ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসার ত্রুটিপূর্ণ কাজে চট্টগ্রামে পাঁচ শ’ পয়েন্টে লিকেজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ওয়াসার ত্রুটিপূর্ণ কাজে চট্টগ্রামে পাঁচ শ’ পয়েন্টে লিকেজ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ত্রুটিপূর্ণ কাজ করে ওয়াসা নগরীর সড়কগুলোকে খানাখন্দে পরিণত করছে। উন্নয়নের নামে ওয়াসার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লুটতরাজের কারণেই গত তিন মাস ধরে ভোগান্তির শিকার নগরবাসী। গত ১ নবেম্বর নিম্নœমানের কাজ করার মধ্য দিয়ে রাঙ্গুনীয়ার ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে চালু করায় ৫ শতাধিক পয়েন্টে লিকেজ দেখা দিয়েছে। খানাখন্দে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার যানবাহন। এদিকে, ওয়াসা এ লিকেজকে পুরাতন লাইনের সমস্যা হিসাবে দেখালেও মূলত নতুন লাইনের সংস্থাপনে নিম্নœানের কাজ করার বিষয়টি উল্লেখ করেছে নগরবাসী। নগরীর আনাচে কানাচে থাকা পুরাতন লাইন ছাড়াও ডিটি রোডে স্থাপনকৃত মেইন লাইনেও বড় ধরনের লিকেজ দেখা দিয়েছে। ফলে গত তিন মাস ধরে সড়কের উপর দিয়ে গড়াচ্ছে ওয়াসার পানি। ২০১২ সালে চউক দেওয়ানহাট থেকে অলঙ্কার মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে। ওয়াসার লিকেজের কারণে প্রায় ৬০/৭০ ফুট প্রশস্ত এ সড়কের বেশিরভাগ অংশই খানাখন্দে ভরা। ২০টিরও বেশি স্পটে দুই থেকে আড়াই ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে পাইপ লাইন থেকে নির্গত পানির কারণে। অভিযোগ রয়েছে, গত ৫ বছরে চউকের উন্নয়নে নগরীর মূল সড়কগুলো দেড় থেকে দ্বিগুণ চওড়া হয়েছে। উন্নয়নের এ ধারাকে ওয়াসা পানি প্রকল্পের উন্নয়ন দেখাতে গিয়ে পুরো নগরীকে খানাখন্দে পরিণত করেছে। নতুনভাবে লাইন স্থাপন করায় একদিকে সড়ক কেটে চৌচির করেছে ওয়াসা। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ওয়াসা একদিকে আবাসিক ও অনাবাসিক সংযোগের জন্য সড়ক কেটে যেমন উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাঙ্গুনীয়া থেকে সীতাকু- পর্যন্ত ওয়াসার পানি সরবরাহের চিন্তা ভাবনা করছে। এতে ওয়াসার এমন উন্নয়নে উপজেলা পর্যায়ে যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি মহানগরীও বাদ পড়েনি। ওয়াসার এ পানি প্রকল্পের উন্নয়নের নামে সীতাকু-ু পর্যন্ত অগ্রগামী হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ওয়াসা জাইকার ও সরকারী অর্থায়নে কাজ করলেও উন্নয়নের নামে দুর্নীতির দুয়ার খুলে বসেছে। অসৎ উদ্দেশ্যে নিম্নœমানের অদক্ষ শ্রমিক ব্যবহার করে ও সংস্কারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিও ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় ওয়াসার উন্নয়ন প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ওয়াসার পক্ষ থেকে পানির আবাসিক গড় বিল ১৭৮ টাকা থেকে ৫৯৬ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ন্যূনতম বিল দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল তিনভাগের একভাগ। এদিকে, পানি না যাওয়ার পরও কিছু কিছু এলাকায় অতিরিক্ত বিল চাপিয়ে দেয়ার কারণে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক ওয়াসার রাজস্ব বিভাগে ধর্ণা দিচ্ছে। রাজস্ব বিভাগে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ দিতে গিয়ে গ্রাহকরা বিলিং শাখায় হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকরা পুরাতন ও নতুন বিল নিয়ে গেলেও তা না দেখেই কর্তৃপক্ষ ছাপানো অভিযোগের ছকে গ্রাহকের নাম, হিসাব নং, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও অভিযোগের বিষয় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তদন্তের আশ্বাসে অভিযোগকারীদের ফেরত পাঠাচ্ছে। আদৌ এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত হবে কিনা তা নিয়ে গ্রাহকরা সন্দিহান। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, কিছু কিছু এলাকায় এখনও পানি যাচ্ছে না। ফলে ওইসব এলাকার গড়বিল পুরাতন নিয়মেই নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শীঘ্রই পুনরায় সংস্কারের মাধ্যমে এর সমাধান করা হবে। এ ব্যাপারে চউকের এক প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, মাত্র চার বছরের উন্নয়নে সড়কগুলোর বিপুল পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু ওয়াসা মেইন লাইন ও শাখা লাইন স্থাপন করতে গিয়ে চউকের উন্নয়নকে ধূলিসাৎ করেছে। কোটি কোটি টাকার সড়ক সংস্কার ওয়াসার উন্নয়নের পানিতে ভেসে যাচ্ছে। জনদুর্ভোগে আরও কত বছর নগরবাসীকে থাকতে হয় তা এখন প্রশ্নের বিষয় ওয়াসার কাছে।
×