ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ পৌষের কাছাকাছি, রোদ মাখা সেই দিন/ফিরে আর আসবে কি কখনো?/ফিরে আর আসবে কি কখনো...। ফিরে এসেছে পৌষ। এসেছে মানে, আজ কালের কথা নয়, আরও আগে এসেছে। আজ শুক্রবার ২৩ পৌষ। বাংলা এই মাসের প্রথম দিন থেকে আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছে শীতকালের। কিন্তু অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও শীতের দেখা পাচ্ছিলেন না রাজধানীবাসী। আসি আসি বলে জোসনা ফাঁকি দিয়েছে...। বেদের মেয়ে জোসনার মতো ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছিল শীত! তবে গত কয়েকদিনে বদলে গেছে দৃশ্যপট। পৌষের শেষ বেলায় এসে রাজধানী শহর ঢাকায় অনুভূত হচ্ছে শীত। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পরিপূর্ণ শীতের আমেজ ছিল। সকালে নির্ধারিত সময়ে ঘুম থেকে উঠেও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। কুয়াশায় ডুবে ছিল ভোরবেলাটা। আর সন্ধ্যায় যোগ হয় ঠা-া বাতাস। এভাবে মোটামুটি স্বরূপে ফিরতে দেখা যায় শীতকে। যারা এতদিন হেলা ফেলা করেছেন, শীতবস্ত্র নিয়ে ঘর থেকে বের হননি তারা ‘সাইজ’ হয়ে গেছেন! এখন সবাই পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতবস্ত্র গায়ে জড়িয়ে তার পর বের হচ্ছেন। অনেকেই শীত উপভোগে ব্যস্ত। শহরের হতদরিদ্ররাও বাদ যাচ্ছেন না। সন্ধ্যা নামতেই খড়কুটো জমিয়ে আগুনের ব্যবস্থা করছেন। তার পর চলছে হাত শেকে নেয়ার কাজ। একইসঙ্গে আড্ডা হচ্ছে। গল্প হচ্ছে। দেখে বোঝা যায় শীত আসায় খুব বেশি অখুশি নন তারা। সাম্প্রতিক সময়ের এই শীত নিয়ে কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল আমিনের সঙ্গে। টিএসসিতে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার এক ফাঁকে তিনি বললেন, বাংলাদেশ আর ষড়ঋতুর দেশ হয়ে নেই। এলোমেলো প্রকৃতি। অচেনা ওয়েদার। এর পর কৌতুক করার চেষ্টা। বলেন, এবারতো শীত খোঁজলাম গরু খোঁজার মতো করে। ভবিষ্যতে রাজধানীবাসীকে হয়ত শীত কী তা জানতে উত্তরবঙ্গে যেতে হবে। অবশ্য এখনও মাঘের বাকি। বলা হয়ে থাকেÑ মাঘের শীতে বাঘ পালায়। আর মাত্র কয়েক দিন পর মাঘ। দেখা যাক কতটা পালায়। নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে থাকবেন রাজধানীবাসী! নতুন বছরের কথায় আসা যাক। শুরু হয়েছে আরও একটি বছর। ২০১৭ সালের প্রথম দিনটি ব্যাপক ধুমধামে কাটিয়েছেন রাজধানীবাসী। পুলিশের তৎপরতাও কম ছিল না। বর্ষবরণের রাতে ঢাকার প্রায় সব রাস্তার দখল নেন তারা। উৎসব অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য জায়গাগুলো অনেকটা সিলগালা করে দেয়া হয়। সবই নিরাপত্তার স্বার্থে। এ কাজে নিয়োজিত ছিল ১০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। কোথাও সাধারণ মানুষের দেখা পেলে তারা সজোরে হুইসেল বাজিয়েছেন। তরুণরা কোথাও দাঁড়াতে পারেননি। এ অবস্থায় বিকল্প পথে শুরু হয় উদ্যাপন। রাত ১২টা বাজার আগে আগে বিভিন্ন বাড়ির অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা ছাদে অবস্থান নেয়। প্রথম প্রহরে শুরু হয়ে যায় আতশবাজি। রাতের আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে। কানে আসতে থাকে পটকা ফোটানোর বিকট আওয়াজ। বাড়িতে বাড়িতে আয়োজন করা বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দেন ‘মুরব্বিরাও।’ এভাবে বেশ হাসিরাশি আনন্দে কাটে প্রথম দিন। অবশ্য ওই রাতে ভোগান্তিতে পড়া মানুষজন পুলিশের উপর ভীষণ বিরক্ত। তাদের অভিযোগ, পুলিশের কাজ নিরাপত্তা দেয়া। তারা সে কষ্ট করতে যাননি। সব বন্ধ করে দিয়েছেন। নিরাপত্তা দেয়া আর সব বন্ধ করা তো এক কথা হলো না। হলো? এবার দুর্যোগের কথা। নতুন বছরের শুরুতেই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে সারাদেশ। মঙ্গলবার বিকেল ও রাতে দুই দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাদ যায়নি ঢাকা। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয় বাংলাদেশ থেকে ১৭৬ কিলোমিটার পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত এলাকায়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরার আম্বাসা থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। উৎ?পত্তিস্থলে ভূ-উপরিভাগ থেকে ৩৬.১ কিলোমিটার গভীর থেকে এটির উৎপত্তি হয়েছে। গত বছরের শুরুতেও ৪ জানুয়ারি ভোর রাতে একইরকম কেঁপে উঠেছিল সারাদেশ। তবে গত বছরের ভূমিকম্পটি শক্তিশালী মাত্রার হলেও এবারের ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল মাঝারি। অবশ্য তাতে উদ্বেগ কিছু কমছে না। গবেষকরা বলছেন, টেকটোনিক প্লেট কাঠামো, বাংলাদেশের অবস্থানগত কারণসহ বিভিন্ন কারণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্পনপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ভারত প্লেটের অংশ এবং উত্তর-পূর্বে ৩টি প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত। এ কারণে ভূমিকম্প নিয়ে শঙ্কা বেশি রয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব প্লেটের গতি নির্ণয় করে দেখা গেছে, ভারত প্লেট ইউরেশিয়া বর্মা প্লেট বাউন্ডারিতে গিয়ে আটকে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের ভেতরের ভূত্বকে প্রচুর পরিমাণ শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কাছাকাছি সময়ে সোমবার দিবাগত রাতে গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বিশাল মার্কেট থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। আগুনে পুড়ে ছাই মার্কেটের সামনে এদিনও ছিল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। ক্ষতিগ্রস্তদের কান্না থামেনি। কে এই আহাজারি থামাবে? কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন ব্যবসায়ীরা? সবাই আশ্বাস দিচ্ছেন। আশ্বাস সত্য হোক।
×