ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

বিউটি পার্লারে বই পড়ার ব্যবস্থা আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টের একটি খবর পাওয়া গেল, যা খুবই চমকপ্রদ। সেখানকার মেয়েদের বিউটি পার্লার তথা সেলুনে চালু হয়েছে পাঠাগার। মেয়েরা যাচ্ছেন- কেউ চুলে নানা রকম স্টাইল করাচ্ছেন, কালার করছেন, শ্যাম্পু করছেন- এতে সময় যাচ্ছে অনেকখানি। কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু ওই সেবাপ্রার্থী নারীরা কী করবেন? তাদের তো সময় কাটাতে হবে! তাই দোকানের মালিকরা দোকানটিকে করে ফেলেছেন লাইব্রেরি তথা পাঠাগারের মতো। কাজও হচ্ছে, মেয়েরা বইও পড়ছেন চমৎকারভাবে। সময়টাও কাটছে। বিরক্তি বোধও হচ্ছে না কারও। যার যেটা ইচ্ছা পছন্দ তিনি সেই বইটি পড়া শুরু করেন। অনেক ধরনের বই সেখানে রাখা হয়। উপন্যাস, শিশু সাহিত্য, শিশুদের অধিকার, নারী সম্পর্কিত এবং তাদের অধিকার বিষয়ক নানা বই। এসব বই পড়তে পড়তে তাদের অনেক কিছু জানাও হচ্ছে। সেখানকার কেন্দ্রীয় পাঠাগার থেকে সেলুন মালিকরা বই নিয়ে আসেন ধার হিসেবে। ওই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে দেড় হাজারের বেশি ধরনের বই নির্দিষ্ট করা আছে, যেগুলো সেখান থেকে সেলুনগুলোতে সরবরাহ করা হয়। জানা যায়, বহু মহিলা বলেছেন, বই কিনে পড়ার মতো সামর্থ্য বা সুযোগ তাদের নেই। তাই মাঝে মাঝেই সেলুনে এসে কেশ পরিচর্যার ফাঁকে নানা ধরনের বই পড়ে যাই। অনেকে বলেন, সেলুনে আমাদের ক’দিন পর পরই আসতে হয়, সেটা আমাদের ভালই লাগে। কারণ এখানে এলে কেশ পরিচর্যাও হয়, ভাল ভাল বইও পড়তে পারি। আর সেখানকার সেলুন বা পার্লার মালিকদের বক্তব্য, ‘দোকানে বই রাখার ফলে মেয়েদের আগমন বেড়েছে অর্থাৎ বেড়ে গেছে তাদের কাস্টমার, ব্যবসাও চলছে ভাল। এ প্রসঙ্গে সেখানকার প্রধান গ্রন্থাগারিক বলেছেন, এখানকার বিভিন্ন এলাকায় যেসব পাঠাগার আছে সেগুলোতে পাঠকের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। আগে সেগুলোতে মেয়েরাও যেতেন, এখন যেতে পারেন না। তাদের কাজকর্ম, সংসার-ঘরকন্না এÑসবের কাজ করতেই সময় ফুরিয়ে যায়। লাইব্রেরিতে যাওয়ার মতো সময় থাকে না। সে জন্য বিউটি পার্লার তথা সেলুনে বই ধারে দেয়ার রীতি চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জাতীয় গ্রন্থাগার থেকে ২৩টি বিউটি পার্লার তথা সেলুন বই ধার নিতে শুরু করেছে। উদ্যোগটি খুবই চমৎকার। বই বিষয়টি সবার জন্যই বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। আজকাল বলা হয়, লোকে বই পড়ে না। কথাটা মিথ্যা নয়, কিন্তু পড়ে না কেন? কেউ বলবেন লোকের হাতে সময় নেই। সারাদিন নানা কাজকর্মে এমন ব্যস্ত থাকেন যে তিনি বই পড়ার মতো বা পাঠাগারে যাবার মতো সময় পান না। আবার এও ঠিক, অনেকের বই কেনার সামর্থ্যও নেই। আবার অনেকেরই হাতে এত টাকা যিনি বা যারা এক লহমায় ১০/২০টি বা তারও বেশি বই কিনতে পারেন স্বচ্ছন্দে। আবার এটাও মিথ্যা নয়, টাকা থাক বা না থাক হাতের কাছে বই পাওয়া যায় না বলেই বই পড়া হয় না। তা ছাড়া পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগারই বা কোথায়। মানুষকে বই পড়ানোর সুযোগ করে দেয়ার মতো কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন উদ্যোগই বা কোথায়! আমাদের কেউ কেউ যাচ্ছে এখানে-ওখানে, দূরে দূরে ভ্রমণ করছে, অলসভাবে সময় কাটাচ্ছে কত জায়গায়। তার নাগালের মধ্যে বই এনে দেবে কে? এমন এমন সব জায়গায় যদি বই পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে বই না পড়ার যুগেও অর্ধেক সংখ্যক জায়গায় মানুষ হাতের কাছে ভাল বই পেলে লুফে নেবে। অন্যভাবে সময় নষ্ট না করে সেই বইতে যে ডুবে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব দেবে কে? এসব যোগাবে কে? এসব নিয়ে ভাববে কে! আফ্রিকার আইভরি কোস্টে যা করা হয়েছে তা যে অন্যদেরও উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগাবে তাতে কী সন্দেহ আছে?
×