ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা

বিক্রির চাপ কমলেও লেনদেনের গতি কম

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিক্রির চাপ কমলেও লেনদেনের গতি কম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ কমে এসেছে। বিশেষ করে মুদ্রানীতি ঘোষণার পরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তোলার জন্য যে তাড়াহুড়ো ছিল, সেটি গত সপ্তাহে আর দেখা যায়নি। তবে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থানের কারণে লেনদেন খুব বেশি বাড়েনি। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধরে রাখার প্রবণতার কারণে আলোচ্য সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জেও সব ধরনের সূচকই বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গত সপ্তাহে পুুঁজিবাজারে আলোচিত ঘটনার মধ্যে ছিল মার্জিন ঋণধারীদের ঋণাত্মক হিসাবে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ আরও ছয় মাস বাড়ানো। মার্জিন রুলসের বিধান অনুযায়ী আগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সময় ৩১ জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের অনুরোধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় থাকছে এমন আশাবাদেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার। যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৪ হাজার ৭৯৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার। সেই হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ১১০ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ২৩.১৪ শতাংশ। সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ১৪৭.৩৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই ৩০ সূচক বেড়েছে ২.৩২ শতাংশ বা ৪৫.৪৭ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরীয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ২.৪০ শতাংশ বা ৩০.১৪ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৭৭টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির। আর লেনদেন হয়নি ২টি কোম্পানির শেয়ার। ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ওষুধ-রসায়ন খাত। আলোচিত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশ অবদান রয়েছে এই খাতে। সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে এই খাতে প্রতিদিন ১২৭ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক ও প্রকৌশল খাতে ১৫ শতাংশ লেনদেন করে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ব্যাংক খাতে প্রতিদিন ১১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর প্রকৌশল খাতে ১১০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বস্ত্র খাতে ১৩ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এই খাতে প্রতিদিন ৯৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে আর্থিক খাতে ১০ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে ৮ শতাংশ, বিবিধ খাতে ৫ শতাংশ, সেবা-আবাসন খাতে ৪ শতাংশ, সিমেন্ট, সিরামিক ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ২ শতাংশ করে লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৫ দশমিক ৮১ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৫ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। বিশ্লেষকদের মতে, পিই রেশিও যতদিন ১৫ এর ঘরে থাকে ততদিন বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। সপ্তাহ শেষে খাতভিত্তিক ট্রেইলিং পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ৯.৪ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ৩০ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২৩.৯ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ২২.৩ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২৮.২ পয়েন্টে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১৩.৬ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে ১৫.৭ পয়েন্টে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২৬.১ পয়েন্টে। এছাড়া পাট খাতের পিই রেশিও মাইনাস ১৬ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ৩০.৮ পয়েন্টে, এনবিএফআই খাতে ৩০.৮ পয়েন্ট, কাগজ খাতের মাইনাস ১১১.৭ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৯ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ২২.৫ পয়েন্টে, চামড়া খাতের ২৩.৬ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৯.৫ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ২৩.৮ পয়েন্টে এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২০.৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ২৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার। তবে সার্বিক সূচক বেড়েছে ২.৬৬ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ২৮৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২২৪টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ৫২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির।
×