ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত বছর বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ

নতুন বছর মানেই বাড়িভাড়া বৃদ্ধির খ—গ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

নতুন বছর মানেই বাড়িভাড়া বৃদ্ধির খ—গ

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ নতুন বছর মানেই বাড়িভাড়ায় যোগ হবে বাড়তি টাকা। রাজধানীবাসী যেন এ বিষয়টি বাধ্য হয়ে মেনে নিয়ে বসবাস করছে। বছর বছর বাড়ছে বাড়িভাড়া। রাজধানীতে ২০১৬ সালে বাড়িভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছর নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের তুলনায় প্রাায় দেড়গুণ হারে বাড়িভাড়া বেড়েছে। গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৮৮ শতাংশ। অথচ একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে ২৫ বছর আগে আইন হলেও বিধিমালা হয়নি। নেই আইনের প্রয়োগ। ২৫ বছরেও আইনের প্রয়োগ নেই। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত অধ্যাদেশটি প্রথম জারি করা হয় ১৯৬৩ সালে। বর্তমানে প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি ১৯৯১ সালের। কিন্তু সরকার এখনও এ আইনের বিধি করেনি। আইনে বলা হয়েছে, কোন ভাড়াটের কাছে জামানত বা কোন টাকা দাবি করতে পারবেন না বাড়িওয়ালা। এক মাসের বেশি অগ্রিম ভাড়া নেয়া যাবে না। প্রতি মাসে ভাড়া নেয়ার রসিদ দিতে হবে, নইলে বাড়িওয়ালা অর্থদ-ে দ-িত হবেন। দুই বছর পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো যাবে না। ভাড়াটেদের স্বার্থরক্ষায় এমন আরও অনেক কথাই উল্লেখ আছে এ আইনে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের জন্য সর্বোচ্চ আদালত রায়ও দিয়েছিল। দেড় বছর পেরোলেও সে কমিশন এখনও গঠিত হয়নি। এরই মধ্যে প্রতিবারের মতো এবারও বছরের শুরুতে বাড়ির মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানম-ি, ফার্মগেট, উত্তরা, মালিবাগ, এলাকার বেশ কয়েকজন ভাড়াটের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, এলাকাভেদে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর নোটিস পাঠিয়েছেন বাড়ির মালিকরা। এতে ভাড়াটেরা ক্ষুব্ধ হলেও বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে তাদের। মিরপুর এলাকায় দুই কক্ষের একটি বাসা পাঁচ বছর আগে ব্যাংক কর্মকর্তা ইকবাল চৌধুরী ১৩ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতি বছর এক হাজার টাকা করে বাড়তে বাড়তে এখন পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে তাকে। এ বছরও এক হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। ইকবাল বলেন, ‘বাসা পাল্টানো খুবই কষ্টের কাজ। এছাড়া বাসা থেকে আমার অফিস ও মেয়ের স্কুল পাশাপাশি হওয়ায় বাসাটি ছাড়তে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই থাকতে হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট হারে যদি বাড়িভাড়া বাড়ানো হয় তাহলে আমরা উপকৃত হব।’ ধানম-ি ১৫ নম্বরের মিতালী রোডের একটি বাড়িতে মা ও বোনকে নিয়ে থাকেন তাহমিনা ইশরাত। পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের তিনতলায় পাশাপাশি দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন তিনি। অন্য একটি ফ্ল্যাটে বিউটি পার্লার খুলেছেন তিনি। টানা তিন বছর ধরে তাহমিনা এ বাসায় আছেন। ১২ হাজার টাকায় ভাড়া নিলেও প্রতি বছর ভাড়া বাড়ায় এখন তাকে দুটি ফ্ল্যাট মিলে বাড়তি ১০ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। তাহমিনা বলেন, ‘ব্যবসার কারণে আমি বাসা পাল্টাতে পারছি না। কারণ জায়গা পাল্টালে অনেক কাস্টমার হারাতে হয়। এ সুযোগ নিয়েই বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া বাড়াচ্ছে। অন্যদের এক হাজার বাড়ালেও আমার বাসার ভাড়া বাড়ানো হয় ১৫০০ টাকা। কারণ আমি বাসা ভাড়া নিয়ে বিউটি পার্লার খুলে ব্যবসা করছি। এজন্য বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি।’ তবে বাড়িভাড়া বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বাড়িওয়ালারা বলছেন, নির্মাণসামগ্রী, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, নিত্যপণ্যের দামÑ এ সবকিছুর জন্যই নাকি ভাড়া বাড়নো হচ্ছে। মোহাম্মদপুর এলাকার একজন বাড়িওয়ালা বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়লে বাড়িভাড়া বাড়বে না কেন? বাড়িওয়ালা অন্যায্যভাবে ভাড়া বাড়াচ্ছেন এটা ঠিক নয়।
×