ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১ জানুয়ারি ২০১৭

হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ ২০১৬ সাল। নতুন বছর, ২০১৭ শুরু। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পুরনো বছরের শেষদিনে এসে বড় ধরনের ধাক্কা খেল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারল। আর তাতে করে প্রায় আড়াই বছর পর ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো। তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারল। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৭ রানে হারের ও তৃতীয় ওয়ানডেতেও হারের তিক্ততা মিলল। হারের গোলক ধাঁধাতেই আটকা পড়ল। নতুন বছরটিও সেই হারের ক্ষত নিয়েই শুরু হলো। প্রথম দুই ওয়ানডেতে দুই শ’ রানের চেহারাই দেখেনি বাংলাদেশ দল। তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে তা দেখল। কিন্তু স্কোরবোর্ডে রান এত কম হলো যে, কুলিয়ে উঠতে পারল না। ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৩৬ রান করল বাংলাদেশ। ২ উইকেট হারিয়ে ৪১.২ ২৩৯ রান করে সহজ জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার প্রতিশোধ নিয়ে নিল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়াতেই এমন দশা হয়েছে। তামিম ও ইমরুল মিলে উদ্বোধনী জুটিতেই ১০২ রান করলেন। কী দুর্দান্ত ব্যাটিং। ২২ ওভারেই এমন রানে আশা দেখা হচ্ছিল। কিন্তু এমন সময়ে ইমরুল (৪৪) আউট হওয়ার পরই সব ‘ওলট-পালট’ হয়ে গেল। ৭৭ রানেই নেই ৭ উইকেট! সাব্বির, মাহমুদুল্লাহ, ম্যাচটিতে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করা তামিম, সাকিব, মোসাদ্দেক, তানভির আউট হয়ে গেলেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের হঠাৎ দুর্দশায় বাংলাদেশও বিপাকে পড়ে গেল। অষ্টম উইকেটে গিয়ে নুরুল হাসান সোহান ও মাশরাফি মিলে ৩৩ রানের জুটি না গড়লে তো দল দুই শ’ রানেও যেতে পারত না। দলের ২১২ রানের সময় মাশরাফি (১৪) আউট হন। এরপর তাসকিনকে নিয়ে সোহান (৪৪) এগিয়ে যান। ২৩৫ রানে গিয়ে আউট হন সোহান। শেষ পর্যন্ত আর ১ রান যোগ করতেই বাংলাদেশের ৫০ ওভার খেলা শেষ হয়। যখন নিউজিল্যান্ডের সামনে জিততে ২৩৭ রানের টার্গেট দাঁড় হয়, তখনই তো কিউইদের জয় দেখতে পাওয়া যায়। এরপরও শুরুতেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বিশ্রামে থাকা ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ যে লাথামকে সাজঘরে ফেরান, তাতে খানিক হলেও আশার আলো জাগে। কিন্তু ৬ রান করে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ায় গাপটিল মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর সেই আলো ধীরে ধীরে নিভে যেতে থাকে। শুরুতেই মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে ‘নতুন জীবন’ পাওয়া আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নেইল ব্রুম ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন মিলেই সব আশা হতাশায় পরিণত করেন। দুইজন মিলে ১৭৯ রানের জুটি গড়েন। যে জুটি দলকে ১৯৫ রানে নিয়ে যায়। জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। ৯৭ বলে ৯৭ রান করে মুস্তাফিজের বলেই শেষপর্যন্ত আউট হন ব্রুম। এরপর অপরাজিত ৯৫ রান করা উইলিয়ামসন ও অপরাজিত ২৮ রান করা নিশাম দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। নিউজিল্যান্ডের দুই উইকেটের পতন ঘটে। দুটিই শিকার করেন মুস্তাফিজ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাতেই হোয়াইটওয়াশ হয়ে গেল বাংলাদেশ। সিনিয়র ক্রিকেটারদের দায়িত্ব নিয়ে খেলা উচিত ছিল। অথচ তারাই কিনা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। ব্যর্থ হচ্ছেন। এমন ব্যর্থ হলে কি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ারও সম্ভাবনা থাকে! নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী দল। খুবই শক্তিশালী। উপমহাদেশের শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে হাবুডুবু খায়। তাই বলে নিউজিল্যান্ড অজেয় দল নয়। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা হয়ত সিরিজে হেরেছে। তবে সিরিজের সব ম্যাচ হারেনি। বাংলাদেশ দল তো একটি ম্যাচেও জিততে পারল না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারল না। প্রায় সাত বছর পর নিউজিল্যান্ডে খেলতে গিয়ে হাবুডুবু খেল। যেমনটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে দুটি সিরিজে হয়েছিল, তেমনটিই হলো। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৪ সালের আগস্টে যে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ, আড়াই বছর পর সেই হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ আবার মিলল। এবার নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
×