ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারী-বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ

প্রকাশিত: ০১:২৯, ১ মার্চ ২০১৭

এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারী-বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সরকারী-বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বা এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারীখাতের অংশগ্রহণ থাকতে হবে ৭০ ভাগ। বাকি ৩০ ভাগ সরকার বাস্তবায়ন করবে। এজন্য এখন থেকেই সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি, আঞ্চলিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং পিপিপি’র কার্যক্রম বাড়ানোর উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে নতুন নতুন খাত তৈরির সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এসডিজি থেকে বেসরকারীখাতের ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কৌশল নির্ধারণ’ বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা বলেন, বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে ওই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। ডিসিসিআই’য়ের সভাপতি আবুল কাসেম খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও এসডিজি বিষয়ক কমিটির উপদেষ্টা আসিফ ইব্রাহীম। আবুল কালাম আজাদ বলেন, এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারীখাত ও সরকারের অংশীদারিত্ব যথাক্রমে ৭০ এবং ৩০ ভাগ। তাই এক্ষেত্রে বেসরকারীখাতের অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। তিনি বলেন, এ লক্ষ্য বাস্তাবয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও অন্যান্য সংস্থার অংশগ্রহণে কৌশলপত্র প্রণয়নে কাজ করছে এবং আগামী এপ্রিলের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে। তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায়ে খাতভিত্তিক টাক্সফোর্স গঠনের আহবান জানান। তিনি আরোও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সরকারী ঋণের নিন্মগতি এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারী ও বেসরকারীখাতের কার্যকর যোগাযোগের উপর জোরারোপ করেন। পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক দশক যাবত আমরা সারা বিশ্বে বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক অরাজকতা লক্ষ্য করছি। তিনি সত্যিকার অর্থে দারিদ্র বিমোচনে বর্তমানে ব্যবহৃত উন্নয়নের মডেলসমূহ সংষ্কারের পরামর্শ প্রদান করেন। ড. জিল্লুর বলেন, এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। তিনি সামাজিক সেবাখাতে নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য এনজিওদের প্রতি আহবান জানান। তিনি মানসম্মত শিক্ষা এবং জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান, যা ভবিষ্যতে অনেক সুফল বয়ে আনবে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ৩টি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো হলো-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন, সামাজিক ঐক্য এবং পরিবেশের সংরক্ষণ। তিনি জানান, সরকার কর্তৃক প্রণীত ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা সমূহে অর্জনের বিষয়ে সচেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি এসডিজিতে উল্লেখিত ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার আলোকে কৌশলপত্র প্রণয়ন, ব্যবসায়িক খাতগুলোকে বিন্যাসের জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান, যার ভিত্তিতে সরকার আইন সংষ্কার এবং নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা প্রদান করা হবে। মূল প্রবন্ধে এসডিজি বিষয়ক কমিটির উপদেষ্টা আসিফ ইব্রাহীম বলেন, প্রাইসওয়াটারহাউজকুপারস-এর তথ্য মতে, সারাবিশ্বে ৭১ ভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এসডিজিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং ১৩ শতাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এসডিজি’র প্রভাব নির্ধারনে কৌশলপত্র প্রস্তুত করেছে। নির্ধারিত আলোচনায় ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশেদ আলাম এবং ঢাকা চেম্বারের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আকবর হাকিম অংশগ্রহণ করেন। মুক্ত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের পরিচালক খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, খ. আতিক-ই-রাব্বানী, এফসিএ, আহবায়ক এম এস সিদ্দিকী, পিআরআইপি ট্রাষ্ট-এর নির্বাহী পরিচালক আরোমা দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যান সমিতি’র প্রতিনিধি অনিমেষ তাজু, এ্যাকশনএইড’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্রাটিজি এ্যান্ড লিডারশীপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রাশেদুর রহমান, অক্সফাম-এর প্রাইভেট সেক্টর কোঅর্ডিনেটর মোঃ আনিসুর রহমান চৌধুরী, আইসিসি-বাংলাদেশ’র মহাসচিব আতাউর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্ল্যাহ চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
×