ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদ সভাপতি

নারীর উপস্থিতি বাড়াতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

নারীর উপস্থিতি বাড়াতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে কার্যকর ফলপ্রসূ অংশগ্রহণের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন নারী আন্দোলন করে চলছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও সরকারের পালাবদলে বদলেছে সময়। কিন্তু জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ও আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি হয়নি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি তথা সক্রিয় উপস্থিতি বাড়াতে হলে পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হবে।’ ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। ২০১৭’র শুরুতে রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন, এ ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান কোথায়, নারীর সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এবং নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও পাশবিকতা রোধ করতে নারী আন্দোলন কি করতে পারে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ সময় আয়েশা খানম বলেন, (১৯৯৬-২০০১) সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ ছিল। ৯ম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ১২.২ নং অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ১৯৯৭ এবং জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৮ এ এ বিষয়টি উল্লেখ ছিল এবং সর্বশেষ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ তেও ৩২.৭ নং অনুচ্ছেদে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা ও বর্ধিত সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। বাস্তব চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু এবং আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি হয়নি। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতেও কোন সংশোধন বিল আনে নি। দেরি না করে এখনই জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিধান রেখে আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধির জন্য বিল উত্থাপন করতে হবে। অন্যদিকে, নারী আন্দোলনের ফলে স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে এক- তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত নারী আসনে তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক নারী সরাসরি নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানালেন আয়েশা খানম। তার মতে, এক্ষেত্রে প্রশাসন এবং প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী, জেন্ডার সংবেদনশীল ও কার্যকর সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। জবাবদিহিমূলক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং যথাযথ সম্পদ বরাদ্দ করতে হবে, জনপ্রতিনিধির দায়দায়িত্ব সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের অন্যতম সহসভাপতি এবং আন্দোলন উপপরিষদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রেখা চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দাবি রাখা হয়Ñ অবিলম্বে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সরাসরি নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি করতে হবে। এই ব্যবস্থা কমপক্ষে ২ টার্মের জন্য বলবৎ থাকবে। এজন্য নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য সংবিধান সংশোধন করা বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচনে ৩৩% নারীকে মনোনয়ন দেয়া। জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) ২০১৩ অনুসারে- ‘রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা এবং এই লক্ষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা তাও অনুসরণ করা। রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর মৌলিক ক্ষমতায়নের পথকে অস্বীকার করে নারীকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আয়েশা খানম। এ সময় তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি নারী ব্যবহার করা। আর তারই ফল হিসেবে আমরা দেখি নারীর ক্ষুদ্র, বিচ্ছিন্ন একটি অংশ আজ জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। সমাজের এই অংশে আমরা তরুণদের একাংশেরও অংশগ্রহণ দেখি। নারীকে জঙ্গীবাদ থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে নারী আন্দোলনও অব্যাহতভাবে কাজ চালিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৬ তে বিশেষ বিধান বাতিল করার আহ্বান জানান আয়েশা খানম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ ও সীমা মোসলেম, এ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জনা গোস্বামীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেত্রী ও সংগঠক।
×