মিথুন আশরাফ ॥ বাতাস আর বৃষ্টি, এ দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা বেশ ভুগলেন। তবে হাল ছেড়ে দেননি। ধৈর্য ধরে উইকেটে আঁকড়ে থাকলেন। বাতাসের বেগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলে চললেন। রানও দ্রুতগতিতে তুলতে থাকলেন। তামিম ইকবালের ৫৬ রানের পর মুমিনুল হক অপরাজিত ৬৪ রানও করলেন। তাতে করে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে ব্যাটসম্যানদের যে বেহাল দশা ছিল, তাও দূর হলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথমদিনে ৪০.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান করল বাংলাদেশ। বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা হলো না দিনের ৪৯.৪ ওভার।
প্রথমদিনের শেষবেলায় এসে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আউট না হলেতো দিনটি ভালভাবেই বাংলাদেশ শেষ করত। এরপরও নিউজিল্যান্ডকে প্রথমদিনে ভালই ভুগিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ স্টেডিয়ামে বৃষ্টির জন্য দুইবার খেলা বন্ধ হলো। ১১.৩ ওভারে একবার, ২৯ ওভারের সময় আরেকবার। প্রথমবার প্রথম সেশন শেষ হয়েছে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। দ্বিতীয়বার চা বিরতিতে গেছে দল আবারও বৃষ্টির তোপে পড়েই। দিনশেষে তাই ৪০.২ ওভারের বেশি খেলা হয়নি। প্রথম উইকেট ১৬ ওভারে (ইমরুল কায়েস) পড়লেও দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও মুমিনুল মিলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। তামিম ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। ৫০ বলেই ১১ চারে ৫৬ রান করে দলের ৬০ রানের সময় আউট হয়ে যান। এরপর মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ মিলে দিন শেষ করার ইঙ্গিত দেন। দুইজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ৮৫ রানের বড় জুটিও গড়েন। এ জুটিই দলকে ভাল সংগ্রহ এনে দেয়। কিন্তু দিন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ৩৭.৫ ওভারে গিয়ে বাইরের বল মারতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ (২৬) আউট হয়ে যান। আর তিন ওভার টিকে থাকলেই দিনটিতে ২ উইকেট হারিয়ে শেষ করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু তা হলো না।
আরেকটি উইকেটও পড়তে পারত। মাহমুদুল্লাহর আউটের পর সাকিব যে ৫ রান করে নটআউট আছেন, সেখানে আউট লেখা থাকতে পারত। কিন্তু সাকিবের ক্যাচটি মিস হয়। আর তাতে করে আজ দ্বিতীয়দিনে সাকিবের ব্যাট হাতে নামাও নিশ্চিত হয়। তার সঙ্গে দিনের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল হকও নামবেন। যিনি কালেভদ্রে টেস্ট ক্রিকেট থাকলেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ পান। আর সুযোগ পেয়েই নিজেকে মেলে ধরেন। এদিনও যেমন কোন কিছুই মুমিনুলকে রান করা থেকে আটকে রাখতে পারেনি। নিজের সহজাত ব্যাটিং করে ১১০ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রান করেছেন। আর তাইতো বাংলাদেশ টেস্ট দলের সহঅধিনায়ক তামিম ইকবালের কণ্ঠে মুমিনুলকে নিয়ে প্রশংসাই শুধু ঝরেছে। তামিম বলেছেন, ‘মুমিনুল গত দুই-আড়াই বছর ধরেই খুব ভাল করছে। যদিও সে কেবল একটি সংস্করণেই (টেস্টে) খেলে। তাকে একটি টেস্ট খেলতে ছয় মাস অথবা এক বছর বসে থাকতে হয়। এসব বিবেচনায় নিলে সে দুর্দান্ত।’
বাংলাদেশ দল টেস্টে খেলতে নামার আগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ খেলেছে। পুরো সফরজুড়েই মুমিনুল দলের সঙ্গে ছিলেন। তা কাজেই দিয়েছে বলে জানান তামিম, ‘আমাদের দলের সঙ্গে প্রথম থেকেই সে আছে। এটি খুব কাজে এসেছে। অস্ট্রেলিয়াতেও সে ছিল। সেখানে সে অনুশীলন করেছে দলের সঙ্গে। যদিও আমরা ওয়ানডে ও টি২০ আগে খেলেছি। কিন্তু বিসিবি ওকে দলের সঙ্গে রেখে দিয়ে খুব ভাল করেছে। সে অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পেরেছে। এগুলো এই কন্ডিশনে ভাল খেলতে সহায়তা করেছে।’ কন্ডিশন বিবেচনায় মুমিনুল অদ্ভুত ভাল খেলেছে বলেও জানিয়েছেন তামিম, ‘অল্প টেস্ট ক্যারিয়ারে অদ্ভুত ভাল খেলে চলেছে। আমি নিশ্চিত, সে আগামীকালও (আজ) ভাল করবে। সে এমন একজন ব্যাটসম্যান, যে নিজের সীমাবদ্ধতা ও সামর্থ্যরে বাইরে খুব বেশি শট খেলে না। নিজের সামর্থ্য ভাল করে বোঝে। খেলেও সে অনুযায়ী। যা ওকে খুব ভাল ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।’ মুমিনুলের ভাল খেলার ওপরই বাংলাদেশের ভাল অবস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানান তামিম, ‘কাল (আজ) সকালে প্রথম ঘণ্টাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুমিনুল যদি নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারে, তাহলে আমরা অবশ্যই একটা সুবিধাজনক জায়গায় চলে যেতে পারব।’
দল এত ভাল করেছে কন্ডিশন জয় করে। বাতাস এতটাই তীব্র ছিল ব্যাটসম্যানদের খুবই কষ্ট হয়েছে খেলতে। তামিম তাই মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, ‘ব্যাটিং করছি, আর মনে হচ্ছে পেছন থেকে কেউ টানছে। এতটাই তীব্র বাতাস। ম্যাচ অফিসিয়ালরা শুরুর আগেই একটা কথা আমাদের বলে দিয়েছিলেন যে খুব বেশি বাতাস থাকলে সরে দাঁড়াতে। এই কারণে বেশ কবারই জায়গা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি আমরা। ৭-৮ বার বেলস পড়ে গেছে বাতাসে। আমাদের জন্য এ রকম বাতাস একদমই নতুন। এত বাতাসের ধারে কাছেও কোথাও কখনও খেলিনি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের জন্য কাজটি কঠিন ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে তো বিশ্বের আর কোথাও খেলা হয় না। সব মিলিয়ে আমরা যেভাবে সামলেছি, তা দারুণ। খুব ভাল খেলেছি আমরা। ব্যাটসম্যানদের জন্য তো আদর্শ নয় পরিস্থিতিটা। যারা উইকেটে থাকে, সবসময়ই চায় টানা যতটা খেলা যায়। কারণ সেই মনোযোগটা ধরে রাখতে হয়, বোলারদের বিপক্ষে পরিকল্পনা করা যায়। বিরতি পড়লেই সব নতুন করে শুরু করতে হয়। সব মিলিয়ে আমরা বেশ ভাল খেলেছি।’ আসলেই দল প্রথমদিনটিতে ভাল খেলেছে। সেই ভাল এখন দ্বিতীয়দিন থেকেও বজায় থাকলেই হয়। অবশেষে যে ব্যাটিং নৈপুণ্যের দেখা মিলেছে, তা ধরে রাখতে পারলেই হয়।