ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ

সব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যাবে এগিয়ে...

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

সব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যাবে এগিয়ে...

১৯৪৮ সালে দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে অঙ্কুরিত বীজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শিক্ষা, শান্তি আর প্রগতির মশাল নিয়ে জাতীয় সকল সঙ্কটে, সংগ্রামে ও সম্ভাবনায় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আজ ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে সুবিস্তীর্ণ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঐতিহ্যবাহী পতাকাতলে লাখ লাখ তরুণপ্রাণ। এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিধৌত প্রজন্ম। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালী জাতির পিতা, বাঙালী জাতির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিজ হাতে গড়া সংগঠন, তাঁর জীবন ও যৌবনের সমর্পিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা সংগঠন, তাঁর সোনার বাংলা বিনির্মাণের সুদক্ষ কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সময়ের প্রয়োজনে জন্ম নেয়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সময়ের সাহসী সন্তানদের নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণকল্পে শ্বাপদসঙ্কুল পথে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলেছে। জন্মলগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালীর স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তানী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘপথ চলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী নিজের জীবনকে অকাতরে উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোন পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়া দেব। তবু সাক্ষাত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ বঙ্গবন্ধুর কথাতেই তাঁর একান্ত অনুগত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সতের হাজার নেতাকর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এক সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র। সেইসব বীর যোদ্ধারাই আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি, আমাদের সাহস। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করে। শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহায়-সম্বলহারা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র ও জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক অবদান রেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালী জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন এ দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাকল্পে কাজ করছিলেন ঠিক তখনই পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের নীলনক্সা অনুযায়ী কিছু এদেশীয় কুলাঙ্গার আমাদের জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালের নবেম্বরে রাজপথে প্রথম যে মিছিলটি হয়েছিল সেই মিছিলের অগ্রসৈনিকরা ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর এক হৃদয়বিদারক অথচ উদ্দীপক সেøাগানে মুখোরিত হয় : ‘এক মুজিবের রক্ত থেকে/লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে’। পিতা হারানোর বেদনাহত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মুজিববিহীন বাংলায় আমাদের প্রিয় নেত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেছে। পঁচাত্তর পরবর্তী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশ যে কালো মেঘ গ্রাস করেছিল, সেই মেঘ সরাতে প্রত্যাশার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালে প্রত্যাবর্তন করলেন আমাদের প্রাণের নেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা। প্রিয় নেত্রীকে ফিরে পেয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নবোদ্যমে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে পড়ে। এর মধ্যে ১৯৮৩ সালের শিক্ষা আন্দোলন ও দশ দফা, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করানো, ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন, ২০০২ সালের ২৩ জুলাই বিএনপির পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ও ছাত্রদলের ক্যাডারদের কর্তৃক গভীর রাতে শামসুন্নাহার হলে ঢুকে ছাত্রীদের শারীরিকভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিতর্কিত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে আটক আমাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন উল্লেখ্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে যখন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াওয়ের অপরাজনীতি চলছিল, যখন বাসে, ট্রাকে মানুষের বাড়িতে, মানুষের শরীরে পেট্রোলবোমার লেলিহান শিখা জ্বলছিল তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশ ও জনতার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে রাত জেগে পাড়ায়-মহল্লায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাহারা দিয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। যুগে যুগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অসীম সাহসিকতার এসব উজ্জ্বল উদাহরণই প্রমাণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথের প্রমিথিউস। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দাঁড়িয়েছে সন্তানের ভূমিকায়। ২০০৭ সালের সিডর ও ২০০৯ সালের আইলায় বিধ্বস্ত জনপদের মানুষের প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাড়িয়ে দিয়েছে মানবতার হাত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজী নজরুলের কবিতার মতোই ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী; আর হাতে রণতূর্য।’ আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি দুস্থ শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, পথশিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ পাঠদান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের চর্চা। এছাড়া ‘ক্লিন ক্যাম্পাস-সেফ ক্যাম্পাস’ কর্মসূচী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বহুমাত্রিক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। আমাদের অভিভাবক, দেশরতœ শেখ হাসিনা আমাদের বলেছেন, ‘উন্নত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়তে চাই। কারণ আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো নেতৃত্ব আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে আদর্শবান নেতা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে।’ বাংলাদেশে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী এখন নিজেদের সেভাবেই গড়ে তুলছে। ছাত্রলীগের কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে প্রিয় নেত্রী বলেছেন, ‘কেউ যেন বিপথে না যায় তা দেখতে হবে। অসৎ পথে চলার পথ আমাদের না। আমাদের চলতে হবে একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে।’ আমরাও আমাদের নেত্রীর কাছে নীতি ও আদর্শিক অক্ষুণœতার প্রসঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সেশনজট নেই, শিক্ষার্থীরা নির্বিঘেœ পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত বসে শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা ও চাহিদার কথা প্রশাসনকে জানাচ্ছে প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে বহুমাত্রিক উন্নয়ন কর্মকা হাতে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান, দেশরতœ শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদকে প্রতিহত করতে হবে। মাননীয় নেত্রী বলেছেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তি, তাদের দোসর এবং এ দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা এক জোট হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’ সুতরাং আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশের সকল অর্জনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম। তাই তো দেশরতœ শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচী গ্রহণ করবে ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ভূমিকা পালন করব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রদর্শন করবে। মাননীয় নেত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন করবে, সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থাকবে প্রাণভোমরার ভূমিকায়। সবিশেষ আমার শাশ্বত আহ্বান, স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিধৌত হোক নতুন প্রজন্মের বিবেক ও চেতনা। অনাগত প্রজন্মের লড়াই হোক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে, সব অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে দেশগড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর শপথ। জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু । জয় হোক দেশরতœ শেখ হাসিনার। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
×