অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘শেখ হাসিনার দীক্ষা মানসম্মত শিক্ষা’ ও ‘রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশে উপবৃত্তি সারাদেশে’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা মায়েদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। যার মাধ্যমে এক কোটি মায়ের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যাবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ইতিহাসে এটি সর্ববৃহৎ লেনদেন।
বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ের ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে মাসিক একটি নির্দিষ্ট হারে উপবৃত্তি দিচ্ছে। টাকা দেয়া হয় শিক্ষার্থীর মাকে। এ জন্য মায়েদের নামে কার্ড ইস্যু করা হয়। প্রতিবার টাকা দেয়ার জন্য কোন এলাকার পাঁচ-ছয়টি স্কুলকে নিয়ে একটি বিতরণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়। নির্ধারিত দিনে ব্যাগে করে টাকা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে প্রশাসনের নজরদারিতে বিতরণ করেন। মায়েরা দূর-দূরান্ত থেকে নানা ভোগান্তি সহ্য করে এসে টাকা নিয়ে যান। যা পান তার অনেকটা খরচ হয়ে যায় আসা-যাওয়ায়। আয়োজনের বিড়ম্বনার জন্য প্রতিমাসে এ টাকা না দিয়ে কয়েক মাস পরপর দিয়ে আসছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
উপবৃত্তির টাকা নিতে এ ভোগান্তি দূর করতে উদ্যোগ নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত নেয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কাছে অর্থ পৌঁছে দেয়ার। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে রূপালী ব্যাংক। সরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস আছে শুধু এই ব্যাংকটিতেই।
কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় সুবিধাভোগী এক কোটি মায়ের হিসাব খোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুরের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। তাদের মোবাইল হিসাবে টাকা পাঠানোর মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি। পরের দিনেই আরও ৯১টি উপজেলার সুবিধাভোগীদের এ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যাবে। ক্রমান্বয়ে কয়েক দিনের মধ্যে বাকিদের হিসাবেও পৌঁছে যাবে উপবৃত্তির টাকা।
এই সর্ববৃহৎ ডিজিটাল লেনদেন প্রসঙ্গে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ আতাউর রহমান প্রধান বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য বিরাট সাফল্য। প্রধানমন্ত্রীর যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন তা এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকাংশেই পূরণ হবে। আমরা ধন্য এ ধরনের একটি প্রকল্পে সংযুক্ত হতে পেরে। বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রতিটি পদক্ষেপে রূপালী ব্যাংক এগিয়ে আসবে- বলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার।
জানা গেছে, শিওরক্যাশের মাধ্যমে রূপালী ব্যাংক আগে থেকেই নানা রকম জনকল্যাণমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চিনিকলের কাছে আখচাষীদের পাওনা পৌঁছানো।
পাশাপাশি চিনিকল থেকে দেয়া ঋণের অর্থও পৌঁছে যাচ্ছে কৃষকের রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ হিসাবে। এতে কৃষকরা মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাত থেকে যেমন রক্ষা পেয়েছেন, তেমনি সময় মতো পেয়ে যাচ্ছেন টাকা। আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ স্যোশাল সেফটি নেটের সকল ভাতা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই। এ জন্য সমাজসেবা অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছি। তারা আমাদের পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে একটি উপজেলায় কাজ করতে বলেছে। আশা করছি, সামনের দিনে আমরা সকল ভাতা সুবিধাভোগীদের মোবাইল হিসাবে পৌঁছে দিতে পারব।