ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে বাড়ছে মাদার ভেসেল

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সঙ্কটে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে বাড়ছে মাদার ভেসেল

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম থেকে ॥ লাইটারেজ শ্রমিক ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। ফলে সঙ্কটে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘটে বন্দর চ্যানেলসহ কর্ণফুলী নদীর ১৬ ঘাটে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। বন্দর চ্যানেলে ৬০টির বেশি লাইটার জাহাজ এবং বহির্নোঙরে ৩৫টির বেশি মাদার ভ্যাসেল বিপুল পরিমাণ পণ্য নিয়ে এখন অপেক্ষমাণ। অচলাবস্থা নিরসনে নৌপরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সোমবার রাতের মধ্যেই অচলাবস্থা নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট (ডব্লিউটিসি) সেল। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বন্দরের জাহাজ বার্থিং প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য, সরকার ঘোষিত বেতন ভাতা কার্যকর করার দাবিতে লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা এ ধর্মঘট শুরু করেছে। তবে ডব্লিউটিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, শ্রমিকদের বড় একটি অংশ এ ধর্মঘটে জড়িত। অপর একটি অংশ কাজ করছে। কিন্তু লাইটার শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানানো হয়েছে, দাবি আদায়ে সবাই তৎপর। কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে কোন কাজ হচ্ছে না। অর্থাৎ সবকটি লাইটার জাহাজ অচলাবস্থায় পণ্য খালাসে অপেক্ষমাণ। বন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে, লাইটার শ্রমিকদের বড় একটি অংশ ধর্মঘটে যাওয়ায় বহির্নোঙরে পণ্যবাহী মাদার ভেসেলের সংখ্যা বাড়ছে। ৩০টির বেশি লাইটার জাহাজ এখন অপেক্ষমাণ। তবে কিছু মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে। যেসব পণ্য অভ্যন্তরীণ রুটে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবাহিত হচ্ছে। বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, লাইটার শ্রমিক ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম বন্দরে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যেই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যেসব লাইটার জাহাজ ও মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে সেগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। শ্রমিকরা বলেছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট অব্যাহত রাখবে। সরকার তাদের জন্য বেতন ভাতা ঘোষণা করেছে। কিন্তু লাইটার জাহাজ মালিকরা তা মানছে না। যা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং অমানবিকও বটে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের হস্তক্ষেপের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বিষয়টি নিয়ে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের অসন্তোষ আরও বাড়ছে। লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের এক অংশের সাধারণ সম্পাদক নবী আলম জানিয়েছেন, জাহাজ মালিকদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ইতোপূর্বে কর্মবিরতি ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার থেকে শ্রমিকদের একটি অংশ কাজ বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকদের বড় একটি অংশ এ ধর্মঘটের সঙ্গে জড়িত। ধর্মঘটে যাওয়া লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের ঐ অংশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে সরকার ঘোষিত নতুন গ্যাজেট অনুযায়ী বর্ধিত বেতন ভাতা কার্যকর করার কথা থাকলেও লাইটার জাহাজ মালিকরা তা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া তাদের গত্যন্তর ছিল না। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার লাইটার জাহাজ চলাচল করে থাকে। লাইটার জাহাজের মালিকের সংখ্যা ৮ শতাধিক। সারাদেশে নৌরুটে প্রায় ৬ হাজার লাইটার জাহাজ চলাচল করে থাকে। যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দর দেশের বৃহত্তম বন্দর এবং এ বন্দরে বহির্বিশ্ব থেকে আমদানির অধিকাংশ পণ্য এসে থাকে। এতে করে লাইটার জাহাজের চলাচলের সংখ্যাও বেশি চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক। কর্ণফুলী নদীর ১৬ ঘাটে যেসব পণ্য খালাস হয়ে থাকে এসব পণ্যের বিরাট অংশ সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবাহিত হয়ে থাকে। ধর্মঘটের কারণে একদিকে নৌরুটে এবং অপরদিকে সড়কপথেও আমদানি পণ্যের সরবরাহ গত তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সবকটি গুদামে কোন ধরনের পণ্য ঢুকছে না। এর ফলে ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বহনকারী যানবাহনও সঙ্কটে পড়েছে। এদিকে সমুদ্রপথে চলাচলকারী ছোট বড় জাহাজ মালিকদের সূত্রে জানানো হয়েছে, পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে জাহাজের অবস্থান সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মালিকদের ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রমে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের আঘাত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যার পর যে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে এতে একটি সুফল আসতে পারে। তবে সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক শুরু হয়নি। তবে চট্টগ্রাম থেকে ধর্মঘট আহ্বানকারী লাইটার শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আলোচনার জন্য ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।
×