ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দৈনিক লেনদেন গড়ে ৭শ’ ৭৩ কোটি ;###;১৮ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করছে ;###;সন্ত্রাস দমনের সতর্কতা হিসেবে এক বারে ২৫ হাজারের বদলে ১০ হাজার করা হয়েছে লেনদেনের সীমা

৪ কোটি ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

৪ কোটি ছাড়িয়েছে

রহিম শেখ ॥ খাদিজা বেগম মিরপুরের একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। উপার্জিত অর্থের একটি অংশ প্রতিমাসের শুরুতেই বৃদ্ধা মাকে পাঠাতে হয়। আগে কয়েক দিন সময় লাগলেও এখন নিজের মোবাইল থেকে মায়ের মোবাইলে টাকা পাঠান মুহূর্তেই। খাদিজা জনকণ্ঠকে জানান, কারখানার মালিক বেতন দেন মোবাইলে। পরে নিজের মোবাইল থেকেই মায়ের মোবাইলে টাকা পাঠাই। গ্রামের বাজার থেকে সেই টাকা তুলে নেন খাদিজার বৃদ্ধা মা। দেশে এখন খাদিজার মতো মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শুধু ডিসেম্বর মাসেই দৈনিক গড়ে ৭৭৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। পুরো মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২৩ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে মোবাইলে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ২৩৪ কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন শুধু দেশেই নয়, প্রতিদিন বিদেশ থেকেও অর্থ আসছে। পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৮ কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। মুহূর্তেই প্রবাসীদের কষ্টার্জিত পরিশ্রমের অর্থ নিকটাত্মীয়দের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বদৌলতে। প্রতিমাসের খরচা মেটাতে সৌদি প্রবাসী স্বামী রমজান আলী স্ত্রীকে টাকা পাঠান মোবাইলে। সেই টাকা তুলতেই মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলী বাজারে এসেছিলেন স্ত্রী ফারিয়া সুলতানা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমার স্বামী আগে ২/৩ মাস পর পর ডাকযোগে টাকা পাঠাত। তখন সাংসারিক খরচ মেটাতে সমস্যা হতো। এখন মোবাইল ব্যাংকিং থাকায় প্রতিমাসের টাকা প্রতিমাসেই পাই। গতিশীল, নিরাপদ ও সহজ লেনদেনের সুবিধার ফলে ফারিয়ার মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবমতে, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস শেষে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৭৮ হাজার, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১৪ লাখ ৫৮ হাজার বেশি। এর আগে ২০১৩ সালে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা এক কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সাড়ে ৩ কোটি অতিক্রম করে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১০ হাজার ১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ৯ হাজার ৪৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। নবেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ৯ হাজার ২৯৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ওই মাসে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ৮ হাজার ৫৫৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট ট্রানজেশন বেড়েছে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৩ হাজার ১৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এক মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে লেনদেন বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসে ২৩৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। যা আগের মাসের তুলনায় ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশ কম। আগের মাস নবেম্বরে বেতন পরিশোধ করা হয়েছিল ৩২২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের মাসে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছিল ১৯৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এছাড়া ডিসেম্বর মাসে অন্যান্য বিল বাবদ লেনদেন হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৩৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে। নবেম্বর পর্যন্ত সক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫১ লাখ। যা ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ। নিয়ম অনুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইনএ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেও তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারে না বিধায় এ কার্যক্রমের জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংকগুলো। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার ২৬ জন। নবেম্বর পর্যন্ত এজেন্টর সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬২৯ জন। এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহার ঠেকাতে বেশকিছু নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একজন ব্যক্তি যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব রাখতে পারবেন। যাদের একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব চলমান রয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করে দিতে হবে। সম্প্রতি জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোন গ্রাহকের একই জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড বা অন্য কোন পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক মোবাইল হিসাব থাকলে উক্ত গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করে তার বেছে নেয়া- যেকোন একটি মোবাইল হিসাব চালু রেখে অন্য হিসাবগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। কোন ক্ষেত্রে গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করে এরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ দুরূহ হলে, যে হিসাবটিতে সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে, তা চালু রেখে অন্য হিসাবগুলো বন্ধ করতে হবে। জানা গেছে, দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রথম শুরু করা হয় ২০১০ সালের ৩১ মার্চ। এরপরের বছরে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত গাইডলাইন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য পরবর্তীতে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে ঝুঁকি মোকাবেলায় আরও একটি নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ২০টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন পেলেও ১৮টি ব্যাংক বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাক ব্যাংকের ‘বিকাশ’, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’, মার্কেন্টাইল ব্যাংকর ‘মাই ক্যাশ’, ওয়ান ব্যাংকের ‘ওকে ব্যাংকিং’, ব্যাংক এশিয়ার ‘হ্যালো ব্যাংকিং’ যমুনা, কমার্স ও রূপালী ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশ’, আইএফআইসি’র ‘বাংলায় মোবাইল ব্যাংকিং’, প্রাইম ব্যাংকের ‘ইজি ক্যাশ’, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ‘ইউ ক্যাশ’, ইসলামী ব্যাংকের ‘এম ক্যাশ’, এক্সিম ব্যাংকের ‘এক্সিম ক্যাশ’, ট্রাস্ট ব্যাংকের ‘মোবাইল মানি ব্যাংকিং’, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের, ‘টেলিক্যাশ’। এছাড়া আরও কয়েকটি ব্যাংক ব্যাংক মেবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে। জানা গেছে, বর্তমানে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ৭ ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এগুলো হলোÑ ইনওয়ার্ড রেমিটেন্স, ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন, ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন, পিটুপি ট্রানজেকশন, বেতন বিতরণ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ। এছাড়া আরও কিছু সেবা আছে, যেগুলো সরাসরি উল্লিখিত ৬ ক্যাটাগরির কোনটার অন্তর্ভুক্ত নয়, এই ধরনের সেবাসমূহকে অন্যান্য ক্যাটাগরির আওতায় বিবেচনা করা হয়। যেমন- স্কুল-কলেজের টিউশন ফি পরিশোধ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল নাগাদ দেশে মোবাইল ব্যাংকিং বিল পেমেন্ট সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ২০ লাখ। এ সময়ে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৫ কোটি যা দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শুধু টাকা পাঠানো বা উঠানো নয়, কেনাকাটা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বেতনভাতা বিতরণ, সরকারী অনুদানপ্রাপ্তি, মোবাইলে তাতক্ষণিক ব্যালেন্স রিচার্জসহ বিভিন্ন সেবাও এখন হাতের মুঠোয়। এসব কাজ করতে যেতে হবে না ব্যাংকের কোন শাখায় অথবা অন্য কোথাও। মোবাইল ব্যাংকিং এখন দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত। এর মাধ্যমে আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে দেশের কোটি মানুষ। সূত্র মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগই ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে। বিপুল এ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংই কার্যকর। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যত ঠিকভাবে কাজ করলে ব্যাংকিং এ প্রচলিত খরচের চেয়ে ৮৪ ভাগ খরচ কমে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে লেনদেন বৃদ্ধির মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে স্থায়ী বিনিয়োগের খরচও কমে যাবে বলে তারা মনে করেন। এ প্রসঙ্গে সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, যাদের টার্গেট করে এই ব্যাংকিংয়ের কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ অল্প আয়ের মানুষ এবং স্বাভাবিকভাবেই স্বল্পশিক্ষিত মানুষের আওতায় ব্যাংকিং সেবার আসতে পারে অনায়াসেই। তিনি বলেন, ব্যাংকের শাখা খুলে মানুষকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ বিষয়। যা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজে এরং স্বল্প খরচেই সম্ভব। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, দরিদ্র ও ব্যাংকিং সেবাবহির্ভূত জনগণকে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে এবং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দ্রুত, সহজ ও নিরাপদে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসরত উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ২০১০ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলো। যার ফলে আজ মোবাইল ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা নতুন মাত্রা ছুঁয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় খোলা ব্যাংক হিসাবগুলোকে ধরলে গ্রাহকের দিক দিয়ে প্রথম দিকে থাকবে বাংলাদেশ। বর্তমানে হিসাবের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। কমানো হয়েছে লেনদেনের সীমা ॥ এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমা আরও কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমার অজুহাতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুসারে, একজন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। পূর্বে এই হার ছিল ২৫ হাজার টাকা। এখন থেকে গ্রাহক দৈনিক দুই বার এবং মাসে ১০ বার এই সেবা নিতে পারবেন, যা আগে ছিল দৈনিক তিন বার এবং মাসে ১০ বার। একইসঙ্গে দৈনিক জমার সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ দুই বারে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠানো যাবে। যা মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে এক লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। আগে দিনে পাঁচ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে দেড় লাখ টাকা করে জমা করা যেত। এছাড়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা জমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই হিসাব থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না। পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি হিসাব থেকে অন্য ব্যক্তির হিসাবে আগের মতো প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা স্থানান্তরের সীমা বলবৎ রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহার রোধকল্পে এবং এই সেবার সুশৃঙ্খল ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই লেনদেনের সীমা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারে সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও হুন্ডিদের দৌরাত্ম্য রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমার অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাংক কর্মকর্তারা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারে হুন্ডি হওয়ার অভিযোগ করেন। এতে করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় লেনদেনের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে হুন্ডি হ্রাসের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোন মোবাইল হিসাবে ৫ হাজার টাকা বা তার তদুর্ধ নগদ অর্থ জমা বা উত্তোলনে গ্রাহককে পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি প্রদর্শন করতে হবে, যা এজেন্ট তার রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করবেন। এমনকি রেজিস্ট্রারে গ্রাহকের স্বাক্ষর বা টিপসই সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন এজেন্ট এই ধরনের কার্যাদি যথাযথভাবে সম্পন্ন না করলে বা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে এজেন্টশিপ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
×