ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংক কি লজ্জিত হবে!

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিশ্বব্যাংক কি লজ্জিত হবে!

দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র এক কথায় খারিজ করে দিয়েছে কানাডার একটি আদালত। দীর্ঘ শুনানি শেষে গত শুক্রবার প্রদত্ত রায়ে আদালত এও বলেছে যে, এ বিষয়ে তদন্ত করে কানাডার পুলিশ যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সেটি ছিল অনুমাননির্ভর ও গুজবের ভিত্তিতে। একই সঙ্গে তথ্যভিত্তিক কোন প্রমাণ সেদেশের সরকারী পক্ষও ব্যর্থ হয়েছে উপস্থাপন করতে। যে ব্যক্তি পদ্মা সেতু প্রকল্পের টেন্ডারে বিড করেছেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে পেতে চেয়েছেন কাজটি, এমন একজন মাত্র ব্যক্তির টেলিফোনে আড়িপেতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কানাডার পুলিশ দাঁড় করিয়েছিল এই অভিযোগ। এহেন কাজের জন্য রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে ভর্ৎসনাও করেছে আদালত। মামলা খারিজ করে দেয়ায় মন্ট্রিয়লভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক দুই কর্মকর্তা ও এক বাংলাদেশী কানাডিয়ান ব্যবসায়ীকে খালাস দেয়া হয়েছে অভিযোগ থেকে। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল অবকাঠামোগত পদ্মা সেতু প্রকল্পে স্বল্পসুদে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার অঙ্গীকার ছিল বিশ্বব্যাংকের। তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১১ সালের ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ চুক্তি বাতিল করে দেয় সংস্থাটি। তখন বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করে বলেছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য আশঙ্কা ছিল ঘুষ লেনদেনের। তবে এ সম্পর্কে তারা কোন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবু বিশ্বব্যাংকের কথায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী, সচিবসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে আনা হয় দুর্নীতির অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন এ নিয়ে দীর্ঘ তদন্তও করে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীকে অপসারণ করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। সচিবসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত কিছুই প্রমাণিত হয়নি। অথচ ইতোমধ্যে জল কম ঘোলা হয়নি দেশে-বিদেশে। তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ধুয়া তুলে বিশ্বব্যাংক শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাংলাদেশের যে সমূহ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা-ই নয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি হয়েছে বিতর্কিত। যোগাযোগমন্ত্রীসহ গণমান্য কয়েক ব্যক্তি হয়েছেন কালিমালিপ্ত। বিস্তর জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত কানাডার আদালতে সেই অভিযোগ একেবারে নির্জলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্বব্যাংক ও এর সপক্ষের লোকজন অতঃপর কী বলবেন? আদৌ কী লজ্জায় তাদের মাথা হেট হবে? উল্লেখ্য, বাংলাদেশেরই স্বনামধন্য এক ব্যক্তি, মিডিয়ার একাংশ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সহায়তা নিয়ে বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ঋণ প্রত্যাহারের ব্যাপারে প্রভাবিত করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। কানাডার আদালতে মামলাটি খারিজ হওয়ার পর বিলম্বে হলেও সেই সত্য উন্মোচিত হলো। অথচ ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েছে একতরফাভাবে বাংলাদেশের। একদিকে দেশের ভাবমূর্তির সঙ্কট, অন্যদিকে অনিবার্য প্রকল্প ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি। বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়ায় জাইকা, এডিবি, আইডিবিও পাশে থাকেনি বাংলাদেশের। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও উদ্যোগে বাংলাদেশ স্বউদ্যোগে চীন ও ভারতের সহায়তায় নির্মাণ করছে বহু আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ইতোমধ্যে এর ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর এর দিকে নিশ্চয়ই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়েছে বিশ্বব্যাংকসহ কলকাঠির পেছনের কুশীলবরা।
×