ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ পর্যন্ত ৪২ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে

জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ॥ সৌর বিদ্যুতের ভাগ্য অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ॥ সৌর বিদ্যুতের ভাগ্য অনিশ্চিত

রশিদ মামুন ॥ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুত উৎপাদনে গতি নেই। এখন পর্যন্ত ৪২টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে হাতে নেয়া একটি প্রকল্পর কাজও শুরু হয়নি। দরপত্র, চুক্তি আর দরকষাকষিতেই ঘুরপাক খাচ্ছে বেসরকারী প্রকল্প। সৌর বিদু্যুতের সরকারী প্রকল্পর বেশিরভাগই জমি জটিলতায় পড়েছে। মনে করা হচ্ছে জমি অধিগ্রহণে সরকারী অনুমোদন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা সৌর বিদ্যুতের ভাগ্য অনিশ্চিত করে তুলেছে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর আগে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে আগে তিনটি ধাপ পেরোতে বিদ্যুত বিভাগের কোম্পানিগুলোকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তাতে দেশে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন একটি বেসরকারী কোম্পানি যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে, সীমাবদ্ধতার জন্যই সরকারী কোম্পানি সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে না। সঙ্গত কারণে দফতরে দফতরে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকে। দেশে সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের মূল বাধা হিসেবে তিনি এই জটিলতাকে দায়ী করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর একটি অফিস আদেশ জারি করে। ওই অফিস আদেশে বলা হয় কোন কর্মকর্তার টেবিলে বিদ্যুতের কোন ফাইল একদিনও পড়ে থাকতে পারবে না। কোন কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে ওই কর্মকর্তাকে। ওই অফিস আদেশ জারি করার পরই বিদ্যুত কেন্দ্র বাস্তবায়নে গতি আসে। সৌর বিদ্যুত প্রকল্পে যেসব প্রকল্প পরিচালক রয়েছে তাদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে সৌর বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও এ ধরনের কোন আদেশ জারি করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে আবার বিদ্যুত বিভাগেরও চাপ রয়েছে। কিন্তু এরপরও প্রকল্প কেন আটকে থাকছে তা খুঁজে বের করতে হবে। তাদের মতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কঠোর নির্দেশনা প্রয়োজন। তারা বলছেন পয়সা ছাড়া সরকারী প্রকল্পের ফাইলও নড়বে না এটা দুঃখজনক। দেশে সৌর বিদ্যুত নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক মোটা দাগে সৌর বিদ্যুতের বড় প্রকল্পের জন্য তিনটি সমস্যা দেখছেন। প্রথমত জমিসংক্রান্ত সমস্যাকেই বড় মনে করছেন তিনি। দ্বিতীয়ত অনভিজ্ঞ কোম্পানিকে কাজ দেয়া। তৃতীয়ত রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজ দেয়া। তিনি মনে করেন এমন অনেককে কাজ দেয়া হচ্ছে তাদের আসল উদ্দেশ্য হয়ত সৌর বিদ্যুত উৎপাদনই নয়, ভিন্ন কিছু। আবার কোন কোন ক্ষেত্র স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে হলে সেবা প্রদানের জায়গাটি একটি স্থানে নির্দিষ্ট করতে হবে। সরকারী প্রকল্পের পাশাপাশি বেসরকারী কোম্পানিকে সৌর বিদ্যুত উৎপাদনে আগ্রহী করার উদ্যোগ নিয়েছে। দরপত্রের বাইরে গিয়ে সরাসরি দরকষাকষিতে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়েনের জন্য অনেক কোম্পানি আগ্রহপত্র দিচ্ছে বিদ্যুত বিভাগে। বিদ্যুত বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেলে এসব প্রকল্প যাচাই-বাছাই করার জন্য একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে একটি সেলও রয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই সেল আইপিপির ২০ প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করছে। এর বাইরে সরকারী আরও ১২টি প্রকল্প যাচাই-বাছাই করছে সেলটি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেল সূত্র জানায়, ৩২ প্রকল্পের মধ্যে ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯৭৫ মেগাওয়াট। মোট তিনটি প্রকল্পের এখন পর্যন্ত পিপিএ (বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি) সই হয়েছে যার উৎপাদন ক্ষমতা ২৮২ মেগাওয়াট। এলওআই ইস্যু করা হয়েছে ৫টি প্রকল্প। এর মোট ক্ষমতা ৪৫৫ মেগাওয়াট। সরকারী ক্ষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে যার উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫ মেগাওয়াট। প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি দাম নির্ধারণ অনুমোদন করেছে আরও একটি ৮ মেগাওয়াট প্রকল্পের। আর প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি ৬টি প্রকল্প যাচাই -বাছাই করছে। যেসব প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৩৯৫ মেগাওয়াট। সরকারের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন আমাদের জন্য নতুন। সঙ্গত কারণে একটু দেরি হচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন জমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সূত্র জানায়, সর্বশেষ টেকনাফে ২০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্পের জন্য বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহের সুতিয়াখালি-৫০ মেগাওয়াট, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা-৩২ মেগাওয়াটের আরও দুটি কেন্দ্রের জন্য বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়া ৪টি কোম্পানিকে চুক্তির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে রংপুর-৩০ মেগাওয়াট, কক্সবাজার-২০ মেগাওয়াট, গাইবান্ধা-২০০ মেগাওয়াট এবং সিলেটের গোয়াইনঘাট-৫ মেগাওয়াট।
×