ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ইসি নিয়োগে শীঘ্রই সার্চ কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

ইসি নিয়োগে শীঘ্রই সার্চ কমিটি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দাবি উঠলেও সময় স্বল্পতার কারণে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগে এ ব্যাপারে নতুন আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বাস্তবতার নিরিখে আসন্ন নির্বাচন কমিশন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আগের পদ্ধতি অর্থাৎ সার্চ কমিটির গঠনের মাধ্যমেই। তেমনটি হলে পঞ্চম দফায় ৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষেই ইসি পুনর্গঠনের জন্য চার কিংবা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আর গঠিত সার্চ কমিটিই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন আইন প্রণয়নের দাবিটি বেশ জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রায় প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে। এমনকি খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও দাবি জানিয়েছে এবার সম্ভব না হলেও পরবর্তী সময়ে ইসি পুনর্গঠন যেন আইনের মাধ্যমেই হয়। রাষ্ট্রপতি সংলাপে অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুনেছেন এবং তাদের দেয়া সুপারিশ ও প্রস্তাব বিচার বিশ্লেষণ করছেন। সূত্রমতে, রাজনৈতিক দলগুলো নতুন আইন চাইলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণই ভিন্ন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শেষ হবে। তাই যা করার দ্রুতই করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে, আর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপ এখনও শেষ হয়নি। আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই সংলাপ। এ কারণে ইসি পুনর্গঠনে এত স্বল্প সময়ে নতুন আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা বলতে গেলে একেবারেই নেই। আর নতুন যে কোন আইন করা সময়সাপেক্ষ। এ কারণে আগের পদ্ধতি অর্থাৎ সার্চ কমিটির মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি ইসি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। তবে এর পরের নির্বাচন কমিশন নিয়ে যাতে আর তেমন কোন কথা না ওঠে সেজন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। যদিও বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোন কিছুই এখনও বলেনি। জানা গেছে, শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, এত স্বল্পতম সময়ে একটি নতুন আইন করা যে সম্ভব নয় সে কথা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। দলের সভাপতি বলেন, আইন সহজ বিষয় নয়। আইন করতে গেলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, বসতে হবে। চাইলেই নতুন করা সম্ভব হয় না, কিছুটা সময় লাগে। তবে রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তার প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হকও বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত আইনের একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। তাই আইনটি চিন্তা-ভাবনা করে প্রণয়ন করা উচিত। আমার মনে হয়, এই আইনটা কিন্তু ঝটপট তৈরি করা যায় না। সেক্ষেত্রে আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্র্দেশনার অপেক্ষা করছি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদাভাবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে সংলাপে অংশ নিতে পঞ্চম দফায় আরও আটটি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সিইসি ও ইসি নিয়োগ করতে একটি নতুন আইন পাসের প্রস্তাব করে। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম বলেই সূত্রগুলো বলছে। এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও চায় নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের মাধ্যমেই হোক। এবার সম্ভব না হওয়ায় আগামীতে ইসি পুনর্গঠনের জন্য নতুন আইন করা হবে। এরপরের নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সুবিধামতো কোন সময়ে সংসদে এ সংক্রান্ত আইন পাস করে নেয়া হবে। তাদের মতে, আইন করে কমিশন গঠন করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপার, সময়ের ব্যাপার। যেহেতু সময় অল্প, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কমিশন নিয়োগ দিতে হবে। তাই আগের নিয়মেই এবারের কমিশন গঠন হতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন সেটাই হবে। সংবিধানে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও আইন না থাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম মোঃ জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে ২৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর চার সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করেন। গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে নিয়োগ দেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও সার্চ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও ৮টি দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন রাষ্ট্রপতি। এরপরই তিনি চার কিংবা পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দিতে পারেন। সেটি হলে গঠিত এই সার্চ কমিটিই একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পাঠাবেন। সেই ভিত্তিতেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি আর এই নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উত্থাপিত ৪ দফা প্রস্তাবেও ইসি পুনর্গঠনে নতুন আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ রয়েছে। দলটির প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগের লক্ষ্যে সম্ভব হলে এখনই একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। সময় স্বল্পতার কারণে ইনি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় যেন এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা। আওয়ামী লীগের এই প্রস্তাবেই উল্লেখ রয়েছে যে, সময় স্বল্পতার কারণে এবার সম্ভব না হলেও পরবর্তী ইসি নিয়োগের আগেই যেন নতুন আইন করা হয়। সংলাপকালে দলের ৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতিকে জানান, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের সিদ্ধান্ত নেবেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যে রকম উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রদান করবেন। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের প্রতি আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে। ভবিষ্যতে নির্বাচন নিয়ে কোন বিতর্ক হোক এটা আমরা চাই না। জনগণ যাকে চাইবে তারাই নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনা করবে সেটাই আওয়ামী লীগ চায়। ইসি পুনর্গঠনে পঞ্চম দফায় আজ সোমবার থেকে ফের শুরু হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ। আজ তিনটি রাজনৈতিক দল সংলাপ করতে বঙ্গভবনে যাবেন। সকাল ১১টায় খেলাফত মজলিস, বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ এবং বিকেল ৫টায় গণফ্রন্টের নেতারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ আলোচনায় বসবে। ১৮ জানুয়ারির মধ্যে বাকি আরও ৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি। এরপরেই রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যম ইসি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্রগুলো।
×