ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদ চলছে দুই নারী জঙ্গীর

হাতে তৈরি গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট প্রস্তুতকারী কারা?

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

হাতে তৈরি গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট প্রস্তুতকারী কারা?

শংকর কুমার দে ॥ ‘লেডি সুইসাইডাল স্কোয়াড’ গঠন করে আত্মঘাতী হামলার ছক কষেছে নব্য জেএমবি। তৈরি করেছে হ্যান্ডমেড গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট। আত্মঘাতী হামলার জন্য এত নিখুঁতভাবে গ্রেনেড ও ভেস্ট প্রস্তুতকারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী কারা তাদের সম্পর্কে জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আশকোনার সূর্য ভিলা আস্তানা থেকে আত্মসমর্পণের পর আটক দুই নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষা মণিকে। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে শীর্ষ জঙ্গী মুসা। গোয়েন্দারা একারণেই এই দুই নারী জঙ্গীর কাছে মুসার খোঁজ পেতে চাইছে। সে কোন আস্তানায় আত্মগোপন করে আছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, এসব গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট কারা তৈরি করেছে, কারা সেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী- তা জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব জঙ্গী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে, যার খোঁজখবর একমাত্র মাঈনুল ওরফে মুসার জানার কথা। এজন্য মুসা কোন জঙ্গী আস্তানায় আত্মগোপন করে আছে, তা চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। আশকোনায় সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণে নিহত নারী জঙ্গী শাকিরার পরনে সুইসাইডাল ভেস্ট দেখতে অনেকটা ফতুয়া বা হাতা কাটা গেঞ্জির মতো এক ধরনের পোশাক, যা জঙ্গীরা আত্মঘাতী হামলা চালাতে ব্যবহার করে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোন নারী জঙ্গী হুমকি দিয়ে সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটানোর ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও এর আগে কুমিল্লাসহ আরও কয়েকটি জঙ্গী আস্তানা থেকে কয়েকটি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, এ অস্তানা থেকে পাওয়া প্রতিটি সুইসাইডাল ভেস্টে পাঁচটি করে হ্যান্ডমেড গ্রেনেড রাখা হয়েছিল। সব গ্রেনেডের একটি ‘কি পয়েন্ট’ তৈরি করা হয়, যেন পিনটি খুললেই পাঁচটি গ্রেনেড একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। এমন একটি সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরিত করেছে জঙ্গী সুমনের স্ত্রী শাকিরা। আরেকটি সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলার কাছে। আত্মসমর্পণের আগে সে ওই সুইসাইডাল ভেস্টটি খুলে রাখে। এছাড়া আরও দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট আশকোনার সূর্যভিলায় দেখা যায়। এগুলো দিয়ে বড় হামলার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সুইসাইডাল ভেস্ট আত্মঘাতী হামলার ভয়ঙ্কর অস্ত্র বলে জানান এই কর্মকর্তা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, তৃষা মণি ও জেবুন্নাহার শীলাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আশকোনার আস্তানায় মুসার স্ত্রী তৃষা মণি সন্তান সম্ভবা থাকলেও সেখানে নিয়মিত থাকত না মুসা। অন্য জঙ্গীদের স্ত্রীদের নিজের বাসায় রেখে অন্য একটি আস্তানায় থাকত সে। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার সে আশকোনার বাসায় আসত। সেই হিসেবে গত শুক্রবার তার আশকোনার আস্তানায় আসার কথা থাকলেও ‘অজ্ঞাত কারনে’ সে আসেনি। মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে চল্লিশ বছর বয়সী দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিও আসত। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, মুসা অন্য কোন আস্তানাতে আত্মগোপন করে আছে। গোপন সেই আস্তানায়ও একইভাবে লেডি সুইসাইডাল স্কোয়াড বিস্ফোরকদ্রব্য দিয়ে হ্যান্ডগ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট তৈরি করছে। এ বিষয়েও দুই নারী জঙ্গী শীলা ও তৃষাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
×