ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

নারী জঙ্গীবাদ ॥ সমস্যা ও প্রতিকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নারী জঙ্গীবাদ ॥ সমস্যা ও প্রতিকার

জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক অপরাধ, সহিংস অপরাধ ইত্যাদি প্রপঞ্চের সঙ্গে সৃষ্টির শুরু থেকে পুরুষরা জড়িত রয়েছে এবং এখনও তারাই বেশি পরিমাণে জড়িত থাকেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে, বিশ্বায়নের যুগে, আধুনিক প্রযুক্তির বিকর্ষতায় পুরুষের ন্যায় নারীরাও জঙ্গীবাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষত; ২০০১-০৫ সালের শাসনামলে দেশব্যাপী জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিস্তৃতি সমগ্র দেশের মানুষকে ভয়াবহতার মুখোমুখি করেছিল। ঐ সময়টার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লোকজন দিনাতিপাত করছেন, বহন করে চলেছেন সীমাহীন অত্যাচারের চিহ্ন। সে সময়ে আমরা দেখেছি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ, জেএমবি, নিষিদ্ধ জঙ্গীগোষ্ঠীসহ আরও কিছু উগ্রপন্থী দল পার্টি জেলা শাখা এবং থানা শাখায় নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে নীরবে নিভৃতে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পুরুষের আড়ালে নারীদের খবরাখবর সংবাদ মাধ্যমে তেমন আসত না, যে ইস্যুটি নারী জঙ্গীবাদের বিস্তারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশে হঠাৎ হঠাৎ জঙ্গী আক্রমণের হোতা হিসেবে নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ বাঙালী নারীর ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে চরম হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। প্রশ্ন হতে পারে নারীরা কেন জঙ্গীবাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এর যথাযথ উত্তর কয়েকভাবে দেওয়া যেতে পারে। প্রথমত: সাধারণত জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নারীরাও জঙ্গীবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। দ্বিতীয়ত: ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং অনুশাসনকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা। অস্থিমজ্জায় ভুল চিন্তা বপিত হয়ে থাকে নারীদের। তৃতীয়ত : বাস্তব চিন্তার বাইরে থেকে দ্রুত গতিতে চলমান অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে আসার প্রচেষ্টা করা হয়ে থাকে। চতুর্থত : হতাশা, বেকারত্ব, পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গীবাদের সঙ্গে। পঞ্চমত: আর্থিক প্ররোচনা, সঙ্গীদের সান্নিধ্য এবং পরিবেশিক কৌশলে অনেক মেয়েরাই ধ্বংসাত্মক কার্যাকলাপের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন প্রায়শই। শেষত: গ্ল্বোালাইজেশন, মানি লন্ডারিং, জঙ্গীবাদের প্ররোচনার বিভিন্ন ধরনের এজেন্সি কর্তৃক আর্থিক সাহায্য এবং প্রশিক্ষণের সুযোগের কারণে নারীরা জঙ্গীবাদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ছেন। জঙ্গীবাদের সমস্যাটি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিশ্ব পরিম-লে বিকশিত হয়েছে। এর ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা বর্তমানে শিশু এবং নারীদের জীবনের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ, অপরাধ ত্বরান্বিত হওয়া, শিক্ষার মান নেমে আসা ইত্যাদি সেক্টরগুলোতে প্রভাব ফেলে থাকে জঙ্গীবাদ নামক ভয়াবহ ইস্যুটি। তাই সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করার পূর্বেই সমূলে নিপাট করা উচিত। আর এ সমস্যার সমাধানের জন্য বহুমুখী প্রক্রিয়ায় নীতি প্রণয়ন করা উচিত। ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ায় সমস্যাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা, মানুষের মৌলিক প্রয়োজন এবং অন্যান্য বিষয়াদি যেগুলো সহিংস আচরণের জন্য মানুষকে প্রলুব্ধ করে থাকে সেগুলোর বিনাশকল্পে জরুরী ভিত্তিতে বিষটাকে সরিয়ে ফেলতে হবে যাতে করে এর বিষক্রিয়া চতুর্দিকে ছড়িয়ে না পড়ে। পুরুষ জঙ্গীদের তুলনায় নারী জঙ্গীরা অপরাধের বিস্তার এবং ভয়াবহতার জন্য পূর্ণাঙ্গ নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ, সন্তান জন্মদান লালন-পালন এবং শিক্ষাদানের সঙ্গে মায়েরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন। তাই ছেলেমেয়েদের নিয়ন্ত্রণ কিংবা পরিচালিত করার সক্ষমতা বাবার তুলনায় মায়ের বেশি থাকে। আর সেই মা যদি জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সন্তানদের বেশি পরিমাণে জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায়শই। বোঝা যাচ্ছে, নারী জঙ্গীরা কার্যকারিতা সাপেক্ষে পুরুষের তুলনায় মারত্মক বিপজ্জনক। এ সকল জঙ্গীরা নারী পাচার, মানি লন্ডারিং এবং পুরুষদের বিভিন্ন প্ররোচনায় সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। সুতরাং বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়ে সমূলে উৎপাটনের জন্য সেক্টর বিশেষে ব্যবস্থা নিতে হবে সবার স্বার্থেই।
×