ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহনেওয়াজ চৌধুরী

অভিমত ॥ ঐক্যই সাফল্য ধরে রাখতে পারে

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

অভিমত ॥ ঐক্যই সাফল্য ধরে রাখতে পারে

জাতীয় নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে শেষ হলো নারায়াণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রার্থী নমিনেশন থেকে শুরু করে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা বিরাজ করেছে এ নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলই এ নির্বাচনকে ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে নিয়েছিল। দল দুটি যেভাবেই দেখুক দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির নারায়াণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি দেশের মানুষ ইতিবাচক হিসেবে দেখেছে। সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচিত হলেও অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হলেও বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ইমেজ কিছুটা হলেও দেশের মানুষের কাছে ফিঁকে হয়েছে। বিএনপির এই অর্জনই-বা কম কীসে? তাছাড়া সিটিতে নির্বাচিত কাউন্সিলদের সংখ্যায় বিএনপি এগিয়ে- বিএনপির ১৬, আওয়ামী লীগের ১২ কাউন্সিলর। তবে বিএনপি যে বলে আসছিল অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে, দলটির এমন ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। কেননা, এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে- প্রার্থী সৎ ও যোগ্য হলে জনগণ তাকে সমর্থন দেবেই। সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়েই নারায়ণগঞ্জের নগরবাসীর কাছে এই আস্থা অর্জন করেছেন- নগরকে তিনি আধুনিক করে গড়ে তুলতে চান। ব্যক্তি আইভী আচরণেও সব দলের কাছে আস্থাভাজন। তাই শুধু নিজ দলই নয়, অন্যান্য দলের সমর্থকদের কাছেও তার সমান জনপ্রিয়তা। তাছাড়া নারী প্রার্থী হওয়ার সুবাদে নারী ভোটাররাও তাকে বেশি সমর্থন দিয়ে থাকতে পারেন! নির্বাচনী ফলাফলের হিসাব কষাকষিতে এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপির মতো একটি বড় দলের যেন তাড়াহুড়া হয়ে গেছে। প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত এটি চোখে পড়েছে। ভবিষ্যতে আরও ভাল প্রস্তুতি নিতে হবে। এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ২৫ দফা নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে ভোটারদের কাছে গেছেন নির্বাচনী প্রচার বন্ধের মাত্র একদিন আগে। নারায়ণগঞ্জ নগরে বিএনপির তিন ভাগে গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়েছে তাদের দলীয় প্রার্থীর জয়ের ক্ষেত্রে। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে শামীম ওসমান আর সেলিনা হায়াৎ আইভীর তথাকথিত দ্বন্দ্ব আওয়ামী লীগ থামাতে পারলেও নিজ দলের গ্রুপিংয়ের টুঁটি চেপে ধরতে পারেনি বিএনপি। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয় লাভ করলে শামীম-আইভীর তথাকথিত দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে এবং এ থেকে সুবিধা নেবে বিএনপি, দলটির এমন রাজনৈতিক কৌশলও ভেস্তে গেছে। তবে এ নির্বাচন বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহকে জানান দিয়েছে, যা তাদের স্থানীয় নেতাকর্মীর জাতীয় নির্বাচনে কাজ করার উৎসাহকে উসকে দেবে। হতাশা থেকে বের করে আনবে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যে অভিযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ করে আসছে, তা থেকে কিছুটা হলেও নিস্তার পেল বিএনপি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার সদিচ্ছা আওয়ামী লীগেরও ছিল। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে এ নির্বাচনে এতটুকু প্রভাব বিস্তার করেনি দলটি। একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন উপহার দিতে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেই তা বোঝা যায়- ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জাতিকে দেয়া ওয়াদা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।’ সাংসদ শামীম ওসমানও তার প্রচলিত খোলস থেকে বেরিয়ে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত এবং দলের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে আইভীকে ‘বোন’ অভিহিত করে বলেছিলেন- ‘আইভী যোগ্য প্রার্থী। তাকে জয়ী করে আনবই।’ আরও বলেছেন- ‘আইভীর বিজয় সুনিশ্চিত করা আমাদের পক্ষ থেকে হবে আইভীর জন্য সারপ্রাইজ।’ শামীম ওসমান কথা রেখেছেন। আইভী বিজয়ী হয়েছেন। অথচ নির্বাচনের কিছুদিন আগেও শামীম ওসমানের বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক এ কে এম সামসুজ্জোহাকে নিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী বিরূপ মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তাতে শামীম-আইভীর তথাকথিত দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে গিয়ে সাময়িক সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত তা নিরসনও হয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ওয়ান ইলেভেনের সময়েও দলের ঐক্য আওয়ামী লীগকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। পর পর দু’বার ক্ষমতায় আসীন হয়েছে দলটি এবং এমন দৃঢ় ঐক্যের সুবাদে আগামীতেও অসীন হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলে এ ধরনের ঐক্য থাকা প্রয়োজন। নাসিক নির্বাচনে কোন ভোট কারচুপির অভিযোগ ছিল না। কারচুপির অভিযোগ থাকলে সাধারণ কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রার্থীরা বেশি নির্বাচিত হলেন কীভাবে? নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপও (ইডব্লিউজি) স্বীকার করেছেÑ এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। মূলত ইলেকশন কমিশনকে সরকার কাজ করার সুযোগ দেয়াতে তারা একটি সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছে। সরকারের অধীনেও নির্বাচন সফল হতে পারে নাসিক নির্বাচন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৯ হাজারের বেশি সদস্য সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। তাদের ওপরেও কোন প্রভাব ছিল না। এমন স্বচ্ছ নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। যে কোন দেশে এমন স্বচ্ছ নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুগঠিত করে। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রগহণভিত্তিক নির্বাচন জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক। লেখক : চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক
×