১৪ সালে ১৬ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শেষ হতেই শুরু হলো বাঙালীর আরেক অর্জনের মাস মার্চ। উত্তাল মার্চেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের এই মাসে শহর ঢাকা ছিল অগ্নিগর্ভা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কাল রাত, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা আরও কত বড় বড় ঘটনা। সবই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মার্চ। শেষ করা যাক বসন্তের কথা বলে। প্রিয় ঋতুর আগমনে দারুণ বদলে গেছে প্রকৃতি। বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছুদিন আগেও গাছের কোন পাতা ছিল না। শুকনো কড়কড়ে পাতা নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। কয়েক স্তর ধুলো জমে ছিল গাছের পুরনো পাতায়। আর এখন কঁচি সবুজ পাতার দিকে তাকিয়ে মন ভাল হয়ে যায়। গত বুধবার রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় উপরের দিকে তাকাতেই মনে হলো বসন্ত সত্যিই ঋতুরাজ! আপনি দেখেছেন? ইট সিমেন্টের জঙ্গল এই শহর। এখানে নিজে উদ্যোগী হয়ে দেখতে হবে। ফাগুনের আগুন লাগা ফুল দেখুন। পাতার দিকে তাকান। ভাল লাগবে। লাগবেই।
×