ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতৃভাষা আন্দোলনের ওপর আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা আর আলতাফ মাহমুদের সুর করা কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ -কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়ে বেদনা জাগায়। অমর এ গানটি কোটি কোটি বাঙালীর মনের বিরাট ংশজুড়ে জায়গা নিয়ে আছে। গানটি শুনলেই কোটি কোটি মানুষের বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে সেদিনের সেই বর্বর পাকিস্তানীদের অত্যাচার আর নির্যাতনের ভয়াবহতার কথা। স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে ভাইয়ের রক্ত, ছেলেহারা মায়ের অশ্রুসিক্ত চোখ। যুগ যুগ ধরে বাঙালীর হৃদয়ে ভাষা আন্দোলন আর একুশের চেতনাকে জাগ্রত করে রেখেছে কালজয়ী এ গানটি। আজ ২ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে জোড়ালো আন্দোলন। প্রতিটি দিনেই ছিল ছাত্র-জনতার নানা কর্মসূচী। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ কেন্দ্র করে এদিন চলছিল প্রচার। সবার তখন একটা দাবিÑ বাংলাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। মাতৃভাষা আন্দোলনের শুরুটা ১৯৪৭ সালের পর থেকেই। পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই পূর্ববাংলার মানুষ বঞ্চিত ও শোষিত হয়ে আসছিল। পাকিস্তান কৌশলে বাঙালী জনগোষ্ঠীর ভাষার ওপর প্রথম আঘাত হানে। মায়ের ভাষায় কথা বলাও তারা বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিন্তু বাংলার মানুষ সেই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে একবিন্দু পিছু হটেনি। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে প্রতিদিন রাজপথে চলতে থাকে মিছিল সমাবেশ। শুরু হয় বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলন। মায়ের মুখের ভাষাকে কেড়ে নিয়ে তারা রাষ্ট্রভাষা উর্দু করতে চেয়েছিল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনেক চড়াই উতরাই পার করে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। তার আগের দিনগুলো ছিল পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতনের। ১৯৫২ সালের অগ্নিঝরা দিনগুলো বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষা আন্দোলনের সেই স্মরণীয় দিন আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের কাছে কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালী; রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশে দেশে পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্য বিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। এখন তাই শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং বিশ্ববাসীও বাংলা ভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।
×