ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণে অনিয়ম

যারা টাকা দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বেসিক ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

যারা টাকা দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বেসিক ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবশেষে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঋণ কেলেঙ্কারিতে আক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। বিভিন্ন সময়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে যারা ফেরত দেয়নি বা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ব্যাংকটি। সম্প্রতি রিকোভারি সংক্রান্ত ব্যাংকটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বেসিক ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগে ২০১৪ সালের মে মাসে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়ার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর একই বছরের জুলাইয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ধারা ৪৬(৬) অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশের আলোকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে যেসব গ্রাহক বে-নামে, সম্পদের অতিমূল্যায়ন দেখিয়ে, ভুয়া দলিলাদি দিয়ে ঋণ নিয়েছে তাদের অনেকেরই সঠিক নাম-পরিচয় জানত না বেসিক ব্যাংক। পুনর্গঠিত পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল প্রথমে এসব গ্রাহককে খুঁজে বের করা। যাদের পাওয়া যাবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা এবং তারা যে ঋণ নিয়েছে এ বিষয়ে তাদের স্বীকারোক্তি নেয়া। পরবর্তীতে আলোচনা করে তাদের ঋণ ফেরতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ সময়টাতে অনেক গ্রাহক আবার নিজে থেকে এসেও টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে বলে বেসিক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। ব্যাংকও টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে যত রকমের শিথিলতা গ্রাহককে দেয়া সম্ভব তার পুরোটাই তাদের দিয়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে যাদের খোঁজ মিলেছে তাদের মধ্যে যারা খেলাপী এবং যাদের খোঁজ এখনও মেলেনি তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো মামলা করবে। সম্প্রতি এ ধরনের একটি নির্দেশনা ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসিক ব্যাংকের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যাংকটির সর্বশেষ রিকোভারি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা আর গ্রাহক খুঁজে বেড়াব না। এখন পর্যন্ত যাদের পেয়েছি তো, যারা নিজে থেকে এসেছে এ পর্যন্তই। আর সুযোগ দেয়া হবে না। এখন যারা টাকা নিয়ে গোপনে রয়েছে বা টাকা ফেরত দিতে চেয়েও সুযোগ নিয়েছে কিন্তু টাকা দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রত্যেকটি শাখা তাদের সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে। এ নির্দেশনা আমাদের দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, আমরা মূলত গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছি। এ চেষ্টায় সাড়ে ৮শ’ থেকে ৯শ’ কোটি টাকার মতো আদায় করতে পেরেছি। এখনও অনেকে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা টাকা দিতে চায়। তবে একেবারেই যারা টাকা দিতে চায়নি, তাদের বিরুদ্ধে মামলাতে যেতেই হবে। এজন্যই ব্যাংক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পরও অনিয়ম পিছু ছাড়েনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে। নিয়মের বাইরে গিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন শহরের কয়েকজন গ্রাহককে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। শ্রেণীকৃত ঋণ অশ্রেণীকৃত হিসেবে সিএল বিবরণীতে রিপোর্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৫ সাল থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ শুরু করার শর্ত দিলেও তা পরিপালন করেনি ব্যাংকটি। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে মূলধন ঘাটতি কম দেখাতে ব্যাংকটি সংরক্ষিত মূলধনের বেশি রিপোর্ট করেছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। বেসিক ব্যাংকের ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক আর্থিক পরিস্থিতির ওপর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যা ডায়াগনস্টিক রিভিউ রিপোর্ট (ডিআরআর) নামে পরিচিত। ব্যাংকটির ২০১৫ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট, ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বেসিক ব্যাংকের নানা অনিয়ম, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও বিভিন্ন দুর্বলতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন শেষে বেসিক ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। সে সময় ব্যাংকটির খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল বিতরণ করা মোট ঋণের ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে অর্থাৎ তিন মাসে ব্যাংকটির খেলাপী ঋণ বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পরই সর্বোচ্চ খেলাপী ঋণ এখন বেসিক ব্যাংকের।
×