ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যযুগীয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মধ্যযুগীয়

দুটি ঘটনা দু’জায়গার, তবু এর ভেতর একটি মিল রয়েছে। সেটি হলো মানুষের মনে এখনও মধ্যযুগীয় বিবেকহীনতা ও নিষ্ঠুরতা কাজ করে থাকে। সমাজের এ জাতীয় ছবি ও সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জনমনে ঝড় ওঠে। এখন ফেসবুকের যুগ। মানুষ ফেসবুকের কল্যাণে নিজস্ব জোরালো মত তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশের সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। যেমন করেছে চাঁদপুরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে হাত রেখে বানানো প্রতীকী পদ্মা সেতুতে শোয়া আরেক ছাত্রের পিঠে চড়ার ঘটনায়। জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেশ ক’জন ক্ষুব্ধ ফেসবুকারের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া ছাপা হয়েছে। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটোয়ারীর কা-জ্ঞান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার বহু আগে থেকেই কিশোরদের ক্রীড়ার একটি অংশ হয়ে উঠেছে মানব সাঁকো বানিয়ে তার ওপর দিয়ে মানবেরই পার হওয়ার বিষয়টি। এতে অবশ্য শিশু-কিশোরদের পিঠের ওপর প্রাপ্তবয়স্করা সওয়ার হন না। আবার এটি রিচুয়ালও হয়ে উঠেছে কোন কোন জায়গায় নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু আগে কিংবা অব্যবহিত পরে। সমালোচিত জনপ্রতিনিধির পক্ষে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবশ্য একটি সাফাই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রদের জোরাজুরিতেই ওই উপজেলা চেয়ারম্যান কাজটি করেন। কথা হচ্ছে ছাত্ররা একটি ছেলেমানুষী আবদার করলে সেটা শুনতে হবে! দৃশ্যটি এতটা অনভিপ্রেত যে তা দেখে যে কোন সুস্থ ব্যক্তিরই খারাপ লাগবে। সমাজে এখনও এমন মানুষও রয়েছেন যাদের কাছে এ ধরনের কাজ খুবই স্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে! সেটাই বিস্ময়ের এবং একইসঙ্গে দুশ্চিন্তার। মানুষের শিক্ষা, রুচি, মূল্যবোধ বিবেচনাবোধ কতটা অধঃপতিত হলে সমাজে এ ধরনের দৃশ্যের অবতারণা হতে পারে? শিশুদের পিঠের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া শুধু শিশু নির্যাতন নয়, তাদের মাথানত করা, অপমান সহ্য করার অপশিক্ষাও। সবার আগে ধিক্কার জানানো চাই সেসব শিক্ষককে যারা এসব শেখাচ্ছেন। পুলিশের নির্দয়তার শত হাজার কাহিনী সমাজে চালু আছে। তার সঙ্গে যোগ হলো আরেকটি চরম নিষ্ঠুরতার গল্প। ফরিদপুরের বাঁশাগাড়ি গ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে তাস খেলার আড্ডার মাঝে পুলিশের হানা দেয়ার জের হিসেবে পালাতে গিয়ে পানিতে পড়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ তাকে লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেয়। পরের দিন গ্রামবাসী পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের কাছ থেকে এমন আচরণ মানুষ আশা করে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে এটাও সত্য সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। ফরিদপুরের ঘটনা পুলিশের ভাবমূর্তিকে আরও ম্লান করে তুলবে। পুলিশের শুভবুদ্ধি হোক, মধ্যযুগীয় মানসিকতা থেকে তারা মুক্ত হোকÑ এটাই প্রত্যাশা।
×