ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ নিরাপত্তা

থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইংরেজী নববর্ষ ২০১৭ বরণ উৎসবকে ঘিরে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা থাকছে রাজধানী ঘিরে। থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি বা পটকা ফোটানো, উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নাচ, গানসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মূলত নিরাপত্তার কারণেই এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোন ধরনের নাশকতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। চলতি বছর বেশ কয়েকটি জঙ্গী হামলার কারণে এবার অন্যান্য যেকোন বছরের তুলনায় নিরাপত্তা থাকছে কঠোর। কোন প্রকার নাশকতার আশঙ্কা নেই বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে বলা হচ্ছে। এমনকি কোন প্রকার হুমকিও নেই। দেশবাসী নির্বিঘেœ ইংরেজী নববর্ষ বরণ উৎসব পালন করতে পারবে। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সেইসঙ্গে বাড়তি চেকপোস্ট বসিয়ে চলবে তল্লাশি। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরে পুলিশ মহাপরির্দশক এ কে এম শহীদুল হক জঙ্গীবাদ সংক্রান্ত বিশেষ অনুষ্ঠান করেন। অনুষ্ঠানে জঙ্গী বিরোধী সফল অভিযানের জন্য পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি (লফুল ইন্টারসেপশন সেল), ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, র‌্যাব, ডিএমপির উত্তরা ও লালবাগ ডিভিশন, গাজীপুর ও বগুড়া পুলিশ সদস্যদের পুরস্কৃত করা হয়। পুলিশ প্রধান বলেন, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশকে জঙ্গীমুক্ত করতে করণীয়, সবই করা হবে। দেশকে জঙ্গীদের আস্তানা গড়ার কোন সুযোগই দেয়া হবে না। জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার আহ্বানও জানান তিনি। থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে পুলিশকে বাড়তি সতকর্তা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেন তিনি। এদিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রাজধানীতে থার্টিফার্স্ট নাইটে নিরাপত্তার জন্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে দশ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। কোন ধরনের নাশকতার সুযোগ নেই। যেকোন ধরনের নাশকতা মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। পুরো রাজধানী নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। জঙ্গী দমনে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এর পাশাপাশি দেশবাসীকে তৎপর ও সচেতন থাকতে হবে। থার্টিফার্স্ট নাইটে কোথাও কোন আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নাচ, গান বা কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের থার্টিফার্স্ট নাইটে রাত ৮টার মধ্যে নিজ এলাকায় ফেরার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর বহিরাগত ব্যক্তি ও যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় দেয়ার মাধ্যমে নীলক্ষেত ও শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাজধানীর কোন বার খোলা রাখা যাবে না। রাত ৮টা থেকে পরদিন ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর আবাসিক হোটেল, রেস্তরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসব স্থলে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্রও না আনার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হলো। রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় ও প্রকাশ্যে কোন ধরনের জমায়েত, সমাবেশ বা উৎসব করা যাবে না। বাড়িতে বা ছাদে পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে থার্টিফার্স্ট উদযাপন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম, রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার, ট্রাফিক উত্তর ও দক্ষিণের ডিসিসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বিদ্যুত চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব হোটেল ও ক্লাবে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুযোগ আছে, সেসব হোটেল সর্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হবে। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে এবার বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, ব্যাগ স্ক্যানার বসিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা যেদিক দিয়ে যাবেন, সে এলাকার পুরো ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড হবে। যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে দেখা যাবে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ ও র‌্যাবের বাড়তি সদস্য টহল দেবে। প্রস্তুত থাকবে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, এপিসি (আর্মার পার্সোনাল ক্যারিয়ার), জলকামান, ওয়াচ টাওয়ার, মোবাইল কমান্ড সেন্টার, স্টিল ও ভিডিও ক্যামেরা, যানবাহন স্ক্যানার, র‌্যাবের হেলিকপ্টার, ডগস্কোয়াড ও ভ্রাম্যমাণ আদালত।
×