ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইন বিষয়ক কর্মশালায় এনবিআর চেয়ারম্যান

নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়াম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেছেন, ভ্যাট আইনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সকল সুপারিশ সুবিবেচনায় এনে জাতীয় স্বার্থে যা যা করা দরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাই করবে। অর্থমন্ত্রী শিগগিরই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে বসবেন। নতুন ভ্যাট আইনের ক্ষেত্রে আমাদের সেøাগান হবে- ভ্যাট আইন হবে পানির মতো স্বচ্ছ ও সহজ। রবিবার সকালে রাজধানীর আইডিইবি ভবনে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প কার্যালয়ে ক্ষুদ্র্র ও মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ বিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিশ^ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন সূচকে ১৯৮টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। ব্যবসার পরিবেশ সূচক উন্নয়ন করার জন্য আইন সহজীকরণ, হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদান, জনবান্ধব অফিসে রূপান্তর ও ব্যবসায়ীদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এসব করতে পারলে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। সবাই চেষ্টা করলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা দুই সংখ্যায় নামিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবসায়ীসহ দেশের জনগণের কাছে রাষ্ট্রের আমানত। রাষ্ট্রকে রাজস্ব না দিয়ে আমানতের খেয়ানত করলে পরপারে হিসাব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, করফাঁকি দিয়ে আমরা মনে করতে পারি ১৬ কোটি মানুষকে ঠকালাম। আসলে আমরা নিজেরাই ঠকে গেলাম। পাশাপাশি রাজস্ব না দিয়ে মানুষের হক নষ্ট না করার জন্যও আহ্বান জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা দেশের অগ্রগতিতে মূল ভূমিকা পালন করছেন। নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বিষয়ে তাদের সম্যক ধারণা থাকা একান্ত অপরিহার্য। এজন্য তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে আমরা পার্টনারশিপ স্থাপন করেছি। নতুন এ আইন সম্পর্কে আমরা এফবিসিসিআই এর প্রতিনিধিদের টিওটি (প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ) প্রদান করে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকগণ মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রত্যেকে একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন। নতুন আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন মূসক আইন বাস্তবায়নে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব স্থাপন করা হচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা গুরুরা হবে এ আইনের জনমত সৃষ্টিকারী প্রধান ব্যক্তি। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান এ চার ধর্মের যারা শিক্ষাগুরু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যারা দেখাশোনা করেন তাদের ভ্যাটের পাশাপাশি আয়কর ও শুল্ক বিষয়েও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব। এ অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কর্মশালায় বক্তারা ভ্যাট আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে বক্তারা বলেন, নতুন মূসক আইন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, যুগোপযোগী ও সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে ছোট-বড় কোন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ব্যবসায় স্বচ্ছতা আসার পাশাপাশি পূর্বের আইনের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী যাদের বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লক্ষ টাকার উপরে নয় তাদের কোন কর প্রদান করতে হবে না। যাদের বার্ষিক টার্নওভার ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা তারা ৩% হারে টার্নওভার কর প্রদান করতে হবে। অনলাইনে নিবন্ধন নেয়া ও রিটার্ন দাখিল করা যাবে। রেয়াত ও রিফান্ড (ফেরত) ব্যবস্থা সহজ করা হয়েছে। ১৬৫৫৫ নম্বরে কল করে ভ্যাট সংক্রান্ত যেকোন সেবা পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হবে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’। সে লক্ষ্যে চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। সৎ ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে চায় এনবিআর নতুন শিল্পোদ্যোক্তা ও সৎ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনায় প্রণোদনা দিতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শনিবার গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সৎ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ও নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রণোদনা, সুযোগ ও ছাড় দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ সুযোগ অব্যাহত থাকবে। তবে যারা ব্যবসার সুযোগ নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সর্বত্র ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে, এনবিআর আর ব্যবসায়ীরা হাত ও হাত মোজার মতো একযোগে কাজ করছে।’ বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রচুর রাজস্ব প্রয়োজন উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে রাজস্ব বাড়বে, রাজস্ব বাড়লে দেশের উন্নয়ন হবে। সরকারের ভিশনও বাস্তবায়ন করা হবে। এ কারণে সৎ ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে এনবিআর। ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ছাড়ের পাশাপাশি নতুন নতুন কারখানা গড়ে তোলার জন্যও রাজস্ব ছাড় দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও রাজস্ব ছাড় দেয়া হবে।’
×