ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

মেহেরপুরে গমে ছত্রাক

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

মেহেরপুরে গমে ছত্রাক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ২৪ জানুয়ারি ॥ মেহেরপুরে এবারও গমে ব্লাস্ট নামক ভয়ঙ্কর ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ ছত্রাকের আক্রমণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাদকৃত গম ক্ষেতে গমের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্লাস্ট নামক ভয়ঙ্কর এ ছত্রাক এখন জেলার সর্বত্র গমের আবাদি জমিতে ছড়িয়ে পাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রান্ত কয়েকটি ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন কৃষি বিভাগ ও গম গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। এ বছর জেলায় কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করেই কৃষকরা গমের আবাদ করেছে। গত বছর মেহেরপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়। এতে জেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির গম বিনষ্ট হয়ে যায়। সোমবার দুপুরে মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর মাঠের ব্লাস্ট আক্রান্ত একটি গম ক্ষেত পরিদর্শন করেন কৃষি বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তারা গম ক্ষেতে ব্লাস্ট আক্রান্ত নিশ্চিত করেন। এ ছত্রাক আক্রান্ত ক্ষেতে গমের শীষ ওপর থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা শীষের নিচের দিকে নেমে আসছে। আবার কোন কোন শীষ পুরোটাই সাদা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শীষের মধ্যে কোন গম থাকছে না। ব্লাস্ট আক্রমণের কারণে শীষ শুকিয়ে যাওয়ায় গম দানা থাকছে না। ব্লাস্ট আক্রান্ত ক্ষেতে কোন ফসল পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান কৃষি বিজ্ঞানীরা। পরিদর্শক দলের প্রধান দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা বলেন, ব্লাস্ট আক্রান্ত বীজ ও বীজ শোধন না করা এবং আগাম গম আবাদকৃত ক্ষেতগুলোতে ব্লাস্ট আক্রান্ত কি না তার পরীক্ষা করা হয়নি। গত বছর যেহেতু এ এলাকায় ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছিল তাই এর জীবাণু আক্রান্ত বীজ ও ঘাসের মধ্যে সুপ্ত ছিল। এবার গম আবাদ করায় তা ছড়িয়ে পড়েছে। এ মৌসুমে যদি গমের আবাদ না করা হতো তাহলে ব্লাস্ট ছত্রাক দূর করা সম্ভব হতো। কিন্তু চাষীরা কৃষি অফিসের পরামর্শ না মেনে গমের আবাদ করায় ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভাল বীজ, বীজ শোধন ও প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হলেও তারা তা মেনে চলেননি। এখনও যেসব ক্ষেত আক্রান্ত হয়নি সেখানে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ব্লাস্ট আক্রান্ত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিদর্শন দলের সদস্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক উদ্ভিদ সংরক্ষণ গোলাম মারুফ বলেন, গতবছর দেরিতে ব্লাস্ট আক্রমণ হওয়ায় প্রতিকার করা যায়নি। এবার শীষ বের হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে। পর পর দু’বছর গম আবাদ না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই তা মানেননি। তবে ব্লাস্ট দূর করার জন্য কৃষি গবেষকরা চেষ্টা করছেন। আগামী বছরের মধ্যে বারি গম ৩০ নামের একটি জাত চাষের জন্য অবমুক্ত করা হবে। এ জাত ব্লাস্ট প্রতিরোধী বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি চাষীদের কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানালেন এই কৃষি কর্মকর্তা। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে এবার গম আবাদ কম হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার তিনটি উপজেলায় ৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর গম আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গত রবিবার পর্যন্ত ৫ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আক্রান্ত হয়নি এমন ক্ষেতে এক সপ্তাহ পর পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করে শীষ ভিজিয়ে দিতে পারলে ব্লাস্ট আক্রান্ত নাও হতে পারে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে চাষীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
×