ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসএসএফ ইন্টারন্যাশনাল আরচারিতে ৬ স্বর্ণ, ১ রৌপ্য ও ২ তাম্রপদক জিতে স্বাগতিক বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন

এককে হীরা মনির স্বর্ণ সাফল্য

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

এককে হীরা মনির স্বর্ণ সাফল্য

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কথা দিয়ে কথা রাখল লাল-সবুজরা। আশা ছিল নয়টির মধ্যে কমপক্ষে ছয়টি স্বর্ণপদক। সোমবার ছিল আইএসএসএফ ইন্টারন্যাশনাল আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের শেষদিন। স্বাগতিক বাংলাদেশ এদিন স্বর্ণ জেতে ৬টি। এছাড়াও তারা আরও জেতে ১ রৌপ্য এবং ২ তাম্রপদক। ১৪ জাতির এই আরচারি আসরে সবমিলিয়ে পদক তালিকায় চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। সোমবার বাংলাদেশ মোট ৬টি পদক জেতে। পাঁচটি দলগত, একটি একক। একমাত্র একক স্বর্ণপদকটি যার, তিনি হীরা মনি। হীরার টুকরো হীরা মনি মেয়েদের রিকার্ড ডিভিশনের ফাইনালে আজারবাইজানের প্রতিযোগী রামোজামোভাকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারান। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটাই তার প্রথম স্বর্ণজয়। স্বর্ণপদক জেতার পর আরচার হীরা তার প্রতিক্রিয়ার জানান, ‘জাতীয় পর্যায়ে এর আগে রূপা জেতা ছিল আমার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। এসএ গেমসেও খেলেছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোন সাফল্য ছিল না। এটাই প্রথম সাফল্য। দারুণ লাগছে। দেশের জন্য কিছু করতে পারায় ভাল লাগাটা আরও বেশি।’ বিদেশের মাটিতেও লাল সবুজের পতাকা ওড়াতে চান তিনি, ‘বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য যদি কিছু করতে পারি, সেটাই এখন আমার লক্ষ্য। এই সাফল্য পরবর্তী টুর্নামেন্টের জন্য আমার আত্মবিশ্বাস অবশ্যই বাড়াবে। এটা পাওয়ার পর আমার মনের মধ্যে আরও বেশি অনুপ্রেরণা কাজ করছে। আরও ভাল করতে হলে নিশ্চয় আমার আরও ভাল অনুশীলন করতে হবে।’ এর আগে আরচারিতে হীরার সেরা সাফল্য হলো ২০১২ সালে জাতীয় আরচারিতে রৌপ্যজয়। তার প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল চীনা তাইপেতে ১৮তম এশিয়ান গেমস। এরপর ব্যাংককে ১৯তম এশিয়ান আরচারিতে খেলেছিলেন। গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত এস এ গেমসে খেলেছিলেন, কিন্তু কোন সাফল্য পাননি। ওই বছর ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আরেকটি টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন। সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড আরচারি স্টেজ ওয়ানে খেলার অভিজ্ঞতাই কাজে লেগেছে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়া হীরার। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের মেয়ে হীরা ২০১০ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হন আরচারিতে। তার পরবর্তী লক্ষ্য এ বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জেতা। বাংলাদেশের আরেক আরচার বন্যা আক্তার মেয়েদের কম্পাউন্ড ডিভিশনের এককের ফাইনালে ইরাকের ফাতিমাহ আল মাসাদানির কাছে হারেন ১৩৫-১৩৩ পয়েন্টে। ২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপের স্বর্ণজয়ী ফাতিমাহের কাছে হেরে স্বর্ণবঞ্চিত বন্যার অভিব্যক্তি, ‘এটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। রূপা জিতেছি। এ পর্যন্ত আসতে পেরেই খুশি আমি।’ রিকার্ভ ডিভিশনের পুরুষ দলগত ইভেন্টে ৬-২ সেট পয়েন্টে ভুটানকে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেন রোমান সানা, সারোয়ার হোসেন ও তামিমুল ইসলাম। রিকার্ভের ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ না জিতলেও দলীয় সাফল্য পেয়েছেন তামিমুল। ২০১৫ সালে সামাওয়ার যুব কমনওলেথ গেমসের স্বর্ণজয়ী তামিমুল বলেন, ‘ব্যক্তিগত ইভেন্টে পারিনি। একটু অসুস্থ ছিলাম। একটু সুস্থ হতেই মনে হলো দলীয় ইভেন্ট তো আছে। দেশের মাটিতে খেলা, তিনজন মিলে চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই সাফল্য পাব।’ কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত ইভেন্টেও স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। আবুল কাশেম মামুন, মিলন মোল্লা ও নাজমুল হুদার বাংলাদেশ দল মালয়েশিয়াকে হারায় ২১৪-২০৭ পয়েন্টে। স্বর্ণজয়ের পর নাজমুলের ভাষ্য, ‘মালয়েশিয়া আমাদের চেয়ে ভাল দল। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল, আমরাই জিতব। তীরগুলো লক্ষ্যে রাখার দিকেই ছিল আমাদের মূল মনোযোগ।’ কম্পাউন্ড ডিভিশনের পুরুষ এককে তামাজয়ী মিলন বলেন, ‘এটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক আসর। এর আগে ব্রোঞ্জ জিতেছি, সেটাও ছিল প্রথম পদক পাওয়া। এবার সোনা জিতলাম। এটাও প্রথম। আগামীতে আরও ভাল করার চেষ্টা করব।’ ব্যক্তিগত ইভেন্টে ব্যর্থ হলেও রিও অলিম্পিকে খেলা শ্যামলী রায় পেয়েছেন দলগত সোনা জয়ের স্বাদ। রিকার্ভ ডিভিশনের মহিলা দলগত ইভেন্টের ফাইনালে বিউটি রায়, শ্যামলী রায় ও রাদিয়া আক্তার শাপলার বাংলাদেশ দল ৬-২ সেট পয়েন্টে হারায় নেপালকে। রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশের রোমান সানা এবং বিউটি রায় ৬-২ সেটে ভুটানের কিনলে এবং কারমা জুটিকে হারিয়ে এবং কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশের সুস্মিতা বণিক এবং আবুল কাশেম মোল্লা জুটি ১৫০-১৪২ পয়েন্টে ইরাকের ফাতেমাহ্ এবং ইশাক জুটিকে হারিয়ে স্বর্ণ জেতান বাংলাদেশকে।
×