ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ডাইনোসরের চেয়েও ভয়ঙ্কর টেরোসর

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩ মার্চ ২০১৭

ডাইনোসরের চেয়েও ভয়ঙ্কর টেরোসর

একটি দানব টেরোসর। দন্তহীন উড়ন্ত সরীসৃপ। ডানার দৈর্ঘ্য ১০ মিটার। ঘাড় যথেষ্ট খাটো অথচ দারুণ শক্তিশালী। তবে অন্যান্য প্রজাতির লম্বা ও সুন্দর ঘাড়ের তুলনায় এদের ঘাড় খাটো হলেও ঘাড়ের পেশী লম্বা। প্রাচীন পৃথিবীর আজকের রুমানিয়া এলাকায় এরাই হয়ত ছিল প্রধান শিকারি প্রাণী। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানতে পারা গেছে। প্রাচীন যুগের প্রাণী বিশেষজ্ঞরা প্রাণীটির ঘাড়ের অস্বাভাবিক বিশাল কশেরুকা পরীক্ষা করে দেখে ধারণা করেছেন, এরা ছিল অতিকায় মাংসাশী ও প্রধান শিকারি প্রাণী। ক্রিটেশাস যুগের ট্রান্সসিলভানিয়ায় তল্লাটজুড়ে দাবড়ে বেড়ানো এ প্রাণীটির ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকত ডাইনোসর ও অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী। সে সময়কার এ অঞ্চলে বিশাল শিকারি প্রাণীর অস্তিত্বের এই প্রথম পাওয়া গেল। যুক্তরাজ্যের দুই বিশেষজ্ঞ ড. মার্ক উইটন ও ড. ড্যারেন নাইশ হাটজেগোপটেরিক্স নামক প্রাণীটির বেশকিছু দেহাবশেষের ফসিল পরীক্ষা করে দেখেন। প্রাণীটি ছিল উড়ন্ত সরীসৃপ আজদারকিডাই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত এদের ঘাড় হতো অসম্ভব লম্বা। সবচেয়ে বড় প্রজাতির ক্ষেত্রে ঘাড়ের দৈর্ঘ্য ছিল আড়াই মিটার। অবশ্য গবেষকরা মনে করেন যে, হাটজেগোপটেরিক্স প্রাণীটির ক্ষেত্রে ঘাড় ছিল যথেষ্ট খাটো অথচ তেমন শক্তিশালী। ঘাড়ের পেশী ছিল বড়। হাটজেগোপটেরিক্সের অন্যান্য দেহাবশেষের মধ্যে পাওয়া গেছে চোয়ালের জয়েন্ট, যা থেকে বোঝা যায় প্রাণটির করোটি বা মাথার খুলি ছিল আধ মিটার চওড়া এবং অবয়ব হাড় ছিল বেশ শক্ত। এসব দিক দিয়ে আজদারকিড গোত্রের অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গে এদের মিল ছিল না, যার ফলে হাটজেগোপটেরিক্স এক শক্তিশালী ও প্রধান শিকারি প্রাণী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ড. উইটোন বলেন, আজদারকিড গোত্রের অন্যান্য প্রজাতির আর অতিকায় হাটজেগোটরিক্সের ঘাড়ের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য ছিল লক্ষণীয়। সে সময় ওই অঞ্চলে থাকা যে কোন প্রাণীর তুলনায় হাটজেগোপটেরিক্স ছিল বহুগুণ শক্তিশালী। বিশেষ করে তাদের ঘাড়ের দৈর্ঘ্য ও পেশী ভর থেকে বোঝা যায় অতিকায় আজদারকিডরা চেহারা ও আচার-আচরণের দিক থেকে হয়ত আমূল ভিন্ন ধরনের প্রাণী ছিল। বিশাল শক্ত কঙ্কাল ও পেশীশক্তির কারণেই হাটজেগোপটেরিক্স সেই প্রাচীন যুগের তৃণভূমি ও বনাঞ্চলে বিচরণরত অন্যান্য প্রাণীর এক বিশাল শিকারি প্রাণী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। প্রাণীটি হয়ত এমন সব বড় প্রাণীকে আক্রমণে সক্ষম ছিল, যেগুলোকে অন্যান্য উড়ন্ত সরীসৃপ প্রাণীর পক্ষে আক্রমণ করা সম্ভব ছিল না। ড. উইটোন বলেন, হাটজেগোপটেরিক্স এক অদ্ভুত দ্বীপ প্রতিবেশে বাস করত, যেখানে অনেক ডাইনোসরই ছিল বামন কিম্বা ছিল ক্রিটেশাস জগতের বাকি অংশে বিলুপ্ত হয়ে খাওয়া প্রাণী গোত্রের অন্তর্গত। প্রাচীন ট্রান্সসিলভানিয়া ছিল নানা দিক দিয়ে এক বিচিত্র জায়গা। তবে সেখানে হাটজেগোপটেরিক্সের পাশাপাশি অন্যান্য বিশাল মাংসাশী ডাইনোসরও বাস করত কি-না তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ধরে নেয়া যায়, তেমন বড় শিকারি প্রাণী ছিল না এবং ছিল না বলেই হাটজেগোপটেরিক্স তথা দানব টেরোসর ক্রিটেশাস যুগের শেষপর্বের রুমানিয়ায় প্রধান শিকারি প্রাণী হিসেবে দেখা দিয়েছিল। তাদের চ্যালেঞ্জ করার সম্ভবত কেউ-ই ছিল না। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×