ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হোটেলে খাবারের বিল দেখে চোখ কপালে

বাণিজ্যমেলায় হাজীর বিরিয়ানির নামে প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

বাণিজ্যমেলায় হাজীর বিরিয়ানির নামে প্রতারণা

ওয়াজেদ হীরা ॥ চার জন মানুষের খাবারের বিল ৫০৩০ টাকা! যেখানে ত্রিশ টাকার নান রুটি দাম নেয়া হয় ১০০ টাকা আর ৩০০ টাকার চিকেন টিকার দাম ৯০০ টাকা। খাবার খেয়ে বিল দেখে কারও চোখ কপালে ওঠে, কেউ আবার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। এটি যে দিনে দুপুরে ডাকাতির চেয়েও বেশি কিছু। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার হাজীর বিরিয়ানির চিত্র এটি (রেস্টুরেন্ট-৩)। মেলায় হাজীর বিরিয়ানিসহ অধিকাংশ খাবারের দোকানেই দর্শনার্থীরা বিপাকে পড়ছেন। কারও সঙ্গে বিল নিয়ে তর্ক-বির্তক আবার হাতাহাতিও হচ্ছে। শুধু মেলা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিই পড়ছে না এসব দোকানে। সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাণিজ্যমেলায় বিরিয়ানি দোকানের নাম নিয়েই প্রতারণা করছে দোকানিরা। মেলা জুড়ে অন্তত চারটি হাজীর বিরিয়ানির দোকান পাওয়া গেছে। এর প্রত্যেকটির আগে ও পরেই ছোট করে অন্য কিছু লেখা থাকে। ওইসব বিরিয়ানির দোকানের কর্মীদেরও দেখা গেছে পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে। অন্যদিকে পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারে ৭০ আলাউদ্দিন রোডে হাজীর বিরিয়ানির মূল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্যমেলায় তাদের কোন দোকান নেই। যারা হাজীর বিরিয়ানি নামে ব্যবসা করছে তারা প্রতারণা করছে বলেই জানান হাজীর বিরিয়ানি কর্তৃপক্ষ। মেলায় দেখা গেছে, হাজীর বিরিয়ানি এন্ড কাবাব, অনিক হাজীর বিরিয়ানি এন্ড কাবাব হাউজ, নিউ হাজীর বিরিয়ানি এন্ড নিউ কাবাব ঘর, হাজীর বিরিয়ানি এন্ড কাবাব রেস্তরাঁ, হাজীর রেস্তরাঁ, হাজীর বিরিয়ানি এন্ড কাবাব ঘর নামে একাধিক খাবারের দোকান রয়েছে। জানা গেছে, বাণিজ্যমেলায় খাবারের রেস্টুরেন্টে খাবারে ভ্যাট নিচ্ছে অথচ ক্রেতার চালান কপি দিচ্ছে না। ক্রেতা চাইলে উল্টো ঝগড়া করেন। কাউকে আবার হাতে লেখা বিল ধরিয়ে দিয়ে সাথে ভ্যাট রাখা হয়। যা মূলত সরকারের কোষাগারেও যায় না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এভাবে ভ্যাট নিতে পারে না কোন প্রতিষ্ঠান আর নিলে তা সরকারী কোষাগারে জমা হয় না। যা একটা বড় ধরনের প্রতারণা। দেখা গেছে, প্রত্যেক বছর মেলা এলেই এই খাবারের দাম নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। তবে এর যেন কোন সুরাহাও নেই! ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানও চালায় মাঝেমধ্যেই। তবুও কোন সুরাহা হচ্ছে না। আর অতি মাত্রায় মূল্য নেয়ার কারণে বিরিয়ানির দোকানগুলোতে থাকে খরিদ্দারের খরাও। মেলা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত দামের তালিকা থেকে জানা গেছে, নান রুটি স্পেশাল ৬০ টাকা, সাধারণ ৩০, দেশী মুরগির চিকেন টিকা ৩০০, চিকেন বিরিয়ানি হাফ প্লেট ১৫০ আর ফুল প্লেট ২৯০ টাকা, মাটন বিরিয়ানির দামও কাছাকাছি, বিফ কাচ্চির দাম একটু কম ১৪০ হাফ এবং ফুল ২৭০ টাকা। কোমল পানীয় ও মিনারেল ওয়াটারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি। খাবারের এই মূল্য তালিকা মেলার বিভিন্ন স্থানে বিশাল লম্বা সাইনবোর্ডে সাঁটানো থাকলেও কোন দোকানে তা দেখা যায়নি। এমনকি প্রত্যেক দোকানের খাবারের টেবিলে মূল্য তালিকা দেয়ার কথা থাকলেও কেউ তা মানছেন না। অধিকাংশ দোকানেই ভোক্তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন গুণ বা কখনো তারও বেশি দাম আদায় করছে খাবারের দোকানগুলো। অথচ মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রতিটি খাবার স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রত্যেক স্টল-প্যাভিলিয়নের সামনে এবং টেবিলে খাবারের মেন্যুর সঙ্গে ইপিবি নির্ধারিত দাম প্রত্যক্ষভাবে রেখে দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু কে মানে কার নির্দেশনা। আন্তর্জাতিক মানের মেলা এটি অথচ সেখানে দিন দুপুরে দর্শকের পকেট থেকে ডাকাতি করা হলেও কারও যেন এ বিষয়ে কিছুই করার নেই! যখন কোন অভিযান পরিচালনা হয় তখন তারা মূল্য তালিকা দেখান তবে অভিযানের কর্মকর্তারা চলে গেলে প্রত্যেক টেবিল থেকে মূল্য তালিকা উঠিয়ে ফেলেন। কোন দোকানে জরিমানা হলে তা ওঠাতে আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রত্যেক খাবারের দোকানি। রবিবার মেলায় ভিআইপি গেট সংলগ্ন প্রথম হাজীর বিরিয়ানি দোকানে খাবার খেয়ে ৫০৩০ টাকা বিল দিয়েছেন তানিয়া হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তারা চারজন মেলায় ঘুরতে গিয়ে ওখানে খেয়েছেন। চারটা নানরুটি ও চারটা চিকেন টিকা খান তারা। সঙ্গে ২৫০ এমএল দুটি কোল্ডড্রিংক ও ৫০০এমএল দুটি মিনারেল ওয়াটারও নিয়েছিলেন। খাওয়া শেষে তাদের ৫ হাজার ৩০টাকার বিল দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাণিজ্যমেলার কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী এই খাবারের বিল এক হাজার ৫৪০ টাকা। ক্যাশ মেমো চাইলে সাদা কাগজে লিখে দেয়। অনেক চাপাচাপির পর সরকারী চালানপত্রে বিল করে দেয় হাজীর বিরিয়ানির কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত খাবারের মূল্য তালিকায় সকল প্রকার ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ উল্লেখ থাকলেও তারা বিলে ৭০০ টাকা অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় করেছে বলেও জানান তিনি। সোমবার ওই বিলের কপি নিয়ে হাজির বিরিয়ানিতে গেলে বিলে স্বাক্ষরকারীর নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। দোকান কর্তৃপক্ষ বলেন, এই নামে তাদের কোন কর্মচারীই নেই। বিলের কাগজে দোকানের যে নম্বর দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ফাঁকিবাজি। খাবারের কোন প্যাভিলিয়ন ওই নম্বরে বরাদ্দ নেই। ভোক্তা অধিকার আইনের মারপ্যাচ হতে বাঁচতে এমন কৌশল নিয়ে বেশি দাম নেয় বলে জানা গেছে। কেননা, নির্ধারিত প্রমাণ না থাকলে ভোক্তা অধিকারও কর্তৃপক্ষ অনেকটা নিরূপায়।
×