ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন লেখক বিশেষ অবদানের জন্য পেলেন পুরস্কার

তোয়াব খানসহ ৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ প্রদান

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১ জানুয়ারি ২০১৭

তোয়াব খানসহ ৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার সকাল থেকেই মুখর হয়ে ওঠে বাঙালী জাতিসত্তার প্রতীকী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ফেলো, জীবনসদস্য, সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে আনন্দমুখরতায় অনুষ্ঠিত হলো প্রতিষ্ঠানটির ঊনচল্লিশতম বার্ষিক সভা। এ সভা থেকে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক ও জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানসহ বিভিন্ন অঙ্গনে কীর্তিমান ৭ বিশিষ্টজনকে প্রদান করা হয় বাংলা একাডেমির এ বছরের সম্মানসূচক ফেলোশিপ। সেই সঙ্গে কবিতা, শিশুসাহিত্য ও কথাসাহিত্যের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিন লেখককে প্রদান করা হয় একাডেমি পরিচালিত তিনটি পুরস্কার। এছাড়া সভা থেকে ২০১৫-১৬ সালের একাডেমির বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০১৬-১৭ সালের বাজেট উপস্থাপন করা হয়। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তোয়াব খানকে ২০১৬ সালের ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। ফেলোশিপ প্রদানের আগে তার জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিকতার একেকটি মাইলফলক রচিত হয়েছে তোয়াব খানের নেতৃত্বে। সংবাদপত্রের পাতায় জীবননিষ্ঠ কাহিনী তুলে ধরে রাজনীতির অতিকথনের পাশাপাশি পাঠকদের কাছে উঠে এসেছে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তারই নেতৃত্বে। মানবিক আবেদনসম্পন্ন কাহিনীর মাধ্যমে মহোত্তম আদর্শকে মানুষের মনে গেঁথে দেয়ার জন্য তার প্রচেষ্টা আজ প্রতিটি পত্রিকা সাদরে গ্রহণ করেছে। ‘হার্ড নিউজের’ রক্ষণশীল ব্যূহ ভেদ করে তথাকথিত ‘সফট নিউজ’-ফিচার হিউম্যান স্টোরির মাধ্যমে জাতির সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তিনি। দেশের সাংবাদিকতার প্রবাদপ্রতিম এই ব্যক্তিত্বের হাতে ফেলোশিপ সম্মাননাপত্র ও স্মারক তুলে দেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আইন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ফেলোশিপ পেয়েছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য ফেলোশিপ পেয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন। মহান মুক্তিযুদ্ধের অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন বেগম মুশতারী শফী। শিক্ষায় অবদানের জন্য ফেলোশিপ পেয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। সঙ্গীতে অবদানের জন্য কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় এবং কৃষি উন্নয়নে অবদানের জন্য শাইখ সিরাজকে দেয়া হয়েছে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ। বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কবি আবুবকর সিদ্দিককে প্রদান করা বাংলা একাডেমি পরিচালিত মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার ২০১৬। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেনকে প্রদান করা হয়েছে কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৫। কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেনকে প্রদান করা হয় সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬। মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার এবং কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে এক লাখ টাকা এবং সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয় লেখকদের। পুরস্কার ও ফেলোশিপ প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক ও শুভেচ্ছার ডালি তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির পরিবর্তে প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একাডেমির উচিত নয় বইমেলার দায়িত্ব পালন করা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনার দায়িত্ব প্রকাশকদের ওপর ছেড়ে দিলে একাডেমি নিজের কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারবে। কারণ এ বইমেলা পরিচালনার কারণে সব মিলিয়ে তিন মাস একাডেমির নিজস্ব কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমির মেলা পরিচালনা বিষয়ে নানারকম সমালোচনাও হচ্ছে। তাই মেলা পরিচালনার বিষয়ে একাডেমির ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক জীবনে বাংলা একাডেমির যুক্ততা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একাডেমির কাছে মানুষের আকাক্সক্ষাও অনেক। আশা করি, মনন ও মেধাচর্চায় ভূমিকা রেখে একাডেমি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক মান উন্নতকরণে আরও সচেষ্ট হবে। সাধারণ সভায় সারাদেশ থেকে আসা বাংলা একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য এবং সদস্যসহ দুই সহস্রাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। সভায় ২৬ ডিসেম্বর-২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারাদেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করেন বার্ষিক সাধারণ সভার সভাপতি এবং একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ২০১৫-১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় এই একাডেমি বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিনাশী ধারা ও মানবিক চৈতন্যে ভাস্বর, ইহজাগতিক বোধে দীপ্ত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে গঠিত বাঙালী জাতিসত্তার এক অনন্য প্রতীকী প্রতিষ্ঠান। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বাঙালী মনীষার নানা মানবমুখী সমন্বয়বাদী উৎসের অনুসন্ধান, আবিষ্কার ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে আমাদের এ মহান ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহনকারী বিদ্বৎসভাটি বিগত ষাট বছরে বিশ্বের এক বিশিষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিকতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি বিপুল অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং যুগান্তকারী গবেষণামূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে একাডেমি এক নতুন যুগে উন্নীত হয়েছে। চলমান আরও বেশকিছু কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতের বাংলা একাডেমি আমাদের উত্তরপ্রজন্মের গর্ব ও অহংকারের জাতীয় সাংস্কৃতিক ঠিকানায় রূপ নেবে। সকালে সাংস্কৃতিক সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সভা শুরু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক মুর্শিদুদ্দিন আহম্মদ। প্রয়াত গুণীদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ২০১৫-১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ২০১৬-১৭ সালের বাজেট উপস্থাপন করেন। সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। একাডেমির সদস্যবৃন্দ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। একাডেমির মহাপরিচালক সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং উত্থাপিত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বক্তব্য প্রদান করেন। সাধারণ সভার কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন।
×