ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচিত বাঙালী নারী ক্রীড়াবিদ মার্গারিটা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

আলোচিত বাঙালী নারী ক্রীড়াবিদ মার্গারিটা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছিলেন। রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের অলএ্যারাউন্ড ইভেন্টে ফেবারিট অনেক তারকাকে পেছনে ফেলে স্বর্ণপদক জয় করেন মার্গারিটা মামুন। বাংলাদেশী বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন আর রাশিয়ান মা এ্যানার জন্য গর্ব বয়ে আনেন। তেমনি বাংলাদেশের জন্যও সেটা ছিল গৌরবের। কারণ এত বড় একটি মর্যাদার আসরে আগে কোন বাঙালী মেয়ে সাফল্যই পাননি। এ কারণে সারাবিশ্বেই তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন মার্গারিটা। এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত মহিলা বাঙালী ক্রীড়াবিদ তিনিই। রাশিয়ায় বেড়ে ওঠা মার্গারিটা পাঁচ বছর আগেই নিজেকে চিনিয়েছিলেন। তখন ১৬ বছরের কিশোরী এ সুন্দরী ছন্দোবদ্ধ জিমন্যাস্টিকসে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। ২০১১ সালের রাশিয়ান জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসের অলএ্যারাউন্ড ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১২ ও ২০১৩ সালেও সেই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে গ্রাঁ প্রিঁ জয় করা রিটা এ বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসের রৌপ্যপদক লাভ করেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অবশ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসের স্বর্ণপদক জিতেছিলেন এই ইভেন্টের। গত বছর ইউরোপিয়ান গেমসের রৌপ্যপদকও জিতেছিলেন তিনি। এবার অলিম্পিকে তাই রিটাকে নিয়ে ছিল রাশিয়ার বিশেষ প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা তিনি পূরণ করেছেন। যদিও তার চেয়ে ফেবারিট ছিলেন অন্য প্রতিযোগীরা অথচ ২০ পয়েন্টের বিচার পদ্ধতিতে সর্বাধিক ৭৭.১৫০ পয়েন্ট নিয়ে তিনিই রেকর্ডধারী। সেটা রিও অলিম্পিকেও ধরে রাখেন। অলএ্যারাউন্ড ইভেন্টে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড পয়েন্ট অর্জন করেন তিনি। ৭৬.৪৮৩ পয়েন্ট নিয়ে স্বর্ণপদক জিতে তাক লাগিয়ে দেন। এর আগে পয়েন্টের রেকর্ড ছিল এভগেনিয়া কানায়েভার। মস্কোয় জন্ম নিয়ে সেখানেই বড় হয়েছেন। তবু বাংলাদেশের জন্য গর্ব রিটা। কারণ তার বাবা মামুন বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরের কাশিপুরের বাসিন্দা। রিটা জিমন্যাস্টিকসে প্রতিভাময়ী হয়ে উঠেছেন মূলত মায়ের কারণে। মা এ্যানা নিজেও ছিলেন রিদমিক জিমন্যাস্ট। রিটা একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার যৌথভাবে নাগরিক। তবে রাশিয়া যৌথ নাগরিকত্ব অনুমোদন করায় রিটা হয়ে গেছেন রাশিয়ার পতাকাতলে থাকা জিমন্যাস্ট। ক্যারিয়ারের সেরা ও সবচেয়ে ঈর্ষণীয় সাফল্যটা পেয়েছেন রিটা অলিম্পিকে। কিন্তু এর মাত্র ৬ দিন পরই তার বাবা দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০১৬ সালে মৌসুমটা শুরু করেছিলেন মস্কো গ্রাঁ প্রিঁ আসরে চতুর্থ স্থান দখল করে। মার্চে তিনি সেøাভেনিয়ার এমটিএম টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ৭৫.৯৫০ পয়েন্ট অর্জন করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সঙ্গে শারীরিক কলাকৌশল দেখানোর প্রতিযোগিতায় তিনি হুপ, ক্লাবস ও রিবনে স্বর্ণ এবং বল ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জয় করেন। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম থিয়াইস গ্রাঁ প্রিঁ ইভেন্টে সতীর্থ আলেক্সান্দ্রা সোলদাতোভাকে পেছনে ফেলে স্বর্ণ জয় করেন তিনি। তিনটি ইভেন্টের ফাইনালে ওঠেন এবং জয় করেন হুপ, ক্লাবসের স্বর্ণ ও বলে পান রৌপ্য। এপ্রিলে পেসারো বিশ্বকাপের অলএ্যারাউন্ডে সব মিলিয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৭৫.৯০০ পয়েন্ট নিয়ে তিনি রৌপ্য জেতেন। সতীর্থ ইয়ানা কুদ্রিয়াভতসেভার কাছে হেরে যান তিনি। এ বছর সোলদাতোভার কাছে হেরে রাশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসের স্বর্ণপদক হাতছাড়া হয় ২১ বছর বয়সী রিটার। তবে মে মাসে ব্যক্তিগত সেরার রেকর্ড পেছনে ফেলে ৭৭.১০০ পয়েন্ট নিয়ে ব্রনো গ্রাঁ প্রিঁ আসরে অলএ্যারাউন্ড স্বর্ণ জয় করেন। মিনস্ক বিশ্বকাপেও স্বর্ণপদক গলায় পরেন তিনি। গুয়াদালাজারা বিশ্বকাপে জুনেও ওই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটান রিটা ৭৬.৫৫০ পয়েন্ট নিয়ে। জুলাইয়ে বাকু বিশ্বকাপেও সোনা জিতে বছরের সব বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখান। এবার কুদ্রিয়াভতসেভাকে হারিয়ে দেন তিনি। এখানেই ৭৭.১৫০ পয়েন্ট নিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এসব সাফল্যের কারণেই রিটা শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকে নিজের সাফল্যটা পেয়েছেন। অলিম্পিকের প্রাথমিক সেশনে সর্বাধিক পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে ছিলেন রিটা। আর তখনই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে তার। কানায়েভা ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকে যে রেকর্ড গড়েছিলেন সেটা ভেঙ্গে ফেলেন এই অনুপ্রেরণাতেই। আর এখানেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কুদ্রিয়াভতসেভাকে হারিয়ে দিয়ে সর্বোচ্চ সাফল্যটা পান রিটা।
×