ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ধানের অভাবে চাল কল বন্ধের পথে

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঠাকুরগাঁওয়ে ধানের অভাবে চাল কল বন্ধের পথে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৩ ফেব্রুয়ারি ॥ চলতি আমন চাল সংগ্রহ মৌসুমে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ কম দেয়ায় জেলার প্রায় ১ হাজার ৭০০ চাল কল প্রয়োজনীয় পরিমাণ ধানের অভাবে বন্ধ হওয়ার মুখে পড়েছে। আর এর সঙ্গে জড়িত মৌসুমি শ্রমিক, দিনমজুরের হাতে কাজ না থাকায় তারা এখন কর্মহীন দিন কাটছে। চলতি আমন ধান চাল সংগ্রহ অভিযান সফল করার লক্ষ্যে উলে খিত সংখ্যক চাল কলগুলো ৩৩ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহের জন্য গত ডিসেম্বরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে চুক্তি করে এবং ২০ ডিসেম্বর থেকে জেলায় চাল সংগ্রহ শুরু করলেও ধান কেনা বন্ধ রাখে। জেলা খাদ্য অধিদফতর জানায়, চলতি আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা প্রথম দফায় ১৪ হাজার ৬৮৫ মেট্টিক টন এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯ হাজার ৭০৮ মেট্টিক টন নির্ধারণ করে। এর মধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অন্যান্য মিলগুলোকে চাল তৈরির জন্য বরাদ্দ দিয়ে ১০টি অটোমেটিক চাল কলকে বরাদ্দ দেয়। অতি পুরাতন হাস্কিং মিলগুলোর তুলনায় অটোমেটিক চাল কলগুলোর চাল তৈরি করার ক্ষমতা কয়েকগুণ বেশি। তাই অটোমেটিক মিলগুলো সমস্ত জেলায় যে পরিমাণ ধান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা হাতির মতো গিলে ফেলছে এবং জেলার ১ হাজার ৭৮০টি হাস্কিং মিল অটোমেটিক কলগুলোর সঙ্গে চাল তৈরির প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হয়ে এখন মিলে চাল উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। সঙ্গে শত শত মৌসুমি শ্রমিক, দিনমজুর কর্মহীন হয়ে পড়েছে। জানা যায়, চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১৪ হাজার ১৮৬ মেট্টিক টন চাল ১২টি ক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৭২ ভাগ ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। সংগ্রহ অভিযান আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন। জেলায় খাদ্য শস্য সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা প্রায় ৪২ হাজার মেট্টিক টন। এখন মজুদের পরিমাণ মাত্র ১৯ হাজার মেট্টিক টন। অথচ গত বছর জেলার গুদামগুলোতে এ সময় ৫২ হাজার মেট্টিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। গত বছর পরিবহন সঙ্কট সংরক্ষণ সমস্যা, বস্তা সঙ্কটের কারণে ধান, চাল সংগ্রহের মৌসুমের শুরুতে জেলা খাদ্য বিভাগ বড় ধরনের হোঁচট খায় এবং হাটবাজারে ধানের ক্রেতা না থাকায় ধানের দাম হ্রাস পায়। কৃষক উৎপাদকরা ধান আবাদ করে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে। আরও জানা যায়, চলতি মৌসুমে পরবর্তীতে আরও ৩ হাজার মেট্টিক টন বরাদ্দ দিলেও হাস্কিং মিল মালিকরা তা গ্রহণে আপত্তি তোলে। তাদের কথা হলো, ইতোমধ্যে জেলার হাটবাজারগুলোতে ধানের দাম মণপ্রতি ৮০০ টাকার ওপরে বেচাকেনা হচ্ছে। তাছাড়া কৃষক, উৎপাদকের ঘরে বর্তমানে ধান নেই। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যে প্রান্তিক চাষীরা ধান বিক্রি করে ৭০০ টাকা মণ দরে এবং রবি ফসল আবাদের জন্য উপকরণ সংগ্রহ করে। কম দামে ধান ক্রয় করে ফায়দা লুটছে ব্যবসায়ীসহ এক শ্রেণীর রাজনৈতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। চালের দামও দিন দিন বেড়ে চলেছে। সাধারণ চাল এখন প্রতি কেজি ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একজন চাল ব্যাপারী জানান, প্রতিবেশী দেশ হতে এলসির মাধ্যমে ব্যাপারী, মহাজনরাও চাল আমদানিতে নামেনি। কারণ, সরকার প্রতি কেজি চালে ২ টাকা করে ভ্যাট চার্জ বসিয়েছে। ধানের ঘাটতি হওয়ার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে তা হচ্ছে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মারাত্মক বন্যায় ফসলের ক্ষতি। এই ক্ষতির কারণে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্যশস্যে উদ্বৃৃত্ত হওয়া সত্ত্বেও এবার চালের দাম উর্ধগতি ও সঙ্কট চলছে।
×