ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভৈরব নদ পুনর্খনন শুরু এ বছরই, বরাদ্দ ২৭২ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

ভৈরব নদ পুনর্খনন শুরু এ বছরই, বরাদ্দ ২৭২ কোটি টাকা

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভৈরব নদ পুনঃখননের লক্ষ্যে ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নদ খননের কাজ বাস্তবায়ন শুরু হবে। খননকাজ ১ জুলাই ২০১৭ থেকে শুরু করা হবে, যার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে ২০২১ সালের মধ্যে। এ লক্ষ্যে সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, ৯৬ কিলোমিটার ভৈরব নদের পুনঃখনন ও ড্রেজিংয়ের জন্য ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ খননকাজ চলতি অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে (পাউবো) যশোরের বাবলাতলা থেকে শুরু করে আফ্রাঘাট পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার ভৈরব নদ খনন ও ড্রেজিং করা হবে। এর মধ্যে বসুন্দিয়া থেকে আফ্রাঘাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার নদের ড্রেজিং করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি গত বছরের ১৬ আগস্ট একনেকের সভায় অনুমোদনও দেয়া হয়, যার প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর। সূত্রমতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টেকসই ও সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ভৈরব নদের রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি গ্রহণ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে যশোরের চৌগাছার তাহেরপুর থেকে যশোরের আফ্রাঘাট পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার ভৈরব নদ পুনঃখনন বাবদ ১৯৫৮১.০৯. লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আফ্রাঘাট থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত চার কিলোমিটার নদ ড্রেজিং করা বাবদ ১৩৯২.৩৬ লাখ টাকা, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার জীবননগর বুড়ি ভৈববের (আপার ভৈরব) সঙ্গে মাথাভাঙ্গা নদীর সংযোগ স্থাপনের জন্য ৩৩ কিলোমিটার নদী খনন বাবদ ২৮৭৯.৯৬ লাখ টাকা, ২০ কিলোমিটার দাইতলা খাল পুনঃখনন বাবদ ২৩২৫.৫৮ লাখ টাকা. ৪.৪৭৫ কিলোমিটার চারটি সংযোগ খাল পুনঃখনন বাবদ ১৭৬.৮৬ লাখ টাকা ও যশোর শহর এলাকার ভৈরব নদের দুই তীরে ১০ কিলোমিটার হেরিংবন্ড রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৭২.১৯ লাখ টাকা। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে যশোর হতে বসুন্দিয়া পর্যন্ত নদের ভাটির অংশের ৩৭ কিলোমিটার খননের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে, যার প্রথম অংশের টেন্ডার চলতি মাসেই আহ্বান করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে খনন জরিপের কাজও ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। এছাড়া নদের দু’ধারের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে একটি সার্ভে টিম গঠন করেছে, যার উচ্ছেদকাজ দ্রুত শুরু করা হবে। এলাকার ভূমিদস্যুরা ভৈরব নদের জমি দখল করে দু’পাড়ে ছোট-বড় একাধিক ভবন নির্মাণ করেছে, যা আজ পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, যশোরের তাহেরপুর পুরাতন ভৈরব নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে ভৈরব নদটি যশোর-খুলনা জেলা দিয়ে প্রবাহিত। শেষ পর্যন্ত পুরাতন ওই নদটি খুলনার রুপসা নদীতে মিলিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ নদটি অত্র অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের কৃষি, মৎস্য চাষ, যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা হতে যশোর জেলার চৌগাছার তাহেরপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৩ কিলোমিটার মাথাভাঙ্গা নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে ভৈরব নদের উৎসে প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ওই নদে জোয়ারবাহিত পলি জমে এর নাব্যও হারিয়ে গেছে। বর্তমানে ভৈরব নদটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পাশাপাশি তার প্রস্থও সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক নেতা ও ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির লাগাতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নদটির নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য তার নির্দেশে নদের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশ অনুযায়ী ভৈরব নদ পুনঃখনন এবং তার সংযোগ খালও পুনঃখননের কাজ অন্তর্ভুক্ত করে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
×