ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশের হার ৪৭ রানে

টি২০ সিরিজেও বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

টি২০ সিরিজেও বেহাল দশা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম টি২০ হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল। কিন্তু আরেকটি বড় পরাজয়ে সিরিজটাই এক ম্যাচ বাকি থাকতে হাতছাড়া করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে শুক্রবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে ৪৭ রানে হেরেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। আগে ব্যাট করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড কলিন মুনরোর সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ১৯৫ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে। জবাবে ১১ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৮ রানে। ম্যাচে বাংলাদেশের পেস কিংবা স্পিন কোন আক্রমণই তেমন পাত্তা পায়নি। কিন্তু কিউইদের স্পিনাররাই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে দেন। এবার নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং-এ তিন বিভাগেই চরম দুর্দশা দেখিয়ে হোয়াইটওয়াশ হয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দুই টি২০ ম্যাচে সেই বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সফরকারীরা। এবার টি২০ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়ার শঙ্কা। টস জিতে আগে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে টস জেতার পর আগে ব্যাট করে ফলাফল নিজেদের পক্ষে আসেনি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টস নামের ভাগ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাশরাফি। শুরুটাও দারুণ হয়েছিল অধিনায়ক মাশরাফির জ্বলে ওঠার কারণে। ইনিংসের প্রথম বলেই তিনি ফিরিয়ে দেন ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা লুক রনকিকে ফিরিয়ে দিয়ে। নেইল ব্রুমের ইনজুরির কারণে রনকি ওপেনিং করতে নেমেছিলেন। শুরুর এই ধাক্কাটা অবশ্য তোয়াক্কাই করেনি কিউই ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে সঙ্গ দিতে নেমে মুনরো রীতিমতো তা-ব শুরু করেন। মুনরো ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাদেশের বোলারদের ভুগিয়েছিলেন। আবারও একই ঝড় শুরু করেন। যদিও প্রথম টি২০ ম্যাচে তাকে শূন্য রানেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে এদিন কাটার মাস্টারের শুরুটা তেমন ভাল হয়নি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বোলিং করতে এসেই ১০ রান দেন নিজের প্রথম ওভারে। অবশ্য উইলিয়ামসন এদিন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সাকিব আল হাসানের বাঁহাতি স্পিনে আত্মসমর্পণ করে সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ১২ রান করে। পঞ্চম ওভারে তার বিদায়ের পরবর্তী ওভারেই কোরি এ্যান্ডারসনকে শিকার করেন মোসাদ্দেক হোসেন। মাত্র ৪৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদের মধ্যেই ছিল কিউইরা। বাংলাদেশের বোলারদের শুরুটাও বেশ ভালই মনে হচ্ছিল। পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছেন মুনরো ও টম ব্রুস। চতুর্থ উইকেটে তারা ১২৩ রানের জুটি গড়েন। সেটাও মাত্র ৬৭ বলে। এ দু’জনের টর্নেডো ব্যাটিংয়ের সামনে তছনছ হয়ে গেছে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ। এমনকি বাংলাদেশের বোলিং স্তম্ভ মুস্তাফিজকেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই মোকাবেলা করেছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্যই থেকেছেন তিনি। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের করা ১৩তম ওভারেই সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা হয়েছে। ওই ওভারে তিনি তিনটি ছয় ও দুটি চারসহ মুনরোকে দিয়েছেন ২৮ রান। তবে পেসার রুবেল নিজের শেষ দুই স্পেলে দারুণ বোলিং করেছেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ১২ ও দশম ওভারে ১২ রান দিয়েছিলেন তিনি। তবে ১৭তম ওভারে এসে তিনি আঘাত হানেন, ফিরিয়ে দেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পাওয়া মুনরোকে। আক্রমণাত্মক এ ব্যাটসম্যান মাত্র ৫৪ বলে ৭ চার ও ৭ ছক্কায় ১০১ রান করেছিলেন। একই ওভারের শেষ বলে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকেও বোল্ড করে বাংলাদেশ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি আনেন রুবেল। কিন্তু থামানো যায়নি ব্রুসকে। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তিনি আদায় করে শেষ পর্যন্ত থেকেছেন অপরাজিত। ৩৯ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রান করেন তিনি। ইনিংসের ২০তম ওভারে জেমস নিশামকেও বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন রুবেল। ওই ওভারে মিচেল স্যান্টনারও রানআউট হন। শেষ দুই ওভারে রুবেল ১৩ রান দিয়ে দেন ৩ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ১৯৫ রানে থামে কিউইরা। জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েস ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাজঘরে ফেরেন স্পিনার স্যান্টনারের বলে। তামিম ইকবালও ১৩ রান করার পর রানআউটের শিকার হন। সাকিব নেমে এর ঠিক পরের ওভারেই বেন হুইলারের কাছে উইকেট দিয়ে ফিরে আসেন। মাত্র ৩৬ রানে তিন ব্যাটসম্যানের বিদায়, তখন মাত্র ৪ ওভার শেষ হয়েছে। বিশাল সংগ্রহ ছোঁয়ার লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে সফরকারীরা। সেই করুণ দশার উন্নতি ঘটিয়ে ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকার। দীর্ঘদিন পর আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন এ ম্যাচে তরুণ সৌম্য। চতুর্থ উইকেটে ৪০ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন এ দু’জন। সৌম্য ২৬ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের পেসে উইকেট হারান। গত ৯ টি২০ ইনিংসে সৌম্য দুটি মাত্র ২০ পেরোন ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন। আর গত ৪ ওয়ানডেতেও ব্যর্থ এ টপঅর্ডার অবশেষে ভাল একটি ইনিংস খেলতে পারলেন। সৌম্যের বিদায়ের পরই চিরাচরিত নিয়মে ঝপ করে বিপর্যয় নেমে আসে বাংলাদেশ ইনিংসে। দারুণ খেলতে থাকা সাব্বিরও ৩২ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৮ রান করে ফিরে যান আরেক স্পিনার ইশ সোধির বলে। বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডারটা মুড়িয়ে দিয়েছেন এই স্পিনাররাই। স্যান্টনার, সোধির সঙ্গে অনিয়মিত স্পিন নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেন উইলিয়ামসন। অন্যতম ভরসা মাহমুদুল্লাহ দেখে শুনে শুরু করলেও ১৯ রানের বেশি করতে পারেননি। কিউই স্পিনের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণের চেয়ে যেন উইকেট ছুড়েই দিয়ে এসেছেন মোসাদ্দেক, নুরুল হাসান সোহান, মাশরাফি মর্তুজারা। শেষ পর্যন্ত ১৮.১ ওভারে ১৪৮ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। সোধি ৩টি ও উইলিয়ামসন ২টি উইকেট নেন। ৪৭ রানের বড় পরাজয়ে আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। ওয়ানডে সিরিজের পর টি২০ সিরিজেও বেহাল দশাটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২-০ ব্যবধানে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ জিতে নিয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। এ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হওয়ার দানা বেঁধে ওঠা শঙ্কায় আছে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ।
×