ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী উদ্যোক্তাদের মেলা

বসন্ত আর ভালবাসা দিবস বরণে জমজমাট আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বসন্ত আর ভালবাসা দিবস বরণে জমজমাট আয়োজন

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ আর মাত্র কয়েকদিন পর পয়লা ফাল্গুন। ঠিক তার পরের দিন ভালবাসা দিবস। উৎসবের এই দু’দিন সামনে রেখে নারীরা এখন ব্যস্ত কেনাকাটায়। পয়লা ফাল্গুনের জন্য হলুদ, সবুজ কিংবা বাসন্তী রঙের পোশাক। এবং ভালবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রঙের আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া ডিজাইনের পোশাক নিয়ে হাজির বিক্রেতারা। ক্রেতারাও তাদের পছন্দের রঙের পোশাক কিনতে ঘুরছেন বিভিন্ন মার্কেটে। পয়লা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও শুরু হলো ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত মেলা। ঢাকা বিজনেস এ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাব প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। বেইলি রোড সংলগ্ন এ ক্লাব প্রাঙ্গণের গেটে লেখা ‘মেলা, মেলা, মেলা’। তাই রাস্তার অনেক পথচারী ক্রেতাই মেলার পণ্য দেখতে ঢুঁ মারছেন। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। আর যথারীতি বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের পণ্য কিনছেন ক্রেতা নারীরা। রঙিন শামিয়ানার নিচে চারদিকে টেবিল পেতে বিকিকিনি চলছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মেলার পঞ্চম দিন ছিল রবিবার। বিকিকিনি চলবে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলায় বেচাকেনা চলছে। বেইলি রোড সংলগ্ন ঢাকা বিজনেস এ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়েজিত এ মেলায় রবিবার দুপুরে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেল, বিশটির মতো দোকান নিয়ে নারী উদ্যোক্তারা বসেছেন। বিভিন্ন বুটিকস থ্রি পিস, হাতের কাজের জামা, চাদর, ব্যাগ, জুয়েলারি, জুতা, আচার, পিঠাসহ হরেক রকম পণ্যের দেখা মিলছে এখানে। রঙিন প্লাস্টিক পুঁতি দিয়ে তৈরি ট্রে, টিস্যু বক্স, ফুলদানি, ব্যাগ দিয়ে দোকান সাজিয়েছেন শাহানা আক্তার। তিনি বললেন, ‘প্লাস্টিক পুঁতির সৌখিন জিনিস তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছি আমি। তারপর অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে কাজ শিখিয়েছি। ক্রেতারা এ জাতীয় পণ্যের কদর করে। সৌখিন ও গৃহস্থালি এ পণ্যগুলোর দাম ৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। তার স্টলে আরও পাওয়া যাচ্ছে কানের দুল, হাতের আংটি, চুড়ি, গলার মালাসহ বিভিন্ন গয়না। বললেন, ‘ইস্টার্ন প্লাজায় ‘উন্মেষ’ নামে আমাদের ১০ নারী উদ্যোক্তার একটি দোকান আছে। সেখানেই মূলত আমরা এসব জুয়েলারি ও গৃহস্থালি সৌখিন পণ্য বিক্রি করি।’ ‘সাতরঙ’-এর নারী উদ্যোক্তা নাসিমা আক্তার মেয়েদের বাহারি পোশাক নিয়ে বসেছেন। এবারই তিনি প্রথম এ মেলায় অংশ নিলেন। তিনি জানালেন, ‘এবারই প্রথম মেলায় অংশ নিলাম। অন্যান্য নারী উদ্যোক্তাকে দেখে, খুব ভাল লাগছে। ভাল বেচাকেনা হচ্ছে।’ রাজধানীর ওয়ারীতে ‘সাতরঙ’ নামক একটি ফ্যাশন হাউস আছে তার। নিজ উদ্যোগেই তিনি এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েক বছর ধরে। সুঁই-সুতার কাজ, বাটিক আর আয়না বসানো জামা ৭০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে নাসিমা আক্তারের স্টলে। ‘সেলেনা বুটিকস’ স্টলে রয়েছে বাহারি রঙের হাতের কাজ করা থ্রি পিস, আরও আছে ওয়ান পিস। পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে হলুদ, সবুজ ও বাসন্তী রঙের বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ করা পোশাক বিক্রি করছেন সেলেনা আলী। তিনি বললেন, ‘পয়লা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবসে ক্রেতারা যেসব রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন, সেসব রঙই প্রাধান্য দিয়েছি। ক্রেতারা পছন্দ করছেন এসব ডিজাইন ও রঙগুলো’। হাতের কাজের এসব থ্রি পিসের চাহিদা অনেক সেজন্য রাজশাহী ও যশোর থেকে অর্ডার দিয়ে এসব পোশাকে হাতের কাজ করিয়ে নিয়ে আনেন বলে জানালেন সেলেনা। তার দোকানে ওয়ান পিসগুলো পাওয়া যাচ্ছে ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে আর অধিকাংশ থ্রি পিসের দাম ২০০০-৪০০০ টাকা। মেলায় যথারীতি ক্রেতা সমাগম আছে। সেলেনা বুটিকসে থ্রি পিস কিনতে আসা তাহমিদা নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘আমার বাসা সিদ্ধেশ্বরীতেই। এখানে মেলা হচ্ছে শুনেই চলে এলাম। সামনে পয়লা ফাল্গুন সঙ্গে আবার ভালবাসা দিবস। এখন সবাই এ দুটি দিনকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করে। তাই এ উৎসব দুটি সামনে রেখে একটু কেনাকেটা করতেই হয় প্রতিবছর। এবারই এ মেলায় প্রথমবারের মতো আসলাম। নারী উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানাই তাদের এ প্রয়াসে। ঘরোয়া পরিবেশে সব চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এখানে।’ এ দোকানের পাশেই ফাহিমার জুয়েলারি দোকান। বিভিন্ন ঝুমকা দুল, গলার মালাসহ আনুসঙ্গিক সব ধরনের জুয়েলারির সমারোহ এখানে। নারী ক্রেতাদের আগ্রহ জুয়েলারিতেই বলে জানালেন তিনি। ‘যে কোন নারী ক্রেতারা জুয়েলারি দোকানে ঢুঁ মারবেই। বেচাকেনা খুবই ভাল হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে জুয়েলারি রেখেছি আমার দোকানে।’ মেলা উপলক্ষে মূল্যহ্রাসও চলছে। ‘রঙিন সুতা’ তাদের বিভিন্ন মূল্যের পোশাকে ছাড় দিচ্ছেন। বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, থ্রি পিস বিকিকিনি চলছে এ স্টলে। এ স্টলটিতে শাড়ি দেখছেন লুনা আফরোজ নামে এক ক্রেতা। তিনি বললেন, ‘বেশ ভাল ডিজাইনের পোশাক দেখছি এখানে। আবার দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যে। এছাড়া ‘রঙিন সুতা’ ছাড়ও দিচ্ছে। তাই এখান থেকে শনিবার দুটি থ্রি পিস কিনেছি। আবার এলাম পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে শাড়ি কিনতে।’ দোকানি বললেন, ‘কিছুটা ছাড় দিচ্ছি প্রতিটি পোশাকের উপর। বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর। আমি এর আগেও দুই বার এ মেলায় অংশ নিয়েছি।’ কথা হলো মেলার আয়োজকদের একজন ফারহানা আফরোজের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘নিয়মিত এ মেলার আয়োজন করা হয়। ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ীরা এ মেলায় অংশগ্রহণ করেন। কিছুদিন পরেই পয়লা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস। এ উপলক্ষ সামনে রেখে এবারের মেলা শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে। চলবে ৭ তারিখ পর্যন্ত। এরপর আবার বেইলি রোড সংলগ্ন মহিলা সমিতি প্রাঙ্গণে এ মেলা শুরু হবে। সেখানেও মেলা চলবে কয়েকদিন।’ তিনি জানান, ‘নতুন ব্যবসায়ীদের প্রচারে এই মেলাগুলো সাহায্য করে। তবে নারী আয়োজক হিসেবে মেলার স্থানের বরাদ্দ পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।’
×