ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়ো ইব্রার ভেল্কি!

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১ মার্চ ২০১৭

বুড়ো ইব্রার ভেল্কি!

বয়স যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ধার যেন আরও বাড়ছে জ¬াতান ইব্রাহিমোভিচের। তারকা এই ফরোয়ার্ড ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে অপ্রতিরোধ্য ছন্দে এগিয়ে চলেছেন। ধারাবাহিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত এখন তিনি। ম্যানইউর হয়ে প্রতিটি ম্যাচেই নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন উচ্চতায়। দিনকয়েক আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে এনে দিয়েছেন আরাধ্য ট্রফি। ইব্রার জোড়া গোলে ভর করেই ইংলিশ লীগ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যানইউ। উয়েফা ইউরোপা লীগ ফুটবলের শেষ ৩২-এর প্রথম লেগের ম্যাচেও অসাধারণ হ্যাটট্রিক করেন সুইডিশ সুপারস্টার। ইব্রার হ্যাটট্রিকে ভর করে ওল্ডট্র্যাফোর্ডে অতিথি ফরাসী ক্লাব সেইন্ট এটিয়েনকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ম্যানইউ। সহজ এই জয়ে শেষ ষোলোতে এক পা দিয়ে রেখেছে রেড ডেভিলসরা। আগামী ২২ মার্চ ফিরতি লেগের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ইব্রার মতো রাতটি রাঙান এডিন জেকো। যুগোশ্লাভিয়ার এই ফরোয়ার্ড স্প্যানিশ ক্লাব ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে ইতালিয়ান ক্লাব এ এস রোমার ৪-০ গোলের জয়ে একাই করেণ তিন গোল। প্রতিপক্ষের মাঠে বিশাল এই জয়ে রোমারও প্রিকোয়ার্টার প্রায় নিশ্চিত। ফিরতি লেগ নিজেদের মাঠে খেলবে ইতালিয়ান ক্লাবটি। ম্যানইউ’র জার্সিতে এটা প্রথম হ্যাটট্রিক ইব্রাহিমোভিচের। ম্যাচের ১৫ মিনিটে ম্যানইউকে এগিয়ে নেন সাবেক বার্সা তারকা। এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জোশে মরিনহোর শিষ্যরা। বিরতির পর ৭৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আবারও সতীর্থদের উদযাপনের মধ্যমণি বনে যান ৩৫ বছর বয়সী ইব্রা। পুরো ম্যাচজুড়েই অতিথি ফরাসী ক্লাবের রক্ষণভাগ ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন পোগবা-ইব্রাহিমোভিচরা। নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট আগে পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিক উল্লাসে মাতেন ইব্রা। ম্যাচ শেষে দলের পারফর্মেন্সে সন্তোষ প্রকাশ করেন রেড ডেভিলস কোচ মরিনহো। বিশেষ করে ইব্রার উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করেন স্পেশাল ওয়ান। মরিনহো বলেন, কোন প্রশংসা ওর (ইব্রাহিমোভিচ) জন্য যথেষ্ট নয়। প্রতিনিয়ত সে প্রমাণ করে চলেছে কেন সেরা। এরপর ইংলিশ এফএ কাপেও আরেকবার নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন ইব্রাহিমোভিচ। ব্লাকবার্ন রোভাসের বিরুদ্ধে দলের জয়সূচক গোলটি করেন তিনি। ম্যাচ যখন সমতাবস্থায় শেষ হওয়ার শঙ্কা ছিল তখন কোচ মরিনহো ইব্রা ও পল পোগবাকে মাঠে নামান। এতেই পাল্টে যায় খেলার চেহারা। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে জয়সূচক গোল করেন ইব্রা। পোগবার পাস থেকে ঠা-া মাথায় প্লেসিং শটে গোলটি করেন সুইডিশ তারকা। এ নিয়ে নিজের শেষ চার ম্যাচ থেকে ৫ গোল আদায় করে নিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সি ইব্রা। ম্যাচ শেসে ম্যানইউ কোচ জোশে মরিনহো বলেন, আমি জানিনা ইব্রাহিমোভিচ এখন পর্যন্ত কয়টি গোল করেছেন। সেটি আমি জানতেও চাইনা। তবে জানতাম সে আমাদের দলের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হবে। তার এই সহায়তা আমাদের ব্যাপক কাজে লাগছে। গত বছর ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইন ছেড়ে ম্যানইউতে এসেছেন ইব্রা। আসার পর থেকেই আলো ছড়িয়ে চলেছেন। এর আগ ফরাসী চ্যাম্পিয়নদের হয়েও ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়িয়েছেন। গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। এর মধ্যে অন্যতম পিএসজির হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান থেকে ২০১২ সালে পিএসজিতে নাম লেখান ইব্রাহিমোভিচ। ফ্রান্সের শীর্ষ ক্লাবটির হয়ে এ নিয়ে ১১৩ গোল করেছেন ১২২ ম্যাচে। এর আগে পিএসজির হয়ে সর্বোচ্চ ১০৯টি গোলের রেকর্ড ছিল পেড্রো পলেটার। ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পিএসজিতে খেলেন পর্তুগালের এই ফুটবলার। অথচ তার কয়েক মাস আগেই ইব্রা বেয়ার্ন মিউনিখে খেলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। এক সাক্ষাতকারে পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টানার আগে সেখান থেকে জার্মান ক্লাব বেয়ার্নে খেলার আকাক্সক্ষার কথা জানান ইব্রা। ওই সময় ইব্রার পিএসজি ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যায়। সাবেক বার্সিলোনা তারকার ইচ্ছা মিউনিখের ক্লাবটিতে খেলা। সাক্ষাতকারে সে সময় ইব্রাহিমোভিচ বলেছিলেন, আমি ক্যারিয়ার শেষ করার আগে বুন্দেসলীগায় খেলতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে বেয়ার্নের হয়ে খেলার ইচ্ছাটাই বেশি। আমার সামনে এখনও সময় আছে। মনে হয় একদিন তাদের হয়ে মাঠে নামতে পারব। আমি যদি জার্মানে পাড়ি দিই সেক্ষেত্রে বেয়ার্নের হয়ে খেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তারা বিশ্বের সেরা পাঁচটি ক্লাবের মধ্যে অন্যতম। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বেয়ার্নে যাননি। পাড়ি জমিয়েছেন ইংলিশ পরাশক্তি ম্যানইউতে। ইব্রার মিউনিখে না যাওয়ার আরেকটি কারণ ছিল। তখন বেয়ার্নের কোচ ছিলেন পেপ গার্ডিওলা। তার সঙ্গে আবার ইব্রার সম্পর্ক ভাল ছিল না। এই স্প্যানিশ কোচের অধীনে বার্সায় খেলার সময় দুজনের সম্পর্কটা বেশ শীতল ছিল। এ কারণেই কাতালানদের হয়ে মাত্র এক মৌসুম (২০০৯-১০) খেলেই ন্যুক্যাম্প ছাড়তে হয় ইব্রাকে। সে সময় ধারে যোগ দিয়েছিলেন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে। ইব্রাহিমোভিচের ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় কেটেছে ধারে খেলে। যখন যে ক্লাবে পাড়ি জমিয়েছেন সেই ক্লাবই তাঁকে অন্যের কাছে ‘ধারে’ পাঠিয়েছে। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান থেকে থেকে লম্বা সময় স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সিলোনায় ধারে খেলেছিলেন ইব্রা। এরপর ক্যাটালান শিবিরে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। কিন্তু ন্যুক্যাম্পের দলটির ফুটবলার প্রয়োজন হলে তারাও বলির পাঠা বানায় ইব্রাকে। ২০১১ সালে বার্সিলোনা থেকে এসি মিলানে ধারে খেলতে আসেন সুইডিশ তারকা। ওই বছরই গ্লানি কাটিয়ে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গ চুক্তি পাকাপোক্ত করেন। পুনরায় চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশটির লীগে খেলতে এসে সময়টা ভালই কাটে তুখোড় এই ফরোয়ার্ডের। এক বছরেই ক্লাবের অপরিহার্য ফুটবলারে পরিণত হন। দলের সবার সঙ্গেই দারুণ বোঝাপড়া। বিভিন্ন বিষয়ে ঝামেলার কারণে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ইব্রাহিমোভিচ এসি মিলানে ক্যারিয়ার শেষ করার ইচ্ছার কথা জানান। শেষ পর্যন্ত মিলান ছেড়ে নাম লেখান পিএসজিতে। প্যারিস ছেড়ে এখন তিনি ইংলিশভূমে। লীগ কাপের ট্রফি জয়ের পর প্রশংসায় ভাসছেন ইব্রা। এরপর তিনি বলেন, আমি এখানে (ওল্ডট্রাফোর্ড) কি এনেছি? আমি একটি প্যাকেজ এনেছি। অন্য ক্লাবগুলোতে খেলে আমি এখানে প্রচুর অভিজ্ঞতা এনেছি। আমার যত অর্জন সবই এনেছি। আমি একজন ব্যক্তিকে এনেছি, যা আমি নিজেই। ইব্রা আরও বলেন, আমি একটা পশু। আমি নিজেকে সিংহ মনে করি। একটা সিংহ জন্ম নেয় সিংহ হয়েই। এটার মানে আমি একটা সিংহ। নিজেকে আমি দারুণ উপভোগ করি। অনুশীলনে আমি কঠোর পরিশ্রম করি।
×