ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ দুই আরএসও জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ দুই আরএসও জঙ্গী গ্রেফতার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অত্যাচারের দোহাই তুলে স্বার্থান্বেষী মহল প্রতিদিনই সীমান্তের কোন না কোন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ ছাড়াও আরএসও জঙ্গীরা ভারি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির ব্যবস্থা নিয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা বোমা তৈরির দুই বস্তা সরঞ্জামসহ দুই আরএসও জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল (ক্যাম্প) পরিদর্শন করেছেন তিন দেশের রাষ্ট্রদূত। সূত্র জানায়, জামায়াত বিএনপির কতিপয় নেতার উস্কানি পেয়ে আরএসও ক্যাডাররা ঢালাওভাবে রোহিঙ্গা এনে দেশে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে নজরদারি আরও বৃদ্ধি করেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। গোপনে সংবাদ পেয়ে কক্সবাজার ক্যাম্পের র‌্যাব সদস্যরা মঙ্গলবার দুপুরে শহরের খুরুশকুল নতুন রাস্তার মাথা এলাকা থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ দুই মিয়ানমার নাগরিককে আটক করেছে। আটক দুই রোহিঙ্গা কোন নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য বলে ধারণা করছে র‌্যাব। তাদের পরিবারের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বোমা তৈরির সরঞ্জামগুলো কোথা থেকে এসেছে, তাও জানার অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. কর্নেল আশেকুর রহমান। এদিকে স্বার্থান্বেষী মহলের গোপনে মদদ পেয়ে প্রতিদিন অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের বন বিভাগের জায়গায় নতুন নতুন ক্যাম্প সৃষ্টি করে স্থান করে দেয়া হচ্ছে। এর পেছনে রোহিঙ্গাদের (আরএসও) নিয়ে বড় ধরনের নাশকতা ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে কলকাটি নাড়ছে জামায়াত বিএনপি। নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বন উজাড় করে কিংবা পাহাড় সমতল করে প্রত্যেহ ঝুপড়ি ঘর উঠছে টেকনাফ ও উখিয়ায়। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে কক্সবাজারের ওসব এলাকায়। শুরুর দিকে তারা কুতুপালং ও লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প বা এর আশপাশে অবস্থান নিলেও ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে উখিয়ার বালুখালী, টেকনাফের শাপলাপুর ও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা এভাবে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের নিয়ন্ত্রণ বা নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযান শুরু করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে বিশ্বজুড়ে। সেই নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। আর ওসব রোহিঙ্গাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ ও জামায়াত-বিএনপির কতিপয় নেতা ফায়দা লুটের জন্য অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ আশ্রয় নিয়েছে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আশপাশে। কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আশপাশে অনেক রোহিঙ্গাকেই নতুন ঘর তুলছে। অনেকে পাহাড়ের মাটি কেটে দেয়াল তুলে ঘর তৈরি করছে। আর এতে সহায়তা দিচ্ছে আরএসও ক্যাডার ও আগে থেকে এদেশে বসবাস করা তাদের স্বজনরা। উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন ক্যাম্প স্থাপন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রোহিঙ্গাদের বসবাস নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবানী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গারা এভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ভেঙ্গে পড়তে পারে পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাসহ নিয়ম-কানুন। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে প্রত্যাবসান প্রক্রিয়া শুরু হলে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে পড়বে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখা খুব জরুরী। কিন্তু পুলিশের জনবল খুব কম। এ অপ্রতুলতার সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। তিন দেশের রাষ্ট্রদূত ॥ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন তিন দেশের রাষ্ট্রদূত। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেট লুনডেমো, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হ্যানে ফুগল এস্কেয়ার ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রিসেল কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে এনজিও প্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের হাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। ওসময় ক্যাম্প ইনচার্জ মোঃ শামশুদ্দোজ্জা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের জীবনযাপনের কথা তুলে ধরেন। পরে তিন দেশের রাষ্ট্রদূত কুতুপালং বনভূমির পাহাড়ে ঝুপড়ি বেঁধে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে দেখেন। তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্কট সমস্যা ও জীবন জীবিকা সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং অবহিত হন। স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র ॥ কড়া নজরদারির মধ্যেও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দালালের সহায়তায় বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল। রোহিঙ্গাকে পুঁজি করে ওই মহলটি অতিতেও ফায়দা লুটেছে। রোহিঙ্গাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ এনেছে বিদেশ থেকে। ইতোপূর্বে সন্ত্রাসী গোচরের রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালিয়েছে ওই মহলটি। এবারেও দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়ে বিজিবির কারণে ব্যর্থ হয়েছে ওরা। আটক দুই জঙ্গী ॥ শহরের খুরুশকুল নতুন রাস্তা এলাকা থেকে ২ বস্তা বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ২ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পরিচালিত এক অভিযানে তাদের আটক করা হয়। র‌্যাবের কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার লে. কর্নেল আশেকুর রহমান জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত টমটম গাড়ি থেকে দু’বস্তা বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ দু’জন মিয়ানমার নাগরিককে আটক করা হয়।
×