ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনের করমজল প্রজনন কেন্দ্র থেকে ৫৫ কুমির ছানা উধাও

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সুন্দরবনের করমজল প্রজনন কেন্দ্র থেকে ৫৫ কুমির ছানা উধাও

নিজস্ব সংবাদদাতা, মংলা, ১ ফেব্রুয়ারি ॥ সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে ৫৫ কুমিরের ছানা উধাও হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে বন বিভাগ এ ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। বরং তারা সুন্দরবনের এই বড় সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিচ্ছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়সারা চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৯ জানুয়ারি ভোর থেকে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে থেকে ৫৫ কুমিরের ছানা শিয়ালে নিয়ে গেছে বলে তারা শুনেছেন। পরে তারা ব্যাপারটা দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি তাদের শিয়ালে কুমিরের ছানা নিয়ে গেছে বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সূত্রটি আরও বলেন, শিয়াল কিভাবে একরাতে অতগুলো কুমিরের ছানা খাবে। তাছাড়া করমজলেত শিয়ালের আনাগোনা নেই। এছাড়া শিয়ালে কুমিরের ছানা নিলে তো কোন চিহ্ন থাকবে। সেটা পাওয়া যায়নি। তারা ধারণা করছেন কুমিরের ছানাগুলোকে মোটা অর্থের বিনিময়ে পাচার করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা জানতে একাধিকবার সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তার মেহেদি জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে এড়িয়ে যান। অনেক কষ্টে পাওয়া যায় করমজলের কর্মকর্তা তহিদুল ইসলামকে। তার কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএফও স্যার মঙ্গলবার এ ব্যাপারে করমজলে এসেছেন। এটা বন্য প্রাণী দ্বারা হত্যা বা নাশকতা হতে পারে তারা প্রাথমিক ধারণা করছেন। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারী এ কুমির প্রজনন কেন্দ্র। বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি। শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রে মিঠা পানির দুটি নারী কুমির, নোনা পানির দুটি নারী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও রয়েছে। কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আবদুর রব জানান, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু লবণ পানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এই কেন্দ্র থেকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে শতাধিক কুমির অবমুক্ত করার পর বর্তমান কেন্দ্রে কুমিরের সংখ্যা ২৭৭টি।
×