ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ রিপোর্টের তথ্য : বছরে ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

জলবায়ু পরিবর্তন- ২০ বছরে সোয়া ৪ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

জলবায়ু পরিবর্তন- ২০ বছরে সোয়া ৪ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বিচারে শীর্ষ দশটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে রয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার কমপক্ষে ৯৫ ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের ৪.২ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় আইডিবি ভবনের ইউএন মিটিং রুমে ইউএনআইসি আয়োজিত ‘বিশ্ব অর্থনীতি ও সামাজিক জরিপ, ২০১৬ : জলবায়ু পরিবর্তনের স্থিতিস্থাপকতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে করণীয় দিকগুলো প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। জলবায়ু পরির্তনে সরকার যেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইউএনআইসির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান। এ সময় নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলবর্তী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্থায়ীভাবে নিজ নিজ এলাকায় বসবাস করতে পারছে না। বন্যা, খরা, বৃষ্টিপাত হ্রাস, সুপেয় পানির অভাব, লবণাক্ততা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ রোজগারের আশায় ঢাকা শহরে আসছে। বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসছে। তারা ফুটপাথসহ বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করছে। শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই তারা গৃহহারা। এই প্রভাব মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে দরিদ্রের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গত ২০ বছরে, বাংলাদেশের ৪.২ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। অনেকেই আবার গৃহহারা হয়েছে। বাংলাদেশসহ উন্নত দেশগুলোও এই সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের দেশগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, যার ফলে জিডিপি অন্তত ৫ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নেমে আসছে। জলবায়ুর ক্ষতির জন্য উন্নত বিশ্ব দায়ী হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তবে আলোচনা জোরদারের মাধ্যমে-এর সমাধান করার উদ্যোগ নিতে হবে।’ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যিই জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমাগত বাড়ছে। এজন্য স্বল্পআয়ের দেশসহ উন্নত দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে পিছিয়ে পড়ছে। এজন্য অর্থনৈতিকভাবে বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জিডিপির পরিমাণ কমছে। নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের বদ্ধপরিকর থাকতে হবে। এজন্য স্বল্প আয়ের পিছিয়ে পড়া দেশগুলোকে আর্থসামাজিকভাবে এসডিজির আওতায় এনে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে।’ এ সময় নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন স্থিতিস্থাপকতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অসমতা নেক্সাস, সম্পূর্ণ অসাম্যমূলক জলবায়ুু মূল্যায়ন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য, সুসঙ্গত অংশগ্রহণমূলক এবং অভিযোজিত নীতিনির্ধারণী ও জলবায়ুর প্রাণবন্ত উন্নয়নে বর্ধিত সহযোগিতা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে পারব বলে আশা করছি। এজন্য সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দেশগুলোর সহায়তাও যেন আমরা বাংলাদেশের বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে পারি এজন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এটি এখন একটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মাত্র।’ অনুষ্ঠানে ইউএনডিপির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস কোইয়োকো ইয়োকোসুকা বলেন, ‘এরই মধ্যে জাতিসংঘ জলবায়ুর ক্ষতির মুখে থাকা মানুষের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তা বরাদ্দ করেছে। এছাড়া এ বিষয়ে সর্বদা সরকারের পাশে থেকে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
×