ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বালটিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

বালটিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

পূর্ব প্রকাশের পর হঠাৎ করে সে কাছে এসে গলাটা জড়িয়ে ধরে সোহাগের সুরে বলল- এই চাঁদনি রাতে এমন মুহূর্তের জন্য কতদিন, কতমাস, কতবছর অপেক্ষা করে থাকি। সেই মুহূর্তটা এসে গেল ব্যালটিক সাগরের বুকে। মনে হল এসব আয়োজন শুধুই দু’জনের জন্য। আজ জাহাজের অন্য প্রান্তের স্যুটের যাত্রীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই তাকে আর বঞ্চিত করলাম না। সোহাগে সোহাগে ভরিয়ে দিয়ে সোহাগেই ভেসে গেল সকল দুরন্তপনা। রাত অনেকটা গভীর। আজ পূর্ণিমা। চাঁদটা যেন অনেকটা বাড়তি উজ্জ্বলতা নিয়েই মধ্য আকাশে স্থির হয়ে আমাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাই ওর চোখে চোখ রেখে কতটা সময় কেটে গেল বুঝতে পারলাম তখন, যখন মধ্যপ্রদেশে গভীর শূন্যতা অনুভব করলাম। আলতো করে মুখটা তুলে ধরে বললাম-চল ডিনারের আয়োজনটা কেমন একটু পরীক্ষা করে আসি। আমাদের আজকের ডিনারটা প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তাই খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। একটু খোঁজ করতেই জানতে পারলাম সপ্তম তলাতেই সব রেস্টুরেন্টের অবস্থান। গিয়ে দেখি এ যেন কোন রেস্টুরেন্টের মার্কেট। রকমারি সব খাবারের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা সবাই ব্যস্ত অতিথি আপ্যায়নে। এর মধ্যে অনেক খাবার প্রস্তুত হয়েই আছে খারিদদারের অপেক্ষায়। আবার চেয়ার টেবিলে আরাম করে বসে সাগর বক্ষের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে করতে পছন্দ মতো ম্যেনু নির্বাচন করলে গরম গরম খাবার চলে আসবে টেবিলে। তবে রাতের বেলায় সাগর বক্ষের দৃশ্যাবলী ততটা উপভোগ করা যাবে না। তারপরও চাঁদনি রাত বলে যা কথা। ভাবলাম পুরো রেস্টুরেন্ট পাড়াটা একবার ঘুরে আসি, পরে না হয় একটা কিছু খেয়ে নিলে হবে। কি নেই এখানে, শতাধিক আইটেমের বুফে থেকে ফাস্ট ফুড, মাছ ভাত, চিকেন ক্যারি, ল্যাম্ব ক্যারি, ম-া মিঠাই সবই আছে। যে যার পছন্দের খাবার খেতে কোন অসুবিধা নেই এই সব ভাসমান রেস্টুরেন্টগুলোতে। তবে খাবারের প্রস্তুতি ও পরিবেশন হয়তো সকলের মনের মতো নাও হতে পারে। সব কন্টিনেন্টের খাবার এখানে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। সে রাতের খাবারটা আমরা সাদামাটা ভাবেই সেরে নিলাম হালকা স্যানাক্স, স্যান্ডুইজ দিয়ে। আগামী দিনের সকাল ও রাতের খাবার টিকিটের সঙ্গেই অন্তর্ভুক্ত করা আছে। তখন নিশ্চয় রসনা তৃপ্তির সকল বাসনা কড়ায় গ-ায় পুষিয়ে নিতে কোন রকম কৃপণতা করা হবে না। খানা পিনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসতেই চোখে পড়ল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় সপ্তম তলার সমস্ত ফ্লোর জুড়ে। একটু অগ্রসর হতেই দেখি এখানে চলছে সার্কাস দলের এ্যাক্রোবেটিক্স ও শারীরিক কসরত। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একদল যুবক যুবতী যাত্রীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কসরত করে চলেছে। সত্যি উপভোগ করার মতো একটা বিষয়। এরা সবাই প্রফেশনাল এবং এই প্রমোদ তরীর বেতনভুক্ত কর্মচারী। এমন আরও কত কি আয়োজন এই তরীতে আছে সেটাই দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে প্রথম পর্বের প্রদর্শনী শেষ, দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে সেই রাত এগারোটাই। কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ও পানীয় জলের অনুসন্ধান করতে গিয়ে হাজির হলাম সুপার মার্কেটে। লন্ডন কিংবা অন্য কোন দেশের সুপার মার্কেটের আদলে এই মার্কেটের মধ্যে ঢুকেই অবাক হলাম এই ভেবে যে, এটা কি সত্যিই জাহাজের মধ্যে নাকি অন্য কোথাও। না বিভ্রান্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখানে সাধারণভাবে মোটামুটি সকল ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের কোর অভাব নেই। ঘর সংসার করার সকল প্রকার উপাদানে সমৃদ্ধ এই মার্কেট। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই পেয়ে গেলাম ডিউটি ফ্রি সপের সন্ধান। (চলবে...)
×