ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সুফিয়ান কবির

নায়করাজ হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

নায়করাজ হয়ে ওঠার গল্প

রাজ্জাক নায়ক থেকে নায়করাজ উপাধি পেয়েছিলেন ১০০তম চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। সেই সময় বিনোদনের মাধ্যম বলতে কেবল বুঝাতো চলচ্চিত্র। আর চলচ্চিত্রের এই রঙ্গিন জগতে নাকরাজের ছিলো একক অধিপত্য। তারুণ্যের আইডল ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। বর্তমানের আধুনিক ধারার ফিল্ম ইন্ডাষ্টির সিনেমা তৈরির ধারায় এই জগতে এসেছে পরিবর্তন। অভিনয় দক্ষতার চেয়ে প্রয়োজন চোখ ধাঁধানো আকর্ষন। সেই ধারায় নায়ক রাজ্জাকের মতো শিল্পীদের জীবন সংগ্রামের কথা হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই নায়করাজকে নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। যা বই আকারে প্রকাশ পাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে নায়ক থেকে নায়করাজ হওয়ার সব বিষয়গুলো। সময়টা তখন ১৯৬৪ সাল। পশ্চিম বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে। এই উত্তাল সময়ে নিজ জন্মস্থান ছেড়ে শূন্য হাতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) চলে আসেন। এই চলে আসার পেছনে ছিল সদ্য গড়ে ওঠা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অভিনয় করার একটু সুযোগ সন্ধান। তিনিই নায়করাজ রাজ্জাক। বর্তমানে তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে গবেষণা হচ্ছে। গবেষণার বিষয় নায়করাজ রাজ্জাক : জীবন ও কর্ম। এ গবেষণা কর্মটি করছেন কণ্ঠশিল্পী ও সাংবাদিক ইসমত জেরিন স্মিতা। তার কাছ থেকেই জানা গেল গবেষণার নানান বিষয় নিয়ে। জন্মের পর মাত্র আট কি নয় বছর বয়সে বাবা- মা দু’জনকেই হারান নায়ক রাজ্জাক। স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় বিদ্রোহী নামের একটি মঞ্চ নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছিল। এই নাটকে অভিনয়ের প্রশংসাই যেন তাঁর ভেতরের অভিনেতা সত্তাকে জাগিয়ে তুলেছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অনেক মঞ্চে নাটকে কাজ করেছেন। কিন্তু অভিনেতা রাজ্জাকের নায়ক হওয়ার স্বপ্ন যেন তাঁকে অবিরত তাড়া করছিল। ওই সময়ই তিনি পশ্চিম বাংলায় বেশ কিছু চলচ্চিত্রে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় পশ্চিম বাংলা থেকে নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় স্ত্রী এবং আট মাস বয়সী প্রথম সন্তান বাপ্পারাজকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। কাজ শুরু করেন ফোর্থ এ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে। এর মাঝেই ছিল জীবন ধারণের নানান টানাপড়েন। পাশাপাশি সে সময় তিনি বেশ কিছু থিয়েটারে প্রায় ৫০ টির মতো মঞ্চ নাটকেও কাজ করেন। নায়করাজ রাজ্জাক এর কিছু কাল পরে প্রথম পাকিস্তান টেলিভিশনে ঘরোয়া নামক ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এরপর নানান প্রতিকূলতার মাঝে তিনি বেহুলা (১৯৬৬) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেন। কিন্তু নায়ক হিসেবে উত্থানের পূর্বে এই সুদক্ষ অভিনেতার জীবন ছিল সমস্যা জর্জরিত। একদিকে অভাব অন্যদিকে ভবিষ্যত স্বপ্ন। বিশ্বাস, একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং অমানুষিক জীবন সংগ্রামের মাধ্যমেই সেসব সমস্যাকে জয় করে ব্যক্তি রাজ্জাক অভিনেতা রাজ্জাকের উত্থান করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে তিনি নিয়ে গেছেন উচ্চতায়। তাঁর অনবদ্য অভিনয় শিল্প দক্ষতায় মানুষকে কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন, নৈতিকতা-মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করেছেন। যার কারণেই তিনি নায়করাজের উপাধি লাভ করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন এক অনবদ্য রোমান্টিক রূপ দান করেছেন এই মহান গুণী অভিনেতা। এছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নানান রকমের সামাজিক কর্মপরিসরে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে আরও সমৃদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘রাজলক্ষ্মী প্রোডাক্টশন।’ নিয়মিতই বাংলা চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও নির্দেশনা দিয়ে আসছেন এই প্রোডাক্টশন হাউসটির মাধ্যমে। বাংলা চলচ্চিত্রে বর্তমানে তরুণ দক্ষ অভিনেতা তৈরিতে নায়করাজের জীবনী হতে পারে একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম। চলচ্চিত্রের উত্থান এবং সোনালী সম্ভাবনার আলেখ্যও হতে পারে এই গুণী অভিনেতার অভিনয় ও ব্যক্তিগত জীবনের কর্মপরিসরের পর্যালোচনা। গবেষণায় ওঠে আসবে নায়করাজের জীবন ও কর্মের বৈচিত্র্যময় বিভন্ন বিষয়। গবেষণাটি মোট এগারোটি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। অভিনেতা হিসেবে নায়করাজের অভিনয় কৌশল, এ পর্যন্ত করা ছবির সংখ্যা, সেই সংখ্যা ধরে পর্যালোচনা করা হবে। জানা যাবে তিনি কোন ধারায় কেমন অভিনয় শৈলী তুলে ধরেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর অভিনীত যে সব ছবি পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যা মোট ৩০২টি। এই ছবিগুলো বিভিন্ন ধারার। সামাজিক ধারা, এ্যাকশন ধারা, পৌরাণিক বা লোক কাহিনী নির্ভর, সাহিত্য নির্ভর ছবি, পোশাকি ধারার ছবি, রাজনৈতিক ধারার ছবি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি এবং শিশুতোষ ধারার ছবি। গবেষক ইসমত জেরিন স্মিতা বলেন, আসলে নায়করাজ কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনয় কৌশলটা কি, কীভাবে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে তিনি এত জনপ্রিয় হলেন, কীভাবেই বা তিনি নায়ক থেকে নায়করাজ হলেন আমার গবেষণায় এর প্রত্যেকটি বিষয়ই বিস্তারিতভাবে ফুটে উঠবে। এছাড়াও তিনি যে ভিন্ন ধারার ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে নিজের অভিনয় প্রতিভা দেখিয়েছেন। সেসব বিষয়ও এ গবেষণায় আসবে।
×